• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ঝালকাঠিতে নদীর তীব্র ভাঙনে বিলীন হচ্ছে তীরবর্তী এলাকা

  আতিকুর রহমান, ঝালকাঠি

০৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৫:৩৪
ঝালকাঠি
নদীর ভাঙন (ছবি : দৈনিক অধিকার)

উজান থেকে নেমে আসা বন্যার পানির স্রোত বাড়ার সাথে সাথে ভয়াবহ হয়ে উঠেছে ঝালকাঠির সুগন্ধা ও বিষখালী নদীর ভাঙন। মানচিত্র থেকে কয়েকটি ইউনিয়ন মুল মানচিত্র হারাতে বসেছে। কয়েক যুগ ধরে ভাঙনের ফলে হাজার হাজার একর জমি নদীতে বিলীন হয়ে লক্ষাধিক মানুষ তাদের ভিটামাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে।

কিছু পরিবার সরকারি খাস জমি বরাদ্ধ পেলেও সরকারি নিয়ম নীতির ধাপ অনুসরণ করতে না পারায় নিজ দেশে যেন পরবাসী হয়ে আছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু গ্রাম নদী ভাঙনে হারিয়ে গেছে। বিষখালী নদীর ভাঙনে মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) ঝালকাঠির পশ্চিম দেউরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেন্টারের অর্ধেকটা নদীতে হঠাৎ করে বিলীন হয়ে গেছে।

এই নদী ভাঙনের দৃশ্য ফেসবুকে লাইভ দেখানোর সময় এক এসএসসি পরীক্ষার্থী নদীতে পড়ে নিখোঁজ হয়েছে। ১০ দিনেও তাকে উদ্ধার করা যায়নি।

নদী ভাঙন (ছবি : দৈনিক অধিকার)

এদিকে পেনাবালিয়া ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী অংশ অব্যাহত ভাঙনের মধ্যেও অবৈধ বালু উত্তোলন থেমে নেই। অভিযোগ রয়েছে প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের ম্যানেজ করেই অসাধু ব্যবসায়ীরা নিয়ম বহির্ভূত বালু উত্তোলন করে আসছে। ভাঙন কূল থেকে মাটি কেটে ইট ভাটা নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।

এদিকে ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার মঠবাড়ী ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিদ্যালয়ের বাকি অংশসহ বাদুর তলা বাজারের সম্পূর্ণ বিলীন হওয়ার আশংকা করছে এলাকাবাসী। হুমকির মুখে রয়েছে বিষখালীর তীরবর্তী বড়ইয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, বড়ইয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাঠবড়ী ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র, কয়েকটি বাজার, বেশকিছু বসতবাড়ী, মসজিদসহ অসংখ্য স্থাপনা ও ফসলি জমি।

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন নদী ভাঙন থেকে জেলার বিভিন্ন স্থাপনা রক্ষার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

নদী ভাঙনের ফলে ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, ঝালকাঠির সুগন্ধা ও বিষখালী নদীর ভাঙনে পৈত্রিক ভিটা মাটি হারিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। ভাঙনে সব হারিয়ে কোন সহায়তা না পেয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রিত হয়ে থাকতে হচ্ছে অনেককে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বিষখালীর ভাঙনে পশ্চিম দেউরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেন্টারের অর্ধেকটা ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। রাজাপুর উপজেলার মঠবাড়ী ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাংশ এবং একটি মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা, ফসলি জমি, বেশকিছু বসতবাড়ি, অসংখ্য গাছপালা, কয়েকশ মিটার সড়ক নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গছে।

যেকোন মুহূর্তে অবশিষ্ট অংশ আকস্মিক ভাঙনে হারিয়ে যাবে এমন আশংকায় স্থানীয়দের ঘুম হারাম হয়েছে। কখন নদীর করাল গ্রাসে হারিয়ে যায় জমি-জমার সাথে তাদের সপ্ন। হুমকির মুখে রয়েছে নদী তীরবর্তী বড়ইয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, বড়ইয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মঠবাড়ী ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র, মানকি সুন্দর সাইক্লোন সেন্টার, লঞ্চ টার্মিনাল, বাজার, সড়ক, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তিন শতাধিক বসতবাড়ি, মসজিদ, কয়েকশ একর ফসলী জমি ও গাছপালাসহ বেশ কিছু স্থাপনা।

করোনার কারনে ছুটি থাকায় সমস্যা বোঝা না গেলেও ছুটি শেষে বিদ্যালয়গুলো দুটির কয়েকশ শিক্ষার্থীর পড়াশুনা অনিশ্চিত হয়ে পরার আশংকা রয়েছে। দুর্যোগের সময় সাইক্লোন সেন্টারের পার্শ্ববর্তী লোকজনকে আশ্রয় নেয়ার সুযোগও থাকছে না। বিভিন্ন সময় পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করলেও প্রতিরোধের কোন কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।

ঝালকাঠির পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) রাকিব হোসেন জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে জেলায় মোট ১৫ কিলোমিটার নদী ভাঙন প্রবণ এলাকা রয়েছে। বেশকিছু এলাকায় ভাঙন প্রতিরোধে কাজ শুরু হয়েছে। ডিপিপি অনুমোদন সাপেক্ষে বিভিন্ন স্থানে ভাঙন রোধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

আরও পড়ুন : রাজাপুরে খাল ভরাটে চাষাবাদ বন্ধ হওয়ার অভিযোগ

ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক জোহর আলী বলেন, নদী ভাঙন রোধে স্থায়ী বাধ দিতে হবে। অস্থায়ী বাধ দিয়ে ভাঙন রোধ করা যাবে না। ভাঙন রোধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হবে।

ওডি/এফই

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড