এম মোবারক হোসাইন, পঞ্চগড়
ছবিটি না দেখলে হয়তো ঘটনাটি বিশ্বাস করাই ছিল খুব দুষ্কর। যেমন অনেকে প্রাসাদে থেকেও জীবনে সুখী হতে পারে না। ঠিক তেমনই আবার অনেকে কুঁড়েঘরে থেকেও অত্যন্ত সুখের মধ্যে দিয়েই দিন কাটাচ্ছেন। অর্থাৎ মানুষের জীবন বড় অদ্ভুত নিয়ম-নীতির মধ্যে দিয়ে বাধা আছে।
আজকের অসহায় এ বৃদ্ধ দম্পতি হচ্ছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বুড়বুড়ি ইউনিয়নের গড়াগছ গ্রামের কফিলউদ্দীন (৭০) ও স্ত্রী সুফিয়া বেগম। কনকনে শীত আর ঠাণ্ডা বাতাস থেকে মুক্তি পেতে শাড়ির আঁচল আর ছেড়া কাঁথাই যেন তাদের শান্তির পরশ। সামনে বর্ষায় তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু নিয়ে চিন্তায় ভুগছে ওই দম্পতি। এ যেন অন্য এক মানবেতর জীবনযাপন কফিল উদ্দিনের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙা বেড়ার টিনের ছাপরার ছোট্ট একটি ঘর। ঘরের চালে কোথাও কোথাও ছিদ্র। ছিদ্র গলে শীতের কুয়াশার শিশির আর বর্ষার বৃষ্টি পড়ার উপক্রম লক্ষ্য করা যায়। পাশে অ-স্বাস্থ্যকর টয়লেট। ঘরের বারান্দা বসে থাকতে দেখা যায় এ অসহায় দম্পতিকে। পড়নে হালকা পাতলা কাপড়ে ঠাণ্ডায় সারা শরীর থরথর করে কাঁপছিল তাঁদের। এ ঘরের সামান্য দূরে একমাত্র ছেলে শরিফুলের ঘর। পেশায় সে দিনমজুর। সংসারের অভাব অনটনের কারণে একমাত্র সন্তানকে পড়ালেখা করাতে পারেননি কফিল উদ্দিন। বিয়ে করে দুই সন্তানের বাবা হয়েছে সেও। দিনমুজুর হিসেবে অন্যের বাড়িতে কাজ করে সামান্য আয়ে চালিয়ে নিতে হচ্ছে পরিবার।
এ ব্যাপারে ছেলে শরিফুল জানান, এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ৭/৮ বছর আগে এ ঘরটি তৈরি করেছি। অন্যের বাড়িতে কাজ করে মা-বাবা, স্ত্রী সন্তানসহ ৬ সদস্যের পরিবার চালাতে হয়। যেখানে খাবারের টাকাই জুটে না সেখানে ঘর মেরামত করার মত কোন টাকা পয়সা পাবো কোথায়। খুব কষ্টে দিন যাচ্ছে। বাবা শীত সহ্য করতে না পেরে রাতে ছেড়া কাঁথা শাড়ির আঁচলে ঘুমায়। রাতে শীতের যন্ত্রণায় মা-বাবার ঘুম হয় না। সরকার আমার বাবাকে একটি ঘর দিলে আমি চির কৃতজ্ঞ থাকব।
কফিল উদ্দিন জানান, শুনেছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ভূমিহীনদের ঘর করে দিচ্ছে। কিন্তু সেই ঘর জুটেনি আমার ভাগ্যে। আমার কোন সহায় সম্পত্তি নেই, মাত্র ৩ শতক জমির উপর পলিথিনে মোড়ানো কুঁড়ে ঘরে আছি। আর সন্তানের প্রতিদিনে রোজগারের টাকায় আমার ওষুধসহ সংসারের অন্যান্য খরচ চলে।
কফিল উদ্দিন কেঁদে কেঁদে বলেন, আমরা অনেক সময় না খেয়েও দিন কাটাই। কিন্তু কোন ব্যক্তিকে আমাদের কষ্টের কথা বুঝতে দেই না, আর বলেই বা কি লাভ। কোন ইউপি সদস্য, ইউপি চেয়ারম্যান আমাদের সহযোগিতা করে নাই। ‘মজুরি‘ দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব হয় না বলেই হয়তো তারাও নজর দিচ্ছেন না।
আরও পড়ুন : রাঙ্গুনিয়ায় বই মেলায় ২০টাকায় বই
স্থানীয় বুড়বুড়ি ইউপি চেয়ারম্যান তারেক হোসেন জানান, কফিল উদ্দিন সাহেবের বাড়িতে গিয়েছিলাম। দেখেছি উনি একজন অসহায় মানুষ, উনাকে সরকারি ভাবে ঘর নির্মাণ করে দেয়ার ব্যাপারে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। বরাদ্দ আসলেই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেয়া হবে বলে আশা করছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহাগ চন্দ্র সাহা জানান, আমরা তো এমন পরিবারই খুঁজে থাকি। যেখানেই এমন অসহায় লোক আছে তাদের তথ্য সংগ্রহ করে সরকারি ঘর নির্মাণ করে দিয়ে থাকি। কফিল উদ্দিনকে ঘর নির্মাণ করে দেয়া হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সম্পাদক: মো: তাজবীর হোসাইন
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118241, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড