ফরিদপুর প্রতিনিধি
করোনা ভাইরাসের ফলে দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার পর শিক্ষার্থীদের পদচারণায় আবার মুখরিত ফরিদপুরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এ জন্য সাজিয়ে তোলা হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের সারিবদ্ধভাবে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। আবার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধুলা-ময়লায় জরাজীর্ণ ক্লাসেই বসতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। এ নিয়ে তাদের মাঝে ক্ষোভও লক্ষ্য করা গেছে।
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় কক্ষগুলোর জরাজীর্ণ দশা। টেবিল ও বেঞ্চেও ছিল ধুলা-ময়লার মোটা আস্তর। এ নিয়ে অনেকে ক্ষুব্ধ, বিব্রত। একজন অভিভাবক জানালেন, সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিভাবকদের বসার জন্য যে ঘরটি রয়েছে তাতে ধুলা-ময়লার আস্তরে একেবারেই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তবে স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিতে বদ্ধপরিকর। ছাত্রছাত্রীরা নিয়মিত আসতে থাকলে কক্ষগুলো গুমোট ও জীর্ণ দশা কেটে যাবে।
ফরিদপুর জেলায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে এক হাজার দুইশ ১৯টি। এর সবকটিতেই ক্লাস চালুর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা শিক্ষা বিভাগ। বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা শিক্ষার্থীদের মুখে বাধ্যতামুলকভাবে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করেই স্কুলে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছেন। তাদের জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সাবান দিয়ে হাত ধোয়ারও ব্যবস্থা নেন। অবশ্য স্কুল খোলার প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল তুলনামুলক কম। তবে অবস্থার অবনতি না হলে যারা আসেনি তারাও উৎসাহিত হবে।
ফরিদপুরের সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে দেখা গেছে, একজন কর্মী ইনফ্রারেড থার্মোমটার দিয়ে বাড়ি থেকে স্কুলে আসা সকল ছাত্রীর শরীরের তাপমাত্রা মেপে তবেই প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছেন। তাদের মুখে ছিলো মাস্ক। ছাত্রীরা জানালো, এতদিন স্কুল বন্ধ থাকায় একঘেয়েমি লাগছিল। স্কুলে এসে বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে দেখা হচ্ছে খুবই ভাল লাগছে। যদিও এসাইনমেন্ট দিয়েছি, কিন্তু স্কুলশিক্ষকদের কাছে থেকে যেভাবে পাঠ নিতে পারতাম সেটা তো পেতাম না। এ জন্য অনেকটা পিছিয়ে গিয়েছি।
তারা জানান, এভাবে বিধিনিষেধ মেনেই স্কুল করতে হবে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় তাদের পড়াশুনার অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। স্কুলে আবার আসতে পারায় খুবই খুশি লাগছে। মনে হচ্ছে, সকলের সাথে আবার পুনর্মিলনী হলো।
শহরের গোয়ালচামটে সারদা সুন্দরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, শ্রেণিকক্ষে প্রতি বেঞ্চে দু’জন করে ছাত্রীকে বসার অনুমতি দেয়া হয়েছে সামজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য। বিদ্যালয়ের একটি ফটক দিয়ে তাদের প্রবেশ এবং আরেকটি গেট দিয়ে বের হওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। একটি কক্ষকে আইসোলেশন কক্ষ হিসেবে রাখা হয়েছে। সকলের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়েছে। আমরা তাদের হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখারও পরামর্শ দিয়েছি।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিষ্ণু পদ ঘোষাল জানান, ফরিদপুরের নয়টি উপজেলার ২৫১ স্কুল ও ৮০টি মাদরাসা রয়েছে। সবকটি স্কুলে ক্লাস চালুর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, নয়টি উপজেলার আটশো ৮৮টি প্রাইমারি স্কুল রয়েছে। এর সবকটিতেই ক্লাস চালু করতে বলা হয়েছে।
এদিকে স্কুল খুলে দেয়ার পর শিক্ষার্থীদের মাঝে ভিন্ন দৃশ্যও দেখা গেছে। জেলার সালথা উপজেলায় অনেক শিক্ষার্থীর হাতে দেখা গেছে স্মার্টফোন। তারা স্কুলে প্রবেশের পর বন্ধুদের সাথে সেলফি তুলছে। সালথা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ হাসিব সরকার এ ব্যাপারে বলেন, যেহেতু আমরাই শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোন ব্যবহার করে অনলাইনে ক্লাস করতে বলেছিলাম। তাই তাদের হাতে এসব স্মার্টফোন চলে এসেছে। তবে শিক্ষকদের নির্দেশনা দেওয়া হবে যাতে ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলে মোবাইল ব্যবহার না করে।
আরও পড়ুন : ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে অর্থ আত্মসাৎ
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন পর এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ায় সকলকেই কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ওডি/এএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড