• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বিলীন চরের স্কুল, ক্লাসে ফেরাই চ্যালেঞ্জ

  সোহেল রানা, সিরাজগঞ্জ

০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২০:৫৯
প্রাথমিক বিদ্যালয়
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঢুকে পড়েছে যমুনা নদীর পানি। ছবি : দৈনিক অধিকার

সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে যমুনা নদীর ক্রমাগত ভাঙনে গত দেড় বছরে প্রায় ২৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এরমধ্যে গত দুই সপ্তাহে ৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় গ্রাস করেছে যমুনা নদী।

আগামী ১২ সেপ্টেম্বর খুলছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমন ঘোষণার পর থেকে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঝোপঝাড়, বাথরুমসহ আসবাবপত্রের ধুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে। তবে ২৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করায় চিন্তিত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি, পাঠদান কার্যক্রম ও পরীক্ষা নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে সংশ্লিষ্টদের।

চৌহালী উপজেলা শিক্ষা অফিস ও প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, সাতটি ইউনিয়নে ১২৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়াও কলেজ ৫টি, কারিগরি কলেজ ৩টি, ফাজিল মাদরাসা ৩টি, আলিম মাদরাসা একটি, দাখিল মাদরাসা ১৫টি, উচ্চ বিদ্যালয় ১৮টি ও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে ২টি। এরমধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ২৬ হাজার ও মাধ্যমিকের প্রায় ২৪ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থী রয়েছে।

করোনার কারণে প্রায় দেড় বছর ধরে স্কুল বন্ধ থাকায় চরাঞ্চলের অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বহু শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে। অনেকেই বাল্য বিয়ের পিঁড়িতে বসে সংসার গড়েছে। কেউ কেউ কর্মের তাগিয়ে অন্যত্র চলে গেছে। এ দিকে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় নষ্ট হচ্ছে শিক্ষার্থীদের বসার বেঞ্চ, শ্রেণিকক্ষের দরজা-জানালায় বাসা বেঁধেছে মাকড়শা, পড়েছে বালুর আস্তরণ।

এ জন্য কিছু প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ এখনও নিশ্চিত হয়নি। ক্লাস চালু হলেও এ বছর বন্যা ও নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ২৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে অনেক সময় লেগে যেতে পারে। কারণ যমুনার চরাঞ্চলে অধিকাংশ অভিভাবক অসচেতন ও আর্থিক সংকটের কারণে প্রায় ১৮ হাজার শিক্ষার্থী বাড়িতে গৃহ শিক্ষকের ব্যবস্থা করতে পারেননি। পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে চরাঞ্চলে অনলাইন ক্লাস ছিল না বললেই চলে।

এ দিকে, দীর্ঘদিন পড়াশোনা বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়াশোনার আগ্রহ নেই বললেই চলে। যে কারণে ক্লাস চালু হলেও সহজেই তাদের স্বাভাবিক পড়াশোনায় খাপ খাইয়ে নিতে পারা কষ্টকর হবে বলে মত দিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক। এ কারণে দেড় বছর পর ক্লাস চালু হলেও চরাঞ্চলের প্রায় সাড়ে ৭ হাজার শিক্ষার্থীর ক্লাসে উপস্থিতি ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া বন্যার পানি প্রবেশ করেছে মুরাদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাকুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাপানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চৌবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চৌবাড়িয়া উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খাষমধ্যশিমুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বীরমাশুকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কোদালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরমুরাদারপুর ও বৈন্যসহ প্রায় ২৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। বিশেষ করে এ বছর বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই যমুনা নদী ভয়ংকর মূর্তি ধারণ করে ক্রমাগত বসত-বাড়ি, ফসলি জমি, দোকান-পাট, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা গ্রাস করে নিয়েছে। এর সাথে উমারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাউসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইউসুফ শাহী সলঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিলঝলহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ধুপুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

অন্যদিকে গত দেড় বছরে শাহাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মালিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরবোয়ালকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রেহাইমৌশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বারবয়লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, স্থলনওহাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আরমাশুকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ব্রিদাশুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এ্যাওয়াজিকাঠালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঘুশুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হিজুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পয়লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চৌবাড়িয়াপূর্ব পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খাষমধ্যশিমুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম হাটাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাঁচশিমুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ধুপুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শৈলজানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উমারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাউসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইউসুফ শাহী সলঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিলঝিলহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরপাচুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আগবিয়ানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় যমুনা গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া বর্তমানে প্রায় ৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদী ভাঙনের মুখে পড়েছে।

নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়া অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর নতুন স্থানে পাঠদান কক্ষ নির্মাণ হয়েছে। তবে এ বছর বিলীন হয়ে যাওয়া স্কুলগুলোর টিন-কাঠসহ আসবাবপত্রের ঠাঁই হয়েছে কারও বাড়ির উঠান, খোলা মাঠে অথবা ওয়াবদাবাঁধে। এ কারণে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে শঙ্কায় অভিভাবকরা। বিশেষ করে এ বছর স্কুলগুলোতে পরীক্ষা নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

আরও পড়ুন : মানচিত্র থেকে মুছে যাচ্ছে জামালপুরের আইরমারী খান গ্রাম!

এ বিষয়ে স্থানীয় সচেতন মহল মনে করছেন, করোনায় বন্ধ থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে ও বাইরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নিশ্চিত করাসহ প্রতিদিনই শিক্ষক, শিক্ষার্থী, স্টাফসহ সংশ্লিষ্টদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও স্কুলবিহীন শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফিরিয়ে আনাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। এ ক্ষেত্রে চৌহালী উপজেলাটি রাশশাহী বিভাগের মধ্যে একমাত্র দুর্গম উপজেলা হওয়ায় চ্যালেঞ্জ একটু বেশি।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর ফিরোজ জানান, নদীতে বিলীন হওয়া স্কুলগুলো অন্যের বাড়ি অথবা খোলা স্থানে ঘর তুলে পাঠদানের ব্যবস্থা চালু রাখা হয়েছে। আর স্কুল খোলার বিষয়ে ঘোষণা আসার পর থেকে প্রতিটি বিদ্যালয়ে পাঠদানের জন্য উপযুক্ত করা হচ্ছে।

তবে চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আনিছুর রহমান দৈনিক অধিকারকে বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস চালুর জন্য সব রকম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বন্যা কবলিত ও ভাঙনে বিলীন বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদানে বিকল্প ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

ওডি/আইএইচএন

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড