এম আনোয়ার হোসেন, মিরসরাই (চট্টগ্রাম)
খসে পড়ছে পলেস্তারা, বিমে ধরেছে বড় বড় ফাটল বর্ষায় ছাদ বেয়ে পানি পড়াসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত মিরসরাই উপজেলার হিঙ্গুলী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। ৩৭ বছরের পুরনো ভবনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। যে কোনো সময় ধসে পড়তে পারে এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির ছাদ। তবে কবে নাগাদ এটি সংস্কার করা হতে পারে তাও জানাতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, অনেকটাই জোড়াতালি দিয়ে চলছে ১৯৮৪ সালের ২২ জুলাই স্থাপিত মিরসরাই উপজেলার ২ নম্বর হিঙ্গুলী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। বর্তমানে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠায় ইতিপূর্বে সংস্কারও করা হয়। এখানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন কর্মরত চিকিৎসকরা। দীর্ঘ ৩৭ বছর পুরনো এই ভবনের প্রতিটি কক্ষে বর্ষা মৌসুমে ছাদ বেয়ে পানি পড়ে, পানি পড়ার কারণে নষ্ট হয়ে গেছে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির আসবাবপত্রসহ অন্যান্য জিনিসপত্র। বর্ষায় এখানে নিয়োজিত চিকিৎসকরা চিকিৎসা সেবা প্রদান ও রোগীদের চিকিৎসা সেবা নেওয়াটা অনেকটা অসম্ভব হয়ে উঠে। স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি ঘেঁষে ফেলা হয় পার্শ্ববর্তী বাসা-বাড়ির ময়লা আবর্জনা, যাতে করে দুর্ভোগ পোহাতে হয় সেবাদাতা ও গ্রহীতাদের। নেই পানি সরবরাহ ব্যবস্থা, ব্যবহারের পুরোপুরি অনুপযোগী টয়লেট, খসে খসে পড়ছে ছাদের পলেস্তারা, বিমে ধরেছে বড় বড় ফাটল। যে কোনো মুহূর্তে ধ্বসে পড়তে পারে ছাদ।
এখানে সকাল সাড়ে ৮ টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩ টা পর্যন্ত সেবা প্রদান করা হয় রোগীদের। ৫ টি পদের মধ্যে ২ টি পদ শূন্য রয়েছে। শূন্য পদগুলো হলো ১ জন ফার্মাসিস্ট ও ১ জন এমএলএসএস। উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার নাজমুন্নাহার, পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা তমা দেবী ও ১ জন আয়া দিয়েই চলছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি। এই স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে মাসে প্রায় ৬শ জন সেবা গ্রহণ করে থাকেন। বিশেষ করে পরিবার পরিকল্পনা সেবা, মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা, বয়ঃসন্ধি কালীন সেবা, পুষ্টি সেবা, গর্ভবতী ও সাধারণ রোগী সেবা, প্রসব ও প্রসবোত্তর সেবা, স্বাস্থ্য শিক্ষামূলক সেবা দেওয়া হয়ে থাকে এখানে। এছাড়া ২৫ ধরণের ওষুধ বিনামূল্যে প্রদান করা হয় রোগীদের।
একাধিক রোগীর সাথে কথা বলে জানা যায়, করোনা মহামারীর মধ্যে যেখানে চিকিৎসকরা চেম্বার করতে ভয় পেয়েছেন ঠিক তখনই জীবন বাজি রেখে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান একদিনের জন্যও বন্ধ রাখেননি হিঙ্গুলী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার নাজমুন্নাহার। সেজন্য রোগীদের কাছে তিনি আস্থার ঠিকানা হয়ে উঠেছেন। এছাড়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নির্দিষ্ট সময় দায়িত্ব পালনের পরবর্তী সময়গুলোতে মুঠোফোনে ও নিজ বাসায় বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। যা ইতিমধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মস্তাননগর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরও নজর কেড়েছে।
হিঙ্গুলী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার নাজমুন্নাহার বলেন, সব সময় ভয়ে ভয়ে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে থাকি। এমনিতেই ছাদের পলেস্তারা খসে খসে পড়ে শরীরে, যে কোনো মুহূর্তে ধ্বসে পড়তে পারে ছাদও। তাই স্বাস্থ্য কেন্দ্র ভবনটি দ্রুত সংস্কার করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার বিষয়টি অবহিত করে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, নানা সমস্যায় জর্জরিত এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে আমি যখন থেকে দায়িত্ব পালন করে আসছি তখন থেকে আজ পর্যন্ত কখনো দায়িত্বে অবহেলা করিনি। নাগরিকদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার নির্দেশিত বিভিন্ন সেবাসমূহ দিয়ে যাচ্ছি।
মিরসরাই উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা মেডিকেল অফিসার ডা. নাজমুল হোসেন জানান, হিঙ্গুলী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটির ছাদ যে কোনো সময় ধসে পড়তে পারে। দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি ইতিপূর্বে সংস্কারও করা হয়েছে। আমি ২০১৬ সালে এই উপজেলায় চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে বারবার ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি সংস্কার করার জন্য হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে চিঠি পাঠিয়েছি। আশা করছি শীঘ্রই ভবনটি সংস্কারে বরাদ্দ পাবো।
তিনি আরও জানান, ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার নাজমুন্নাহার করোনার শুরু থেকে রোগীদের সেবা প্রদানে অনন্য ভূমিকা পালন করে আসছেন যা আমাদের তদারকিতে প্রমাণ মিলেছে। একদিকে করোনার ঝুঁকি অন্যদিকে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের ছাদের নিচে বসে তিনি চিকিৎসা সেবা প্রদান করে আসেছেন।
ওডি/এমএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড