সুমন খান, লালমনিরহাট
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার আলোচিত দহগ্রাম ইউনিয়নের বাসিন্দাদের চলাচলের একমাত্র সড়ক তিনবিঘা করিডোর সংস্কারের নামে সংকুচিত করতে থাকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) নিয়ন্ত্রাণাধীন এ সড়কটির দু’দিকে গত তিনদিন থেকে ১০ ফুট গর্ত করতে থাকে এবং পাশাপাশি সড়কে তিন ফুট উঁচু দেয়াল নির্মাণের জন্য লোহার ফার্মা বসাতে থাকে।
বিজিবিকে বিএসএফ জানায়, সড়কটি সংস্কার করে সৌন্দর্য্য বর্ধন করা হবে। একপর্যায়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও বিজিবি বুঝতে পারে সংস্কার ও সৌন্দর্য্য বর্ধনের নামে মূলত সড়কটি সংকুচিত হতে থাকে।
ছবি : দৈনিক অধিকার
বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে সড়ক সংস্কার কাজ বন্ধে বাঁধা দেয় বিজিবি ও স্থানীয় লোকজন। বিএসএফ বাঁধা না মেনে নির্মাণাধীন কাজের লোকদের দিয়ে কাজ করার চেষ্টা চালালে বিজিবি তা রুখে দেয়। উভয় বাহিনীর কোম্পানি কমান্ডার ঘটনাস্থলে আলোচনা করে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে ঘটনা জানায় ও কাজ বন্ধ রাখে। জানা গেছে, বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড উপজেলার কুচলিবাড়ি ইউনিয়নের পানবাড়ি এলাকা সংযুক্ত হতে দহগ্রাম ইউনিয়নের ভূখণ্ড পর্যন্ত ১৭৮ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৮৫ মিটার প্রস্থ্যের ভারতীয় এ তিনবিঘা করিডোর সড়কটি ২৪ ঘন্টা ব্যবহারের জন্য গত ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সরকারের সাথে আলোচনা করে খুলে দেন। সে থেকে একটানা সড়কটি ব্যবহৃত করছে বাংলাদেশের লোকজন।
গত এ সপ্তাহ আগে তিনবিঘা করিডোর ভারতীয় অংশে ইট, বালু, সিমেন্ট, লোহাসহ নির্মাণ সামগ্রী এনে রাখে। গত ৫ সেপ্টেম্বর থেকে সড়কটি সংস্কার করতে সকাল থেকে প্রায় ১২- ১৫ জন নির্মাণ শ্রমিক সড়কের দুই পার্শ্বে গর্ত খুড়তে থাকে। গত ৫ সেপ্টেম্বর ৫১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পানবাড়ি কোম্পানি কমান্ডার জাহাবুল ইসলাম তিনবিঘা করিডোরে নির্মাণ কাজে দায়িত্বরত বিএসএফকে গর্ত করার ব্যাপারে জানতে চাইলে তারা (বিএসএফ) বলেন, উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সড়কটি সংস্কার ও সৌন্দর্য্য বর্ধণের কাজ করা হবে। সাধারণ মানুষের চলাচলে কোনো সমস্যা হবে না।
এর দুই দিনে সড়কের প্রায় অর্ধ্যকে অংশে গর্ত করা হয়। করিডোর সড়কের পূর্ব-দক্ষিণ দিকে লোহার ফার্মা বসিয়ে ৩ ফুট উচু দেয়াল নির্মাণ করতে থাকে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ যেভাবে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে প্রক্রিয়া করছিল, সেভাবে নির্মাণ সম্পন্ন করা হলে বাংলাদেশি জনসাধারণ ও যানবাহন চলাচলে বিঘ্নতার সৃষ্টি হত বিষয়টি বুঝতে পেরে কাজ বন্ধে বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকালে বাঁধা দেয় বর্ডার গার্ড (বিজিবি)।
এরপরও বিএসএফ কাজ করার জন্য নির্মাণ সংশ্লিষ্ট ভারতীয় লোকজনদের নির্দেশ দেয়। এতে দায়িত্বরত বিজিবির সদস্যরা তীব্র প্রতিবাদ জানায় এবং এসময় প্রবল উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে ঘটনাস্থলে ভারতীয় ৪৫ রানীনগর বিএসএফ ব্যাটালিয়নের তিনবিঘা ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার বিকাশ রায় ও বাংলাদেশের ৫১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পানবাড়ি কোম্পানি কমান্ডার জাহাবুল ইসলাম সংশ্লিষ্ট সদস্যদের নিয়ে আলোচনা করেন। উভয়ে কাজ বন্ধে একমত হয়। বর্তমানে বিজিবির বাঁধার মুখে কাজ বন্ধ রয়েছে।
ঘটনার সময় উপস্থিত দহগ্রাম ইউনিয়নের বাসিন্দা মমিন প্রামানিক (৩৭) বলেন, যেভাবে দেয়াল নির্মাণ করছিল এতে সড়কটি আরও চিকন হত। মানুষের চলাচলে সমস্যা হত। সেজন্য বিজিবি, ইউনিয়নের লোকজনসহ নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে বাঁধা দেয়।
একই ইউনিয়নের আহাম্মদ মন্ডল বলেন, সড়ক দিয়ে ভারতের লোকজন অবাধে চলাচল করে। আমরা শুধু হেঁটে রাস্তা পার হই। বিএসএফ সংস্কারের নামে রাস্তাটি ছোট করছিল।
দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন প্রধান বলেন, তারা (ভারতীয় কর্তৃপক্ষ) রাস্তা খুঁড়ছিল রাস্তা বৃদ্ধি করবে বলে। তবে মঙ্গলবার রাতে দেখি ফার্মা বসিয়েছে ওখানে ৩ ফুট দেয়াল দিবে তাঁর জন্য। এতে তো মানুষের চলাচলে সমস্যা হবে। সে জন্য ইউনিয়নের লোকজন বিজিবিসহ নির্মাণ কাজ বন্ধে বাঁধা দেই।
বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ ৫১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পানবাড়ি কোম্পপানি কমান্ডার সুবেদার জাহাবুল ইসলাম বলেন, ভারতীয় নির্মাণ শ্রমিকদের দিয়ে রাস্তার দুই পাশে সংস্কারের নামে দেয়াল নির্মাণ করছিল। আমরা বাঁধা দিয়েছি।
আরও পড়ুন : নরসিংদীতে ট্রেনে কাটাপড়ে একদিনে তিনজনের মৃত্যু
এ ব্যাপারে বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ ৫১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল ইসহাক আলীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
ওডি/এফই
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড