শুভংকর পোদ্দার, হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ)
লোহার কাঠামোর ওপর বসানো টিনের চালে মরচে ধরেছে। কিছু কিছু জায়গায় ফুটোও হয়েছে। বৃষ্টি হলেই ঘরের ভিতরে পড়ে পানি। বৃষ্টির পানি থেকে বাঁচতে ঘরের ভিতরে টানানো হয়েছে পলিথিন। তারপরও পানি থেকে যেন রক্ষা নেই। বৃষ্টি এলে ঘরের কোণে জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকতে হয় অনেককে। ঘরের বেড়ার টিন, কাঠ, টিনের দরজা (ঝাপ), জানালারও নাজেহাল অবস্থা। এমন জরাজীর্ণ ঘরে কষ্টে বসবাস মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার আজিমনগর ইউনিয়নের দুটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৯০টি পরিবারের।
স্থানীয়রা জানান, ২০০০ সালে দুস্থ ভূমিহীনদের পুনর্বাসনে আজিমনগর ইউনিয়নের হাতিঘাটায় দুইটি আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মিত হয়। নির্মাণকাজের তত্ত্বাবধান করে সেনাবাহিনী। হাতিঘাটা বাজারের পশ্চিম পাশের আশ্রয়ণে ১০০টি পরিবার এবং পূর্ব পাশে ৯০টি পরিবার বসবাস করে। আশ্রয়ণে নির্মিত ১৯টি নলকূপ এবং ৪৬টি শৌচাগারেরও বর্তমানে জীর্ণ অবস্থা।
সরেজমিনে দেখা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধিকাংশ ঘরের জরাজীর্ণ অবস্থা। চালের টিনে মরচে ধরে ফুটো হওয়ায় ঘরের ভিতরে পড়ে বৃষ্টির পানি। সে জন্য প্রায় প্রতিটি ঘরেই পলিথিন টানিয়ে বাস করেন বাসিন্দারা। ঘরের বেড়ার টিন মরিচা ধরে ভেঙে পড়ছে। টিনের দরজা (ঝাপ) ও জানালারও একই অবস্থা। আশ্রয়ণের নির্মিত টয়লেটের অবস্থাও বেহাল।
আশ্রয়ণ নির্মাণের পর থেকেই সেখানে বাস করেন রাবিয়া খাতুন। তিনি বলেন, ঘরের ভিতরে বৃষ্টির পানি পড়ে। পলিথিন টানিয়েছি, তাতেও ফিরে না। রাতের বেলা বৃষ্টি এলে জেগে বসে থাকতে হয়।’
তিনি আরও জানান, একবার কর্মকর্তারা এসে মেরামতের জন্য তালিকা করে নিয়ে গেলেও মেরামত আর হয়নি।
আশ্রয়ণ প্রকল্পটি নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে জানিয়ে মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘ভাঙনে বাড়িঘর হারিয়ে আশ্রয়ণে আশ্রয় নিয়েছি। এখন সেটাও যদি ভেঙে যায়, তাহলে আমরা কোথায় যাবো?’
আশ্রয়ণের আরেক বাসিন্দা ভারতী রানী সন্ন্যাসী বলেন, ‘ঘর ভেঙে যাচ্ছে। বৃষ্টি হলেই জল পড়ে। খুবই কষ্টে আছি।’
আশ্রয়ণ প্রকল্পের (পূর্ব পাশের) সভাপতি মো. ইসমাইল বলেন, ‘এখানে ৯০ পরিবারের বসবাস। নির্মাণের পর আর ঘরগুলো মেরামত করা হয়নি। প্রায় প্রতিটি ঘরই জরাজীর্ণ। বৃষ্টি এলেই পানি পড়ে। টয়লেটগুলোও ব্যবহার অনুপযোগী।’
আশ্রয়ণ প্রকল্পের (পশ্চিম পাশের) সভাপতি মো. খোরশেদ বলেন, ‘এ আশ্রয়ন প্রকল্পে ১০০ পরিবারের বাস। নির্মাণের পর থেকে এ পর্যন্ত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলি সরকারিভাবে মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আমরা বারবার চেয়ারম্যান ও প্রশাসনকে জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি। মেরামতের অভাবে ঘরগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি এলেই ঘরের ভিতরে পানি পড়ে। প্রায় প্রতিটি ঘরের বাসিন্দারা ঘরের ভিতরে পলিথিন টানিয়ে কোনো রকমে বসবাস করছেন।’
আজিমনগর ইউপি চেয়ারম্যান মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রায় প্রতিটি ঘরই মেরামত করতে হবে।’
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মানিকুজ্জামান বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প দুটি আমার দফতরের অধীনে নির্মিত হয়েছে কি-না আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে জানতে হবে। যদি আমার দফতরের অধীনে নির্মিত হয় তাহলে মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে আশ্রয়ণ প্রকল্পে কী পরিমাণ মেরামত করা প্রয়োজন, সে তথ্য দিতে বলা হয়েছে। তথ্য দিলে আমরা সেটা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো। সেখান থেকে অনুমোদন পাওয়া গেলে মেরামত করা হবে।’
আরও পড়ুন : ১৯৯০ সাল থেকে পত্রিকা বিলি করছেন আব্দুল আলিম
মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ বলেন, ‘সরকার যখন আশ্রয়ণ প্রকল্প করে দেয় তখন একবারেই দেয়। সরকার যখন তাদের আশ্রয়ণ করে দিয়েছিল তখন থেকে এখন পর্যন্ত তারা নিজেরা সক্ষম ও স্বাবলম্বী হতে পারেনি, বিষয়টি দুঃখজনক। তাদেরও কর্মক্ষম হতে হবে, সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। যদি তাদের জীবনমানের উন্নয়ন না হয়ে থাকে, মানবেতর জীবনযাপন করে থাকে সেক্ষেত্রে তাদের জন্য নতুন কোনো প্রকল্পে কিছু করা যায় কি-না, সে বিষয়ে আমরা সরকারকে সুপারিশ করতে পারি।’
ওডি/এএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড