আবুল হাসান ও জাবেদ শেখ
২০১৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত অপরাধধর্মী থ্রিলার চলচ্চিত্র ‘আয়নাবাজি’র মতই ঘটনা ঘটেছে শরিয়তপুরে। নামের গরমিল করেই কারাগার থেকে পালালো আসামি। আর এই গরমিলের কোন কূলকিনারা করতে পারছে না কর্তাব্যক্তিরা। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে গত ৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় শরিয়তপুর জেলা কারাগারে।
লিটন সিকদার পেয়েছেন জামিন। সেই জামিনের কাগজে বেরিয়ে গেলেন লিটন ফরাজী। একজনের পরিবর্তে আরেক জন বের হয়ে যাওয়ার পেছনে কার হাত রয়েছে তা ঘটনার তিনদিন পরেও আড়ালেই রয়ে গেছে।
ঘটনার সূত্রপাত ৪ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টা। শরিয়তপুর কারাগারে জামিন হওয়া আসামিদের মুক্তি দেয়া হচ্ছে। জামিনের কাগজ আদালত থেকে কারাগারে আসার পর তা যাচাই করা হয় সবার আগে। পরে জামিন পাওয়া আসামিকে হাজির করে নথির সঙ্গে মিলিয়ে নেয়া হয়। সবশেষে দেয়া হয় মুক্তি। গুরুত্বপূর্ণ এ কাজটি করে থাকেন তিনজন। জেলার, ডেপুটি জেলার এবং কারারক্ষী থেকে একজন।
সেদিন কারা বিধি মোতাবেক দুইজন আসামি মুক্তি পায় শরিয়তপুর কারাগার থেকে। তার মধ্যে একজন হচ্ছেন লিটন ফরাজী। যিনি কৌশলে লিটন সিকদারের জামিনের কাগজ দেখিয়ে মুক্তিপান।
এর আগে শরীয়তপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে গোসাইরহাট থানার একটি চুরির মামলায় লিটন সিকদারকে জামিন দেওয়া হয়। আর খুলনা ও রাজবাড়ীর মামলায় লিটন সিকদার জামিনে থাকলেও লিটন ফরাজি জামিনে ছিলেন না। অথচ লিটন সিকদারকে না ছেড়ে লিটন ফরাজিকে মুক্তি দেয়। আর লিটন সিকদারকে আটক রাখে।
শরীয়তপুর কারাগার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, লিটন ফরাজীর (২৮) গ্রামের বাড়ি বরিশাল জেলার উজিরপুর থানার দামুরকাঠি গ্রামের আবদুর রব ফরাজির ছেলে। ঢাকার বাসাবোর বাসিন্দা। আর লিটন সিকদার খুলনার খালিশপুরের আনোয়ার সিকদারের ছেলে। এ দুজনেই গোসাইরহাট থানার একটি চুরির মামলায় কারাবন্দি। এ দুজনই রাজবাড়ী ও খুলনার আরও দুটি মামলার আসামি। গত ১১ মার্চ তাদের শরীয়তপুর জেলা কারাগারে আনা হয়।
এ ঘটনায় কারারক্ষী মো. ইব্রাহিমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি ঘটনার সঙ্গে যুক্ত কারাগারের জেলার আমীরুল ইসলাম ও ডেপুটি জেলার হোসেনুজ্জামানের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।
এদিকে, কারা কর্তৃপক্ষ ঘটনাটি তদন্ত করার জন্য বরিশাল বিভাগের ডিআইজি (প্রিজন) টিপু সুলতানকে প্রধান করে তিন সদস্যর একটি কমিটি গঠন করেছে। মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) তারা শরীয়তপুর জেলা কারাগার পরিদর্শন করে ঘটনাটির তদন্ত শুরু করেছেন।
লিটন সিকদারের স্বজনেরা বিষয়টি নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। তখন তাদের নজরে আসে নামের ভুলে লিটন ফরাজি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। পরে সোমবার রাতে লিটন সিকদারকে জেলা কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।
জামিনে মুক্তি পাওয়া লিটন সিকদার বলেন, তারা দুজন একই মামলার আসামি। রোববার লিটন ফরাজিকে ছেড়ে দেয়ার সময় তিনি কারা কর্তৃপক্ষকে বলেছিলেন, অন্য মামলায় লিটন ফরাজির জামিন নেই। কিন্তু তার সব মামলায় জামিন আছে। অথচ কারারক্ষীরা তা না শুনেই লিটন ফরাজিকে মুক্তি দিয়ে দেয়।
লিটন ফরাজীকে ঢাকা, শরীয়তপুর ও বরিশালে হন্যে হয়ে খুঁজছেন কারা পুলিশ। মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) দুপুর পর্যন্ত আসামিকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় গত সোমবার থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে শরীয়তপুর জেলা কারাগার কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া শরীয়তপুরের জেল সুপার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে কারা মহাপরিদর্শককে জানিয়েছেন।
শরীয়তপুর কারাগারের জেলার (ভারপ্রাপ্ত) আমিরুল ইসলামের পালং মডেল থানায় করা জিডির আবেদনে বলা হয়েছে, ৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় তিনি দুজন আসামিকে বিধিমোতাবেক মুক্তি দেন। কিন্তু দাপ্তরিক অনিচ্ছাকৃত ভুলের কারণে লিটন সিকদার সেজে প্রতারণা করে কারাগার থেকে বেরিয়ে গেছেন লিটন ফরাজী।
আরও পড়ুন : ভোলায় ক্ষতিপূরণের দাবিতে কৃষকদের মানববন্ধন
শরীয়তপুর কারাগারের জেল সুপার গোলাম হোসেন ৫ এপ্রিল কারা মহাপরিদর্শককে একটি চিঠি পাঠান। সেখানে বিষয়টিকে জামিনে ভুল মুক্তি বলে উল্লেখ করা হয়।
চিঠিতে জানানো হয়, লিটন সিকদারের (বাবা আনোয়ার হোসেন সিকদার) পরিবর্তে হাজতি লিটন ফরাজী (বাবা আবদুর রব ফরাজী) শরীয়তপুর কারাগার থেকে বেরিয়ে গেছেন। এ ঘটনায় জেলার ও ডেপুটি জেলারের বিরুদ্ধে কারা বিধিমোতাবেক লিখিত ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে শরীয়তপুর কারাগারের জেল সুপার গোলাম হোসেন বলেন, অসতর্কতার কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে। কারারক্ষী মো. ইব্রাহীমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। কীভাবে এ ঘটনাটি ঘটেছে তার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে কারাগারের জেলার আমীরুল ইসলাম ও ডেপুটি জেলার হোসেনুজ্জামানের কাছ থেকে। আর ওই দিন দায়িত্বে থাকা সহকারী কারারক্ষী ডি এম কালাম, কারারক্ষী মনিরুল ইসলাম ও উজ্জল মিয়ার কাছে কৈফিয়ত তলব করা হয়েছে। তাদের ব্যাখ্যা পেলে তা উপরে পাঠানো হবে। তারাই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।
ওডি/এএইচ
সম্পাদক: মো: তাজবীর হোসাইন
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118241, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড