সাইদুর রহমান, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)
শহর বাস্তবায়নের জন্য ‘পূর্বাচল নতুন শহর’ নামে রাজধানীর অদূরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার সদর ও দাউদপুর ইউনিয়নসহ গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ থানার নাগরী ইউনিয়নের বরকাউ ও পারাবর্তা মৌজায় গড়ে তোলা হচ্ছে পরিকল্পিত নগর। আর এ নির্মাণাধীন প্রকল্প থেকে দিনদুপুরে মাটি চুরি করছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট।
এছাড়াও ৩শ ফুট সড়ক এলাকায় সেনাবাহীনি পরিচালিত সড়ক উন্নয়নের কাজ চলমান থাকায় চোরাকারবারিরা রাতের বেলায় বেকু চালিয়ে পূর্বাচল প্রকল্পের মাটি কেটে ট্রাকে করে বিক্রি করে দিচ্ছে শহরের বাইরের বিভিন্ন ব্যক্তিগত মালিকানার জমিতে।
সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প তৈরিতে ভাওয়ালগড়ের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট করে রূপগঞ্জ সংলগ্ন গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বড়কাউ ও পারাবর্ত মৌজার লালমাটির উঁচু–নিচু ভূমি কেটে সমান করা হচ্ছে। কেটে ফেলা হচ্ছে সেখানকার বনভূমি। একইভাবে বিভিন্ন ঠিকাদারের নিয়োগ করা শ্রমিক ও স্থানীয় সন্ত্রাসীদের সহায়তায় বেকু আর মালবাহী ট্রাকে মাটি বহন করে শহরের বাইরে নিয়ে বিক্রি করে দিচ্ছে একটি মহল। মাত্র ১ হাজার টাকা ড্রাম ট্রাক প্রতি মাটি সস্তায় কিনে নিচ্ছে আশপাশের লোকজন।
সূত্র জানায়, পূর্বাচল প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করা ১ হাজার ৩০০ একর জমির বেশির ভাগ ছিল টেক টিলা অঞ্চল। ফলে চোর সিন্ডিকেট উঁচু টেকের মাটি কেটে নিচ্ছে প্রকাশ্যে। আবার এখানে শুধু দুই মৌজায় ২ হাজার প্লট তৈরি করতে ছোট-বড়-মাঝারি মিলিয়ে প্রায় ১১ লাখ গাছ কাটা হয়েছে।
কালনী এলাকার বাসিন্দা কোহিনুর করিম বিথী বলেন, পূর্বাচলের আশেপাশের কারো মাটির প্রয়োজন হলে নির্মাণাধীন প্রকল্পের ঠিকাদারদের নিয়োগ করার লোকজনকে টাকা দিলেই মিলে মাটি। এভাবে কখনো দিনে আবার কখনো রাতে মাটি চুরি হচ্ছে। এ মাটি চুরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে ইছারমাথা জাতীয় ট্রাক্টর আর ঠিকাদারদের বেকু ও ড্রামট্রাক।
সুলপিনা এলাকার বাসিন্দা আলম মিয়া বলেন, রাজউকের সুদৃষ্টি থাকলে এভাবে কেউ মাটি চুরি করতে পারত না। এসব কাজে জড়িত থাকে আশপাশের উন্নয়ন কাজে নিয়োজিত ঠিকাদার ও শ্রমিকরা। ফলে দিনদুপুরে গাছ ও মাটি কেটে বাইরে বিক্রি করে দিচ্ছে।
আলমপুর এলাকার বাসিন্দা দুলাল মিয়া বলেন, রূপগঞ্জ পূর্বাচলের বিভিন্ন সেক্টরে একাধিক শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। তারা পূর্বাচলের দায়িত্বরত পুলিশ ও ঠিকাদারদের ম্যানেজ করে মাটি চুরি অব্যাহত রেখেছে। ফলে এলাকার কেউ ভয়ে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না।
অভিযোগ রয়েছে, পূর্বাচলের অভ্যন্তরে কিংবা বাইরের ব্যক্তিগত জমিতে রাজউকের সীমানার মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে খাবার হোটেল ব্যবসায়ীরা। তারা পূর্বাচলের বিভিন্ন উঁচু স্থান থেকে মাটি কেটে নিয়ে তাদের হোটেলের সামনে দিয়ে রেখেছে। এ কাজে জড়িত রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় লালিত লোকজন। এদের মধ্যে দাউদপুরের কালনী এলাকায় সোহেল নামের এক ব্যক্তি তার বেকু দিয়ে দিন দুপুরে মাটি কেটে বিক্রি করলেও রহস্যজনক তা বন্ধে কেউ উদ্যোগ নিচ্ছে না।
তবে অভিযুক্ত সোহেলের দাবি, এসব মাটি রাজউকের কর্মকর্তাদের অনুমতি নিয়েই কাটা হয়।
এছাড়াও কোন পুলিশ সদস্যকে ম্যানেজের বিষয় অস্বীকার করে রূপগঞ্জ থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক পূর্বাচলের ইনচার্জ রাজু মিয়া বলেন, আমি নতুন এ এলাকায় কাজ করছি। ফলে মাটি চুরি সিন্ডিকেট বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখব। প্রমাণ পেলে অবশ্যই আটক করে আইনের আওতায় আনব।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বাস বিল্ডার্সের দায়িত্বরত কর্মকর্তা প্রকৌশলী মনসুর মোহাম্মদ এই প্রতিবেদককে বলেন, আমরা ৩শ ফুট সড়ক উন্নয়নের কাজ করছি। ফলে এখান থেকে অপ্রয়োজনীয় মাটি ও পাথর সরিয়ে নির্ধারিত স্থানে জমা করে রেখেছি। ওই জমা স্থান থেকে একটি কুচক্রি মহল গোপনে মাটি চুরি করছে বলে অভিযোগ পাচ্ছি। এসব বিষয়ে একাধিকবার রূপগঞ্জ থানা পুলিশকে জানিয়েছি। তারা বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়ে সিন্ডিকেটের কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে। তবে মামলা না দেওয়ায় তারা শুনেছি আইনের আওতায় থাকেনি।
আরও পড়ুন : মান্দায় ভাঙা কালভার্টটি পরিণত হয়েছে মরনফাঁদে
এসব বিষয়ে রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী উজ্জ্বল মল্লিক বলেন, পূর্বাচল দেশের সবচেয়ে বড় পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা। ৬ হাজার ১৫০ একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত ওই প্রকল্পে ২৬ হাজার প্লট ও ৬২ হাজার ফ্ল্যাট তৈরি করা হচ্ছে। এখানে বিভাগীয় ঠিকাদার ও কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট এলাকা দেখভাল করে থাকেন। সেখানে মাটি চুরি বিষয়ে সংবাদ পেয়েছি। কোন অবস্থাতেই পূর্বাচল প্রকল্পের মাটি শহরের বাইরে বিক্রি বা নেওয়ার নিয়ম নেই। এসব কাজে জড়িত কোন কর্মকর্তার অবস্থান প্রমাণিত হলে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেব। তাছাড়া পুরো প্রকল্পের মাটি ও গাছ চুরি রোধে রাজউক চেয়ারম্যান মহোদয়কে জানিয়ে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইতোমধ্যে তিনি সংশ্লিষ্ট দায়িত্ব প্রাপ্তদের সজাগ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
ওডি/এফই
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড