ওবায়দুল কবির সম্রাট, কয়রা, খুলনা
স্বামীর নির্মম অত্যাচারের শিকার গৃহবধূ তাজমিন নাহার ময়না। যৌতুকের দাবিতে এরই মধ্যে অত্যাচার সইতে না পেরে স্বামীর ঘরছাড়া হয়েছেন তিনি। দেড় বছর বয়সী ছেলে সন্তানকে নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও সংসার টেকানো সম্ভব হয়নি ময়নার। শেষে স্বামীর সংসার ফিরে পেতে হয়েছেন আদালতের দ্বারস্থ।
ভুক্তভোগী গৃহবধূ ময়না খুলনার কয়রা উপজেলার সদর ইউনিয়নের ২ নম্বর কয়রা গ্রামের জামাল ঢালীর মেয়ে। ২০১৯ সালের ২৬ জানুয়ারি একই গ্রামের মিজানুর রহমান শেখের ছেলে মেহেদী হাসানের সাথে তার বিয়ে হয়।
জানা গেছে, প্রায় ৩ বছর আগে বধূ সেজে স্বামীর সংসারে গিয়েছিল ময়না। সুখে-শান্তিতেই চলছিল সংসার। কিন্তু হঠাৎ কালবৈশাখীর মতো ময়নার সংসারে আগমন ঘটল যৌতুক নামের ঝড়ের। কিন্তু ময়নার পরিবারের যৌতুক দেওয়ার মতো সামর্থ্য নেই। এ নিয়ে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকদের সাথে তার প্রায়ই ঝগড়া লেগেই থাকত। এরই মাঝে ময়না ছেলে সন্তানের মা হন।
এ দিকে, যৌতুকের চাহিদা মেটাতে না পারায় প্রতিনিয়তই স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকদের মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকারও হতে হয় ময়নাকে।
প্রতিবেশীরা জানান, বিয়ের কিছুদিন পর থেকে ময়না ও মেহেদীর দাম্পত্য জীবনে কলহ শুরু হয়। প্রায় সময়ই ঝগড়া-ঝাটি লেগে থাকত।
মামলার এজাহার ও ময়নার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, প্রায় তিন বছরের দাম্পত্য জীবনে ফুটফুটে এক ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। তার বয়স বর্তমান দেড় বছর। দাম্পত্য জীবনের শুরুতে মেহেদীর সংসারে অভাব-অনটন থাকায় ময়না তার বাবার বাড়ি থেকে ২০ হাজার টাকা ব্যবসার জন্য স্বামীকে এনে দেন। এরপর কয়েক মাস তাদের দাম্পত্য জীবন ভালো চললেও বাকি দুই বছরই যৌতুকের দাবিতে স্বামীর অত্যাচার ও নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে উঠে ময়না। দিন যত যেতে থাকে যৌতুকের দাবিতে তার ওপর অত্যাচারের মাত্রাও বাড়তে থাকে।
একপর্যায়ে স্বামী স্থানীয়ভাবে আত্ম কর্মসংস্থানের জন্য শ্বশুরবাড়ি থেকে একটি ইজিবাইক এনে দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। পরে এই ইজিবাইক দিতে অক্ষমতা প্রকাশ করায় তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। প্রায়সময় ময়নাকে মারধর করা হতো।
এ দিকে, স্বামীর অত্যাচার-নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পেতে পাড়া-প্রতিবেশীর দ্বারস্থ হলে ময়নার স্বামী মেহদীসহ তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন।
অন্যদিকে, সামাজিকভাবে সালিশে যৌতুক ছাড়া তাকে আবারও স্বামীর সংসারে নিয়ে যেতে চাপ দেওয়া হলেও মেহদী ও তার পরিবারের লোকজন ময়নাকে সংসারে ফিরিয়ে নিতে অস্বীকৃতি জানান।
স্বামীর কথামতো যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় ময়নাকে ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরে স্বামী গোপনে আরেকটি বিয়েও করেন। এরপর থেকে গত প্রায় ৪ মাস ধরে বাবার বাড়িতে অবস্থান করছেন ময়না।
এ দিকে, ময়নার পরিবারের দাবি- যৌতুক দিতে না পারাসহ ময়নাকে সংসারে ফেরানোর জের ধরে স্বামী মেহদী নিজের মাকে দিয়ে ময়নার বাবাসহ আত্মীয়-স্বজনকে জড়িয়ে আদালতে একটি হয়রানিমূলক মারামারি ও লুটপাটের মামলা করেন। ময়নার বাবা ও ভাইয়েরা সেই মামলায় এরই মধ্যে জেলও খেটেছেন।
এ ব্যাপারে ময়নার দিনমজুর বাবা জামাল ঢালী দৈনিক অধিকারকে বলেন, আমি গরিব মানুষ। দিন আনি দিন খাই। সবাই ফেলে দিলেও আমার সন্তানকে তো আর আমি ফেলে দিতে পারি না। অভাবের সংসার একদিকে মেয়ে ও সন্তানের ভরণপোষণ দিচ্ছি, অপরদিকে মামলা চালাতে গিয়ে সংসার সামলাতে হিমশিম খাচ্ছি।
এ ব্যাপারে ময়নার স্বামী ও তার পরিবারের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তারা ফোন ধরেননি।
আরও পড়ুন : ভালুকায় গাড়ি চাপায় প্রাণ গেল ব্যবসায়ীর
এ দিকে, বাবার বাড়িতে একমাত্র শিশু সন্তানকে নিয়ে সংসার ছাড়া ময়নার কেঁদে কেঁদে দিন কাটছে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে ময়না বলেন, ‘আমার একটি সন্তান আছে। আমি বিয়ের পর থেকেই স্বামীর সংসার করতে চেয়েছি। কিন্তু যৌতুকলোভী মাদকাসক্ত স্বামী ও তার পরিবারের লোকজনের অত্যাচারে সংসার ছেড়ে বাবার বাড়িতে আসতে বাধ্য হয়েছি। তার মাকে দিয়ে আমার বাবা, বোন জামাই ও তার ছোট ভাইকে জড়িয়ে হামলা ও লুটপাটের সাজানো মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। আমি স্বামীর সংসারে ফিরতে চাই এবং অত্যাচার নির্যাতন থেকে বাঁচতে চাই।’
ওডি/আইএইচএন
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড