মো. মহিউদ্দিন, বাঘাইছড়ি (রাঙ্গামাটি)
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে বিদ্যুতের ভেল্কিবাজিতে গ্রাহকদের ভোগান্তি চরম পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে। একদিকে তাপদাহে ভ্যাপসা গরম, অপরদিকে ঘন ঘন লোডশেডিং এর সাথে লো ভোল্টেজ জনজীবনে যেন নাভিশ্বাস উঠেছে। সরকার কর্তৃক ঘোষিত দেশব্যাপী বিদ্যুতের ঘাটতি নেই বললেও এর বিপরীতে বাঘাইছড়ির বাস্তব চিত্র ভিন্ন। তবে কয়েক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন মারিশ্যা বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র।
সূত্রে জানা যায়, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল হওয়া সত্ত্বেও যোগাযোগ ক্ষেত্রে পিছিয়ে পরা অত্র উপজেলার মানুষের কথা বিবেচনায় ১১ হাজার ( টু-পেইজ) ভোল্টেজ বৈদ্যুতিক লাইনকে, (ফোর-পেইজ) ৩৩ হাজার কেভি সাব-স্টেশন বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উন্নত করেন বর্তমান সরকার।
জানা যায়, বাঘাইছড়িতে সর্বপ্রথম বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপন করে চট্টগ্রামের হাটহাজারী জিরো মাইল বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে, বাঘাইছড়ি থেকে চট্টগ্রামের হাটহাজারী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দূরত্ব বেশি ও গ্রাহক হয়রানীর দরুন সরকার ২০১৬ সালে শেষের দিকে বাঘাইছড়ি উপজেলাকে ৩৩ হাজার কেভি ভোল্টের (ফোর ফেইজ) লাইনের সাব-স্টেশনে উন্নত করেন রাঙামাটির কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রস্থলে থেকে।
বর্তমানে কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাথে সংযুক্ত পূর্বক খাগড়াছড়ি ঠাকুরছড়া স্থলাভিষক্ত বিদ্যুৎ বিতরণ কেন্দ্র থেকে দীঘিনালা উপজেলায় ৩৩ কেভি বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন ও দীঘিনালা বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন থেকে বাঘাইছড়ি উপজেলায় ৩৩ হাজার কেভি বিদ্যুৎ লাইন সংযোগ স্থাপন করা হয়। বাঘাইছড়ি উপজেলাটি পাহাড়ের আকাঁবাঁকা ও সুউচ্চ পাহাড়ি জনপথ হওয়ায়, বাঘাইছড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিতরণ ও বৈদ্যুতিক লাইন নিয়ন্ত্রণ রাখতে দীঘিনালা বিদ্যুৎ সাব স্টেশনে একটি রিডিং মিটার ও ১টি ফিটার সুইচ বসানো হয়েছে ।
মারিশ্যা বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রে লোডশেডিংয়ের কারণ জানতে চাইলে, তার দোষ চাপিয়ে দেওয়া হয় দীঘিনালা বিদ্যুৎ বিভাগের ওপর। অথচ দীঘিনালা বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে এ ব্যাপারে কিছুই জানে না। মারিশ্যা বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে যদি বলা হয় ফিটার সুইচ বন্ধ রাখতে ঠিক তখন তারা এই দায়িত্বটুকু পালন করে বলে জানা যায়।
এদিকে বাঘাইছড়ি উপজেলার আওতায় প্রায় দেড় লক্ষ মানুষের বসবাস, এ উপজেলাতে পাঁচ হাজার আটশত এর অধিক বৈধ বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছে। বিদ্যুতের ভেল্কিবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকগণ। এই এলাকায় বিদ্যুৎ এই আসে এই যায় অবস্থায় রয়েছে। বিদ্যুতের এই ভেল্কিবাজিতে জনমনে চরম অসন্তোষ ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। মাঝে মাঝে বিদ্যুতের দেখা মিললেও লো ভোল্টেজের কারণে ফ্রিজ, খাবারের পানি ও গৃহস্থালির প্রয়োজনে বৈদ্যুতিক মোটর কিংবা কমপ্রেসর চালানো একেবারেই অসম্ভব হয়ে উঠেছে। বেশ কিছুদিন ধরে এই ভোগান্তির মাত্রা আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে। কি রাত, কি দিন, বিদ্যুৎ বিভ্রাট যেন লেগেই আছে।
ভুক্তভোগী শরিফুল ইসলাম সবুজ বলেন- আকাশে মেঘ করলে লোডশেডিং, বৃষ্টির দোহাই দিয়েই বৃষ্টির সময় বিদ্যুৎ নেই। আবার দিনের বেলায় গাছ কাটার নাম করে বিদ্যুৎ বন্ধ, যেদিন সব কিছু ভালো থাকে সেদিন প্রতি ঘণ্টায় একবার হলেও লোডশেডিং দিতে হয় কেন। আমি বাঘাইছড়ির বিদ্যুৎ অফিসে কর্মকর্তাদের কাজের অবহেলাকে এর জন্য দায়ী করছি।
আরেক ভুক্তভোগী সাইফুল ইসলাম সুজন বলেন, বাঘাইছড়ির বৈদ্যুতিক লোডশেডিং নিয়ে যখন জনসাধারণ বাঘাইছড়ি বিদ্যুৎ অফিসে কল দিয়ে লোডশেডিংয়ের কারণ জানতে চান তখনই বরাবর বলা হয় খাগড়াছড়ি বা দীঘিনালা থেকে লাইন অফ করা হয়েছে। খবর নিয়ে দেখা যায় খাগড়াছড়ি, দীঘিনালা বিদ্যুৎ ঠিকই আছে বাট বাঘাইছড়ির বিদ্যুৎ কোথায় লুকিয়ে আছে। এর দায়ভার সম্পূর্ণ বাঘাইছড়ি বিদ্যুৎ অফিসের। নিজেদের গাফিলতির কারণে কষ্ট পেতে হয় সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সর্বস্তরের জনগণকে।
একটু আবহাওয়া খারাপ হলেই বাঘাইছড়ি বিদ্যুৎ বিভাগ জেনে জান যে যেকোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যাবে তাই অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিদ্যুৎ অফ করে দেন। মাঝে মধ্যে মনে হয় লাইন অফ করে কর্মকর্তাসহ অফিস স্টাফরা যে যার বাসায় চলে যান। বাঘাইছড়ি বিদ্যুৎ যাওয়া আসা নিয়ে, ৬ মাসে, ৯ মাসে একবার নোটিশ পাওয়া যায়।
যদিও নোটিশে উল্লেখ থাকে (সকাল ৮ থেকে বিকাল ৫টা) পর্যন্ত গাছ কাটা হবে। কিন্তু দেখা যায় ৫টা গড়িয়ে ৬টা,৭টা বেজে যায়, তাও সেই কাঙ্ক্ষিত ৫টা আসে না। বাঘাইছড়িবাসী এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি চায়।
ভুক্তভোগী রেজাউল করিম বলেন, বাঘাইছড়ি উপজেলায় বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে ১১ হাজার ভোল্ট থেকে বাড়িয়ে ২১ হাজার ভোল্ট করা হয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কোনভাবেই কমেনি। লোডশেডিং যেভাবে শুরু হয়েছে আমার মনে হয় বাঘাইছড়ি উপজেলার ইতিহাসে এই বছরটাই সকল রেকর্ড ভেঙ্গেছে।
হাসপাতালে একাধিক শ্বাসকষ্টের রোগী আছে,লোডশেডিং এর কারণে তারা বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সব মিলিয়ে এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এখন সাধারণ জনগণ যদি অনাকাঙ্ক্ষিত কোন কিছু ঘটিয়ে ফেলে তবে এর দায়ভার কে নিবে?
আরও পড়ুন : দৌলতপুরে পানিবন্দি ৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
বাঘাইছড়ি বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের আবাসিক প্রকৌশলী (আর ই) সুগত চাকমার সাথে কয়েকবার চেষ্টার পর তার কাছে লোডশেডিংয়ের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা কোন লোডশেডিং না। লাইনের সমস্যা বলে ফোন কেটে দেয়।
ওডি/এফই
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড