• বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩, ১৫ চৈত্র ১৪২৯  |   ২৪ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

শিকল পায়ে সাহিদার এক যুগ, দেখার যেন কেউ নেই

  শুভংকর পোদ্দার, হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ)

২৭ জানুয়ারি ২০২১, ০৮:৫৭
সাহিদা বেগম
মানসিক রোগে আক্রান্ত সাহিদা বেগম গত ১৫ বছর ধরে এভাবেই পৃথিবী দেখছেন। (ছবি : দৈনিক অধিকার)

এক যুগেরও অধিক সময় ধরে পায়ে শিকল বাঁধা জীবন কাটছে তার। দীর্ঘ ১৫ বছর আগে মাথায় সমস্যা দেখা দিলে পাবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করেও কোন সুরাহা মেলেনি।

সেখান থেকে বাড়িতে এনে বারান্দার ছোট্ট একটি কক্ষেই দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে প্রায় ৩০ হাত লম্বা একটি শিকল পায়ে তালা লাগানো অবস্থাতে রাখতে হয়েছে সাহিদা বেগমকে (৪৮)। নানা রকম বিপদের কথা চিন্তা করেই এভাবে বেঁধে রাখতে হয়েছে বলে দাবি স্বজনদের।

ঘটনাটি মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার গালা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের গালা গ্রামের দিন মজুর আমেরুদ্দিন মোল্লার স্ত্রীর। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে দীর্ঘ ১২ বছর যাবত শিকলে বাঁধা অবস্থায় ঘরে বন্দি সাহিদা বেগম। এখন আর টাকার অভাবে সঠিক চিকিৎসা দিতে পারছেন না দিন মজুর আমেরুদ্দিন মোল্লা।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, প্রায় পনের বছর আগে হঠাৎ করেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে তিন সন্তানের জননী সাহিদা বেগম। প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা করালেও তাতে আশানুরূপ ফল হয়নি। দিনে দিনে সমস্যা আরো বেশি দেখা দেওয়ায় পাবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। সেখানে ত্রিশ হাজার টাকা খরচ করে একমাস ভর্তি রাখা হয়। ১ মাস ১৩ দিন পরে ব্যবস্থাপত্র লিখে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়া হয় তাকে। এরপর দীর্ঘদিন ওষুধের যোগান দিতে পারলেও গত ২ বছর যাবত এ খরচ চালাতে পারছেন না দিনমজুর আমেরুদ্দিন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শূন্য বাড়িতে বারান্দার ছোট্ট একটি কক্ষে চৌকির উপর শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে মানসিক ভারসাম্যহীন সাহিদা বেগমকে। বাড়িতে কোনো লোকজন নেই। সাহিদা বেগমের ২ ছেলে ১ মেয়ে। মেয়ের বিয়ে হয়েছে অনেক আগেই। বড় ছেলে স্বপন মোল্লা। কাজ করে মানিকগঞ্জের একটি রেস্টুরেন্টে বাবুর্চি হিসেবে। স্ত্রী সন্তান নিয়ে সে ওখানেই বাসা ভাড়া থাকে। ছোট ছেলে সোহেল মোল্লা ঢাকায় ছাপা খানায় চাকরি করে। তার স্ত্রী সন্তান বাড়িতে থাকলেও বাবা মায়ের কোনো খোঁজ খবর রাখে না। ফলে অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে আমেরুদ্দিন।

তার স্ত্রীর বিষয়ে কথা হলে আমেরুদ্দিন মোল্লা(৫৮) জানান, স্ত্রীর মানসিক অসুস্থতার কারণে আজ ১৫ বছর যাবত আমার সংসারটি এলোমেলো। দিন মজুরের কাজ করেও অনেক টাকা খরচ করে চিকিৎসা করিয়েও কোনো উপকার হয়নি। প্রতি মাসে একহাজার টাকার ওপরে ওষুধ লাগে। যা অন্যের বাড়ি কাজ করে এ বয়সে আমার পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছে না। তাই দুই বছর যাবত আর ওষুধ খাওয়াইতে পারি না। দুই ছেলে বিয়ে করে তারা তাদের মতো আলাদা খায়। আমাগো কোনো খোঁজ খবর রাখে না। আমাকে ঘরে বাইরে সব জায়গায় দেখতে হয়। নিজেই রান্নাবান্না করি। স্ত্রীকে দেখাশোনা করি। আবার মানুষের বাড়ি কামলাও দিতে হয়।

আরও পড়ুন : ৯৯ বছরে নির্মাণ হয়নি একটিও স্মৃতিস্তম্ভ

সাহিদা বেগমের ভাবি বিলকিস জানান, অসুস্থতার আগে বেশ ভাল মানুষ ছিলেন তিনি। মানুষের সাথে খুব ভাল ব্যবহার করত। সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতেন। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে আজ তার এই করুন পরিস্থিতি।

গালা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার শেখ বারেক জানান, সাহিদা বেগমের মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণে দীর্ঘদিন ধরেই পরিবারটি অনেক কষ্টে জীবনযাপন করছে। মূলত সঠিক চিকিৎসার অভাবেই এখনো এই অবস্থায় রয়েছে। রোগীর যে অবস্থা তাতে সঠিক চিকিৎসা করতে পারলে হয়তো ভাল হতো। আমার পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করছি।

এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, মানসিক ভারসাম্যহীন সাহিদা বেগমকে তার পরিবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করলে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড