এম,ডি অসীম, খুলনা
নিবিড় পরিচর্যার পর অবশেষে সুস্থ হয়েছে বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে লালিত জুলিয়েট। দীর্ঘ ২৬ দিন নিবিড় পরিচর্যা ও চিকিৎসার পর শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) জুলিয়েটকে অবমুক্ত করা হয় করমজলের প্রজনন কেন্দ্রে। অবমুক্ত হওয়ার পরেই অন্যান্য বন্ধুদের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ায় জুলিয়েটের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা কেটে যায়। এতে নিশ্চিন্ত হন কর্মকর্তারা।
গত ২৩ জানুয়ারি সুন্দরবনের প্রজনন কেন্দ্র করমজলের কুমির জুলিয়েট প্রাণী শিকার করে খাবারের চেষ্টা করলে পিছন থেকে কুমির পিলপিল জুলিয়েটকে আক্রমণ করে। এতে গুরুতর আহত হয় জুলিয়েট। জুলিয়েটকে উদ্ধার করে একটি শুকনো প্যানে রেখে চিকিৎসা শুরু করেন প্রাণী বিশেষজ্ঞ আজাদ কবির।
জানা যায়, সুন্দরবনের করমজলের একমাত্র বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের একটি পুকুরে কুমির জুলিয়েট, পিলপিল ও রোমিও বসবাস করতো। প্রজননের জন্য ২০১৮ সালে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্ক থেকে পুরুষ কুমির আলেকজান্ডারকে আনা হয় স্ত্রী কুমির পিলপিল ও জুলিয়েট’র জন্য। এ ৩টি কুমির এক সাথে পুকুরে বসবাস করছে।
বন বিভাগের পর্যটক স্পট করমজলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির বলেন, স্ত্রী কুমির পিলপিল ও জুলিয়েটের মধ্যে তাদের বন্ধু আলেকজান্ডারকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এরই মধ্যে জুলিয়েটের সঙ্গে পুরুষ কুমির আলেকজান্ডারের বন্ধুত্বের সম্পর্কটা গভীর হওয়ায় প্রায়ই জুলিয়েটকে আড় চোখে দেখতো পিলপিল।
পুকুরের মধ্যে এ দুই কুমিরের সাথে মারামারি লেগেই থাকতো। গত ২৩ জানুয়ারি সকালের দিকে জুলিয়েট একটি বানরকে শিকার হিসেবে কাছে পেয়ে পাড় থেকে টেনে পুকুরের মাঝে নিয়ে যায়। এ সময় অন্য স্ত্রী কুমির পিলপিল পিছন থেকে জুলিয়েটের উপর আক্রমণ করে। এতে জুলিয়েট’র শরীরে প্রায় ১১ ইঞ্চি লম্বা এবং দেড় ইঞ্চি গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়।
দীর্ঘ ২৬ দিন নিবিড় পরিচর্যা ও চিকিৎসার পর স্ত্রী কুমির জুলিয়েটকে সুস্থ করে তোলা হয়েছে।
শুক্রবার অবমুক্তের সময় ভয় হচ্ছিল পূর্বের ঘটনা পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে পিলপিল জুলিয়েটকে আঘাত করতে পারে। কারণ পূর্বেই জুলিয়েটের সঙ্গে পুরুষ কুমির আলেকজান্ডার এর বেশি সম্পর্ক ছিল। ২৬ দিন পর পুকুরে ছাড়ার পর পিলপিল এবং জুলিয়েটের সম্পর্ক কোন দিকে দাড়ায় তা নিয়ে শঙ্কা ছিল কর্মকর্তাদের মাঝে।
জুলিয়েটকে ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পিলপিল জুলিয়েটের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে আক্রমণ করে। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে ঘটলো নতুন দৃশ্য। দুই কুমিরের মারামারির মধ্যে আলেকজান্ডার মাঝখানে ভেসে উঠলো এবং মাথা নাড়ার সাথে সাথে জুলিয়েট এবং পিলপিল আলাদা হয়ে দুইদিকে চলে গেল।
আলেকজান্ডার প্রথমে জুলিয়েটের কাছে কিছু সময় কাটিয়ে পরে পিলপিলের কাছে গিয়ে সময় দিয়েছে বলে জানান আজাদ কবির। তবে মনে হচ্ছে দুই কুমিরের আদর সোহাগে তাদের সংসার ভালই চলছে। বর্তমানে দুই কুমির এক জায়গায় না থাকলেও তাদের মধ্যে কোনও গোলমাল নেই, অবমুক্ত করার পর এখন পর্যন্ত তারা সবাই ভালো আছে বলে জানান প্রজনন কেন্দ্রের এ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন : তিন দাবিতে ভোলায় নার্সিং শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ সভা
উল্লেখ্য, ২০০২ সালে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজলে বন বিভাগের উদ্যোগে ৮ একর জমির ওপর সরকারি ভাবে গড়ে তোলা হয় দেশের একমাত্র বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রটি। নোনা পানির কুমির সাধারণত ৬০-৬৫ বছর পর্যন্ত ডিম দিতে পারে। আর বেঁচে থাকে ৮০-১০০ বছর পর্যন্ত।
সম্পাদক: মো: তাজবীর হোসাইন
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118241, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড