হামিদ রনি, নোয়াখালী
পুরোনো কমিটি বাতিল ও নতুন কমিটি গঠন নিয়ে এখন নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে উত্তপ্ত পরিবেশ বিরাজমান। এরই মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগ নেতারা তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে সমাবেশ ডাকায় সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) শহরে সকাল-সন্ধ্যা ১৪৪ ধারা জারি করেছিল জেলা প্রশাসন।
এ দিকে, নোয়াখালী আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় অস্ত্রহাতে এক যুবকের গুলি করার একটি ভিডিয়ো সোমবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
ভিডিয়োতে দেখা যায় তিন যুবক অস্ত্রহাতে প্রতিপক্ষের দিকে তেড়ে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে একজন কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়েন। পরে ধাওয়ার মুখে অস্ত্রধারীদের দৌড়ে পালিয়ে যেতে দেখা যায়। তবে অস্ত্রধারী যুবকদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
ধারণা করা হচ্ছে, গত রবিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকালে নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী সমর্থক এবং সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীনের সমর্থকদের সংঘর্ষের সময় ভিডিয়োটি ধারণ করা হয়।
৩৮ সেকেন্ডের ওই ভিডিয়োটি শহরের জামে মসজিদ মোড়ের দক্ষিণ পাশের সড়কের পশ্চিম দিকের কোনো একটি বহুতল ভবন থেকে ধারণ করা। ভিডিয়োর শুরুতে দেখা যায়, ১৫ থেকে ১৬ জন তরুণ দক্ষিণ দিক থেকে উত্তর দিকে প্রতিপক্ষকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়ছেন। তাদের মধ্যে ছিলেন অস্ত্রধারী তিন যুবক। যাদের মধ্যে সাদা জামা পরা একজন প্রতিপক্ষকে লক্ষ্য করে একাধিক গুলি ছোড়েন। বাকি দুজনের একজন রঙিন টি-শার্ট পরা, অন্যজন খয়েরি জামা পরা। তারা গুলি করার প্রস্তুতি নেওয়ার আগেই প্রতিপক্ষের ধাওয়ার মুখে অস্ত্র হাতে দৌঁড়ে দক্ষিণ দিকে পালিয়ে যান।
এ দিকে, প্রকাশ্যে শহরের মাঝখানে এভাবে অস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর গুলি ছোড়ার ঘটনায় নোয়াখালী শহরের প্রধান সড়কের আশপাশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। রাজনৈতিক সংঘাতে দুর্বৃত্তরা এভাবে অস্ত্র নিয়ে গুলি ছুড়লে তা থেকে ব্যবসায়ী ও সাধারণ জনগণ রেহাই পাবে না বলেও মন্তব্য করেন অনেকে।
এ ব্যাপারে সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সাহেদ উদ্দিন দৈনিক অধিকারকে বলেন, অস্ত্র নিয়ে দৌড়ে পালানো ও গুলি করার একটি ভিডিয়ো তিনি পেয়েছেন। এটি দেখে অস্ত্রধারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।
অন্যদিকে, স্থানীয়রা জানিয়েছেন- সেদিন সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর সমর্থকরা ছিলেন জামে মসজিদ মোড়ের উত্তর দিকে। এ ছাড়া শিহাব উদ্দিনের অনুসারীরা ছিলেন জামে মসজিদ মোড়ের দক্ষিণ দিকে জিলা স্কুলের সামনের সড়কে। আর ভিডিয়োতে দেখা যায়, অস্ত্রধারীরা গুলি ছোড়ার পর জিলা স্কুলের সামনের সড়ক হয়ে দক্ষিণ দিকে দৌঁড়ে পালিয়ে যান।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীন বলেন, ‘অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের আমি চিনি না। আর গুলি কে করছে সেটাও আমি জানি না। তবে সেদিন ওসি সাহেদসহ পুলিশ আমাদের লোকজনকে গুলি করতে করতে তাড়া করে আমার বাসার সামনে নিয়ে আসে। আমাদের অনেকে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।’
অন্যদিকে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ পিন্টু বলেন, ‘ভিডিয়োটি আমি দেখেছি। এই অস্ত্রধারীরা সদর পশ্চিমাঞ্চল থেকে এসেছে। এরা কার লোক সবাই চেনেন। নাম-পরিচয়ও সবাই জানেন। এরা অস্ত্রধারী চিহ্নিত সন্ত্রাসী। প্রশাসন যেন অবিলম্বে এই অস্ত্রধারীদের আইনের আওতায় আনে, সেই দাবি জানাচ্ছি।’
আরও পড়ুন : মানিকগঞ্জে বন্যার পানিতে গোসলে নেমে বৃদ্ধার মৃত্যু
তবে ভাইরাল হওয়া ভিডিয়ো সম্পর্কে জেলা পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম দৈনিক অধিকারকে জানান, বিষয়টি তিনি দেখছেন। খোঁজ-খবর নিয়ে অস্ত্রধারীদের আইনের আওতায় আনার জোর চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি দুর্বৃত্তদের পরিচয় শনাক্তে সবার সহযোগিতাও কামনা করেন তিনি।
ওডি/আইএইচএন
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড