সেলিম হায়দার, তালা (সাতক্ষীরা)
ড্রাগন ফল। কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশের মানুষ জানতো এটি বিদেশি ফল। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে দেশে এর চাষ এতোটা বেড়েছে যে, এখন এটি দেশি ফল বলেও পরিচিত। সাতক্ষীরার তালায় ড্রাগনের চাষ হচ্ছে। জানা গেছে, টক-মিষ্টি ও মিষ্টি স্বাদের ড্রাগন চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন কলেজশিক্ষক তৌহিদুজ্জামান।
তৌহিদুজ্জামান সাতক্ষীরার তালা উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নের বাগমারা গ্রামের মৃত মাষ্টার ওমর আলীর ছেলে ও খুলনা সুন্দরবন সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক। শিক্ষকতার পাশাপাশি গ্রামে কৃষিকাজ করেন তিনি। গতানুগতিক কৃষির ওপর নির্ভরশীল না হয়ে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে লাভজনক ফসল উৎপাদনে বিশ্বাসী তিনি, তাই উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নের ফলেয়া-চাঁদকাটি এলাকায় প্রায় ৭ বিঘা জমিতে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করেছেন।
বাগান ঘুরে দেখা যায়, চারদিকে সবুজের সমারোহ। প্রতিটি গাছে ঝুলছে তিন থেকে চারটি করে কাঁচা, পাকা ও আধা পাকা ড্রাগন ফল। বাগানে কাজ করছিলেন ৪-৫ জন শ্রমিক। তাদের মধ্যে কয়েকজন গাছ থেকে পাকা ফল সংগ্রহ করছিলেন। অন্যরা নিড়ানি দিয়ে আগাছা তুলছিলেন। প্রায় পাঁচ ফুট উচ্চতার প্রতিটি কংক্রিটের খুঁটি পেঁচিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে ড্রাগন ফলের গাছ। জমিতে রয়েছে ১২শ খুঁটি। এক খুঁটি থেকে অন্য খুঁটির দূরত্ব সাড়ে সাত ফুট দৈর্ঘ্য ও সাড়ে ছয় ফুট প্রস্থ।
প্রত্যেক খুঁটিতে ৪টি করে গাছ লাগানো হয়েছে। ড্রাগন ফল গাছ খুব দ্রুত বাড়ে এবং শাখা তৈরি করে। একটি গাছ বছরে ৩০টি পর্যন্ত শাখা তৈরি করতে পারে। ড্রাগন ফল রোপণের এক বছরের মাথায় ফল সংগ্রহ করা যায়। প্রতিটি ফল ২০০-৩০০ গ্রাম করে ওজন হয়। প্রতিকেজি ফল পাইকারি ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা বিক্রি হয়। ড্রাগন ফল চাষে অনেক খরচ হলেও এটি অনেক লাভজনক ফসল বলে তৌহিদুজ্জামানের দেখাদেখি অনেক চাষি ড্রাগন চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
ড্রাগনচাষি কলেজশিক্ষক তৌহিদুজ্জামান জানান, ইউটিউব দেখে শখের বশে তিনি বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করেন। প্রায় ৭ বিঘা জমি বাৎসরিক ১ লাখ ৪০ হাজার টাকায় লিজ নিয়ে ফলের চাষ করেছেন। ফলের বাগান সার্বক্ষণিক দেখভালের জন্য মাসিক বেতনে দু’জন কেয়ারটেকার নিযুক্ত করেছেন। তারাই সবসময় ড্রাগন ফলের বাগান তদারকি করে। প্রকল্প শুরু থেকে ফল ওঠা পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৩ লক্ষ টাকা। বর্তমানে গাছ থেকে ফল তোলা ও বিক্রয় শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে প্রায় দেড় লক্ষ টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি করেছেন তিনি।
শিক্ষিত বেকারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, চাকরি নামের সোনার হরিণের পিছনে না ছুটে তারা যদি নিজেরাই উদ্যোক্তা হয়ে ড্রাগন ফল চাষ করে তাহলে নিজের বেকারত্ব দূর হবে, পাশাপাশি মোটা অংকের টাকাও উপার্জন করা সম্ভব হবে। সরকার যদি ড্রাগন চাষের উপরে ঋণের ব্যবস্থা করে তাহলে বেকার যুবকরা ড্রাগন চাষে আগ্রহী হবে।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল ইসলাম জানান, বাণিজ্যিকভাবে তালা উপজেলায় ড্রাগন চাষ করছেন শিক্ষক তৌহিদুজ্জামান। ড্রাগন ফলের চাষ শুরুর পর থেকেই কখন কীভাবে গাছের পরিচর্যা নিতে হবে সে বিষয়ে তাকে পরামর্শ দিয়ে আসছি। ড্রাগন ফল চাষে জৈব সার একটু বেশি লাগে। রাসায়নিক সার কম লাগে। তার সফলতা দেখে অনেক কৃষক ড্রাগন চাষের জন্য পরামর্শ নিতে আসছেন। বর্তমানে মাগুরার বেশ কিছু জায়গায় এই ড্রাগন ফলের চাষ হচ্ছে।
আরও পড়ুন : পদ্মা সেতু এলাকা থেকে গ্রেফতার ১৬ ভারতীয়
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজিরা খাতুন জানান, বৃহত্তর আকারে বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন চাষ হয়েছে। আমি ড্রাগন ফল বাগানে পরিদর্শনে গিয়েছি। ফসলের মান অনেক ভালো। ড্রাগন একটি পুষ্টিকর ফল, এতে রয়েছে অধিক পরিমাণে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা। যা মানবদেহের জন্য অনেক উপকারী। বিশেষ করে ডায়বেটিস রোগীদের জন্য কার্যকারী একটি ফল। ব্যয়বহুল হলেও ড্রাগন চাষ করে অনেক লাভবান হবেন কৃষকরা। তালা উপজেলা কৃষি অফিস সবসময় কৃষকদের পাশে থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করবে বলেও জানান তিনি।
ওডি/এএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড