এস এম ইউসুফ আলী, ব্যুরো প্রধান (ফেনী)
করোনা চিকিৎসায় ২০ শয্যার হাসপাতালটি প্রস্তুত করা হয় ৯ মাস আগে। অন্যান্য সরঞ্জামের পাশাপাশি বসানো হয় সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্টও। কিন্তু একজন রোগীও ভর্তি হননি। পড়ে আছে সব সরঞ্জাম। পদায়ন করা চিকিৎসক-নার্সরা আসেননি এক দিনের জন্যও। এ চিত্র ফেনীর সোনাগাজীর উপজেলার মঙ্গলকান্দি করোনা হাসপাতালের।
গত বছরের জুলাই মাসে ২০ শয্যার হাসপাতালটি প্রস্তুত করা হয় করোনার চিকিৎসার জন্য। ৩ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থার উদ্বোধন করা হয়।
হাসপাতালে কেন রোগী আসেন না, এমন প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্য বিভাগের ভাষ্য, বাসিন্দারা করোনায় আক্রান্ত হলেও হাসপাতালে আসতে চান না। আর জনপ্রতিনিধিদের দাবি, প্রয়োজনীয় জনবল না দেওয়ায় হাসপাতালটি চালু হলেও রোগীদের কোনো কাজে আসছে না।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, দেশে করোনা আক্রান্তের হার বাড়ার পর উপজেলায় গঠিত করোনা নির্মূল কমিটির সিদ্ধান্তে গত বছরের ৪ মার্চ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫ শয্যা এবং ২০ শয্যার মঙ্গলকান্দি হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিট খোলা হয়। এরপর কর্তৃপক্ষে সিদ্ধান্তে এটিকে করোনা হাসপাতাল ঘোষণা করা হয়।
আরও পড়ুন : সীতাকুণ্ডে অবাধে চলছে কৃষি জমির মাটি বিক্রি
জুলাই মাসে উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে সাড়ে আট লাখ টাকা ব্যয়ে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় বসানো হয় হাসপাতালটিতে ১০ শয্যার সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট। প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও অবকাঠামো উন্নত করা হয়। এখন সব তালাবদ্ধ হয়ে পড়ে আছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলেও উপজেলায় করোনা হাসপাতালে কোনো রোগী ভর্তি তো দূরের কথা, চিকিৎসা নিতেও যাননি কেউ।
হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট পড়ে থাকায় এটি নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা ঠিক রয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের মতে, প্রতি মাসে অন্তত একবারও ব্যবহার না করলে পাইপলাইনে ময়লা ও কার্বন জমে এটি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্র জানায়, সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট উদ্বোধনের সময় রোগী ভর্তি ও চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য তিন ধাপের প্রতি ধাপে একজন চিকিৎসকের সমন্বয়ে নার্স, পরিচ্ছন্নতা কর্মীসহ ৫ জন করে ১৫ জন চিকিৎসক-কর্মচারীর মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছিল। কিন্তু হাসপাতালে রোগী ভর্তি না হওয়ায় ওই দায়িত্ব বণ্টন শুধু কাগজে থেকে যায়। তারা কেউ যোগ দেননি।
উপজেলা সদর থেকে সাত কিলোমিটার দূরে ডাকবাংলো এলাকায় এ হাসপাতাল। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় নারী ও পুরুষদের জন্য আলাদাভাবে প্রস্তুত করা করোনা ইউনিটে কোনো রোগী নেই। গেটে ও কক্ষগুলোর দরজায় তালা লাগানো।
উপজেলার মঙ্গলকান্দি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন বাদল জানান, রোগীদের চিকিৎসায় কোনো ধরনের জনবল ও চিকিৎসক-কর্মচারী না দিয়ে শুধু সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা স্থাপন করা সরকারি অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়। তিনি হাসপাতালটিতে জনবল দিয়ে সেবা কার্যক্রম চালু করার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করেন।
জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা উৎপল দাশ বলেন, রোগীরা হাসপাতালে না এসে বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে উঠছেন। উপসর্গ থাকার পরও জনসাধারণের মধ্যে অসচেতনতার কারণে নমুনা দিতে চান না।
আরও পড়ুন : সীতাকুণ্ডে অবাধে চলছে কৃষি জমির মাটি বিক্রি
তারপরও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত করোনা হাসপাতালটি প্রস্তুত রাখা হবে। যখনই কোনো রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে চাইবেন, তাৎক্ষণিক তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে পারবেন বলে জানান তিনি।
সোনাগাজী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন করোনা হাসপাতালের জন্য আলাদা জনবল দাবি করে বলেন, জনবল না দেওয়ায় এখন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করতে হচ্ছে।
ফেনীর ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. এস এস আর মাসুদ রানা বলেন, রোগী বাড়লে জনবলের সমন্বয় করে চিকিৎসাসেবা দেওয়া শুরু করা হবে।
ওডি/হাসান
সম্পাদক: মো: তাজবীর হোসাইন
সহযোগী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118241, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড