• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

লকডাউনের ফাঁদে বাল্যবিয়ের শিকার কন্যা শিশুরা

  হুমায়ুন কবির সূর্য, কুড়িগ্রাম

১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৫:২৮
রংপুর
ক্লাস করছেন শিক্ষার্থীরা (ছবি : দৈনিক অধিকার)

কুড়িগ্রামে লকডাউনে ১৮ মাসে মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল ও কলেজগুলো বন্ধ থাকায় শিশুশ্রম, দারিদ্রতা, নদী ভাঙন ও স্থানান্তরিত হওয়ার কারণে প্রায় ৫০ হাজার শিশু ঝড়ে পরেছে। ঝড়ে পরা শিশুদের একটি বড় অংশ শিকার হয়েছে বাল্যবিয়ের। রবিবার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হলেও কন্যা শিশুর অনুপস্থিতির কারণ খুঁজতে গিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানান।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শামসুল আলম জানান, আমরা সদরের ৫টি স্কুল পর্যবেক্ষণ করেছি এই স্কুলগুলোতে ৬৩ জন মেয়ে শিশু বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং কর্মকর্তাদের প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায় শতকরা ১৩ ভাগ শিক্ষার্থী ঝড়ে পরেছে। ঝড়ে পরা কন্যা শিশুদের অধিকাংশই বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। এ হিসাবে জেলায় গত দেড় বছরে ঝড়ে পরা শিশু শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। রবিবার উলিপুর ও চিলমারীতে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঘুরে দেখেছি। উপস্থিতির হার আশিভাগের মত। অন্যান্য স্কুলগুলোতে ঝড়ে পড়া ও বাল্য বিয়ের শিকার মেয়েদের প্রকৃত তথ্য নিতে উপজেলাগুলোতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আশা করছি দুই একদিনের মধ্যে সার্বিক চিত্রটা বোঝা যাবে।

রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে দেখা যায় শতকারা ৭৫ থেকে ৮০ ভাগ শিশু স্কুলে এসেছে। ২০ থেকে ২৫ ভাগ শিশু প্রতিষ্ঠানে আসেনি। এদের মধ্যে অর্থনৈতিক কারণে ঝড়ে পরার সংখ্যা বেশি। এছাড়াও বাল্যবিয়ের বিষয়টিও গুরুত্ব পাচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে কুড়িগ্রাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০ শিক্ষার্থী, ঘোগাদহ মালেকা বেগম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৬ জন, কাঁঠালবাড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৪ জন এবং বারউল্লাহ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ জনসহ ৫টি বিদ্যালয়ে মোট ৯১জন কন্যা শিশু বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। কুড়িগ্রাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শুধু ১০ম শ্রেণিতে ১২ জনসহ প্রায় ৩০ জনের বাল্যবিয়ে হয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান।

সদর উপজেলার যাত্রাপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, এই বিদ্যালয়ে লক ডাউনের আগে ৭ম শ্রেণিতে উপস্থিতি ছিল ৫০জন রবিবার উপস্থিত হয়েছে ৪৩ জন, ৯ম শ্রেণিতে আগে ছিল ৩১জন এখন ২২ জন, ১০ শ্রেণিতে আগে ২৫ জন এখন ১৭জন, এসএসসিতে আগে ২৪ জন এখন ১৯জন।

এসএসসি পরীক্ষার্থী জান্নাতুন জানান, তার ক্লাসের ৫ জন বন্ধু বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। ১০ম শ্রেণির সোহানা জানান, তার ২ জন বান্ধবী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে।

এসএসসি পরীক্ষার্থী আইরিন জানান, লকডাউনে আমরা পরিবারের কাছে যেন বোঝা হয়ে ছিলাম। কোথাও বাইরে যেতে দেওয়া হতো না। প্রাইভেট পড়াও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অনেক বান্ধবীকে তাদের বাবা-মা বোঝা মনে করে বিয়ে দিয়েছে। তারা পড়াশুনা করতে চেয়েছিল কিন্তু পরিস্থিতির শিকার হয়েছে তারা।

এই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মান্নান জানান, আমরা এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ করলে জানতে পারবো কতজন শিশু ঝরে পরেছে। এর কারণগুলোও আমরা খুঁজে বের করবো। যাতে পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা কোন সমস্যায় পরে না যায়।

যাত্রাপুর চাকেন্দা খানপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় এখানেও একই চিত্র। ৭ম থেকে এসএসসি পর্যন্ত প্রায় ৮ জনের বিয়ে হয়েছে বলে শিক্ষার্থী আমিনা, সালমা ও নাজমিন জানান।

আরও পড়ুন : খুলনায় করোনায় চিকিৎসকের মৃত্যু

এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রেজাউল করিম জানান, বাল্যবিয়ের তথ্য এখনো আমরা পাইনি। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আসুক তাদের সাথে আলোচনা করে জানানো যাবে।

ওডি/এফই

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড