মাহফুজ আলম প্রিন্স, রংপুর
আসমা বেগম থাকেন রংপুরের পীরগাছা পারুল ইউনিয়নের সেছাকান্দি গ্রামে। বয়স একশো ছুঁই ছুঁই। এক সময় বাড়ি বাড়ি গিয়ে সহি কোরআন শিক্ষা দিতেন। বয়সের ভারে এখন সেটাও বন্ধ। সংসার চালানোর খরচ যোগানোর কোনও পথ নেই। ব্যাংকে নিয়মিত বয়স্ক ভাতার টাকা তুলতেন তিনি। কিন্তু বছর দেড়এক থেকে মোবাইল অ্যাকাউন্ট খোলার পর থেকে আর টাকা পান না তিনি। তার টাকা যায় খুলনার এক নম্বরে বললেন বৃদ্ধার নাতি রিপন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, রংপুরে বিধবা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীর মাসিক ভাতার প্রায় কোটি টাকারও বেশি ভুয়া মোবাইল নম্বরের অ্যাকাউন্টে পাঠানোর ফলে গায়েব হয়ে গেছে। এটা ভুল, না কি কৌশলে হাতিয়ে নিয়েছে সংঘবদ্ধ চক্র তার সঠিক ব্যাখা নেই কারও কাছে। সমাজসেবা কার্যালয়ে বার বার অভিযোগ করেও মিলেনি কোনও সমাধান।
সরকার যেখানে বয়স্ক, বিধবা এবং প্রতিবন্ধীদের স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করছেন, ঠিক তখনি রংপুরের বিভিন্ন ইউনিয়নে অসহায় এই মানুষদের টাকা যাচ্ছে কোথায় নিজেও জানেন না ভাতাভোগীরা।
পীরগাছার পারুল ইউনিয়নের বাসিন্দা আফজাল হোসেন দৈনিক অধিকারকে বলেন, 'বাবা হামরা প্রথম বার টাকা পাইছি আর কোনও টাকা মোর আইসে নাই বাহে। হামরা এইটার বিচার চাই'।
একই গ্রামের আছিয়া বেওয়া জানান, তিনি ব্যাংক থেকে বেশ কয়েকবার ভাতা পেয়েছে কিন্তু মোবাইল নম্বর নেওয়ার পর থেকে আর ভাতা পাননি। এই গ্রামে প্রায় ৭২ জন ভাতা ভোগীর একই অবস্থা। তাদের অভিযোগ বই আছে ভাতা নাই দেখিয়াও দেখার কেউ নাই।
বার বার উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়েও পাননি কোনও সমাধান। অফিসেও থাকেন না অফিসার দিনের বেশিভাগ সময়ে বললেন ভাতাভোগীর স্বজনরা। উপজেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তর পীরগাছা গেলে দেখা যায়, সমাজ সেবা অফিসার এনামুল হক নেই। পরে তার সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, বন্ধুর বিয়ে খেতে গাইবান্ধায় গিয়েছেন। এ ব্যাপারে রবিবার অফিসে এসে কথা বলবে।
প্রতিবন্ধীর এই মাসিক ভাতার প্রায় কোটি টাকারও বেশি ভুয়া মোবাইল নম্বর অ্যাকাউন্টে পাঠানোর ফলে গায়েব হয়ে গেছে বললেন পারুল ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান।
তিনি জানান, এই ইউনিয়নে প্রায় ৫ থেকে ৬শ জন অসহায় মানুষ দীর্ঘদিন যাবত এই ভাতা থেকে দূরে। এ ব্যাপারে কেউই পদক্ষেপ নেয় না। আমার জানা মতে রংপুর জেলায় প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার জন মানুষের প্রায় ১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা এভাবেই গায়েব হয়ে গেছে। আর এই ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কারণ একটাই মোবাইল একাউন্ট। অনেক সময় প্রতারকের খপ্পরেও পড়েছেন অনেকেই।
তবে বই আছে ভাতা নাই এটার বাস্তবতা স্বীকার করে আশার বানী শুনালেন এই ইউপি সচিব মো. মোস্তাক আহমেদ। তিনি জানান, তিন বছরের এককালীন টাকা ব্যাংক থেকে পেলেও আর কোনও টাকা পান নাই মোবাইল থেকে। এটা বাস্তব সত্য। তবে এ ব্যাপারে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করেছি। খুব তারাতারি সমাধান হবে বলে জানান তিনি।
তবে মধ্যস্থ ভোগীদের দাবি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের এজেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে এই ভাতা দেওয়া হলে হবে না কোনও অনিয়ম আর দুর্নীতি ।আর এটাই প্রত্যাশা রংপুরের পীরগাছা এই ইউনিয়নের ভাতাভোগীদের।
ওডি/এসএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড