এস এম ইউসুফ আলী, ব্যুরো প্রধান
ফেনীর আলোচিত মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির (১৮) গায়ে অগ্নিসংযোগের দুই বছর পূর্ণ হয়েছে। ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামীয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে আলিম পরীক্ষা দিতে গিয়ে এ বর্বরতার শিকার হন তিনি।
ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা তুলে নিতে রাজি না হওয়ায় হল থেকে ডেকে পাশের ভবনের ছাদে নিয়ে গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে তাকে হত্যার চেষ্টা চালায় সহপাঠিরা । এতে ওই সময় তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যায়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৪ দিন চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ৯ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় মৃত্যুবরণ করে নুসরাত।
এরপর ১০ এপ্রিল বিকালে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে সোনাগাজী মোহাম্মদ ছাবের সরকারি মডেল পাইলট হাইস্কুল মাঠে নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
সোমবার (৫ এপ্রিল) এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বলেন, আমরা বিচারিক আদালতে ন্যায় বিচার পেয়েছি। শুনেছি উচ্চ আদালতে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা আপিল করেছেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আসামিদের ফাঁসির রায় দ্রুত কার্যকরের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
আইনমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন ১০ এপ্রিল নুসরাত দিবস পালন করা হবে। কিন্তু গত বছর পালন হয়নি। এই বছর থেকে হলেও এই দিবস পালনের দাবি জানাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমাদের নিরাপত্তার জন্য বাড়িতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান জানান, আমরা বিচারিক আদালতে ন্যায় বিচার পেয়েছি। উচ্চ আদালতেও আমরা ন্যায় বিচারের প্রত্যাশী। আমাদের পরিবারের জন্য খুনিরা ও তাদের স্বজনরা তাদের ফেসবুকে হুমকি দিচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে যা ইচ্ছা তাই লিখে যাচ্ছে। আমাদের জন্য খুনি ও তাদের স্বজনদের ব্যবহৃত ফেসবুকই হচ্ছে চরম আতঙ্ক।
তিনি আরও জানান, আমরা এই মামলার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে কিছুই জানি না। তবে কিছুদিন পূর্বে আমাদের আইনজীবী শাহাজাহান সাজুর মাধ্যমে জেনেছি করোনা পরিস্থিতির কারণে মামলাটির বেঞ্চ গঠনে বিলম্ব হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ নিজ প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা কর্তৃক যৌন নিপীড়নের শিকার হন রাফি। ওই ঘটনায় তার মা বাদি হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্ দৌলাকে একমাত্র আসামি করে মামলা দায়ের করেন। একই দিন পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। ওই মামলা তুলে নিতে অধ্যক্ষের অনুসারী ওই মাদরাসার ছাত্ররা নুসরাত ও তার পরিবারের সদস্যদের চাপ দিতে থাকে।
২০১৯ সালের ৩ এপ্রিল খুনিরা অধ্যক্ষ সিরাজের সঙ্গে কারাগারে পরামর্শ করে এসে ৪ এপ্রিল মাদরাসার ছাত্রাবাসে নুসরাতকে খুন করার পরিকল্পনা নেয়। এরই প্রেক্ষিতে ৬ এপ্রিল আলিম পরীক্ষা দিতে গেলে পরিকল্পিতভাবে মাদরাসা সংলগ্ন সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা চালায়।
ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হওয়ায় সেখান থেকে নুসরাতকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়।
এ ঘটনায় নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে ওই বছরের ৮ এপ্রিল মামলা দায়ের করেন। ৯ এপ্রিল মারা যান নুসরাত। ওই মামলায় ২৮ মে অভিযোগপত্র দাখিলের পর ২০ জুন অভিযোগ গঠন করেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল।
পরে সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শেষে ৩০ সেপ্টেম্বর আদালত রায়ের জন্য ২৪ অক্টোবর তারিখ নির্ধারণ করেন। মাত্র ৬১ কার্যদিবসে মামলাটিতে ৮৭ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক গ্রহণ শেষে ১৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়।
একই বছরের ২৪ অক্টোবর এ রায় দেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ। পাশাপাশি প্রত্যেক আসামিকে এক লাখ টাকা করে অর্থ দণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
বাদীপক্ষের আইনজীবী এম. শাহজাহান সাজু বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ হলে তা অনুমোদনের জন্য মামলার যাবতীয় কার্যক্রম উচ্চ আদালতে পাঠাতে হয়। সে অনুসারে ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর আসামিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য (ডেথ রেফারেন্স) মামলার যাবতীয় কার্যক্রম হাইকোর্টে পৌঁছে।
অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক (মামলার যাবতীয় নথি) ছাপানোও শেষ করা হয়েছিল। পরে প্রয়োজনীয় কাজ শেষে শুনানির জন্য মামলাটি প্রধান বিচারপতি বরাবর উপস্থাপন করা হয়। আপিল অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানির জন্য বেঞ্চ গঠন করেছিলেন প্রধান বিচারপতি।
বিচারপতি হাসান ইমাম ও সৌমেন্দ্র সরকার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে এ মামলার শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে সে বেঞ্চ করোনার কারণে বাতিল হয়ে গেছে। এরপর আর বেঞ্চ গঠন হয়নি। তাই মামলাটি এখনও শুনানি হচ্ছে না। করোনাভাইরাসের সংকটময় পরিস্থিতি কেটে গেলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানি হবে।
সম্পাদক: মো: তাজবীর হোসাইন
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118241, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড