পুড়ে যাওয়া স্তূপে মিলল পোড়া হাত

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে সৃষ্ট ভয়াবহ সেই অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া স্তূপে একটি পোড়া হাত পাওয়া গেছে।

মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) দুপুরে ওই অগ্নিকাণ্ডের তদন্তে গিয়ে ওই পোড়া হাতটি উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। এছাড়া ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রায় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন।

এলাকাবাসী, ফায়ার সার্ভিস ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার ভোরে কালিয়াকৈর উপজেলায় কালামপুর পূর্বপাড়া রেললাইন পাকার মাথা এলাকায় একই স্থানে চারটি কলোনিতে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ সময় আগুনে দগ্ধ হয়ে স্বামী-স্ত্রীসহ চারজনের মৃত্যু হয়। এছাড়া কমপক্ষে ১৫ জন আহত হন। ঘটনার পরদিন মঙ্গলবার সকালে ওই অগ্নিকাণ্ডের তদন্তে যায় কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিস। পরে দুপুরে পুড়ে যাওয়া স্তূপ থেকে একটি পোড়া হাত দেখতে পেয়ে ফায়ার সার্ভিসকে জানায় স্থানীয় লোকজন। খবর পেয়ে অগ্নিকাণ্ডে নিহত মুন্নি আক্তারের পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। এ সময় পোড়া হাতটি নিহত মুন্নি আক্তারের দাবি করে তার পরিবারের লোকজন নিয়ে গেছে।

কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা কবিরুল আলম জানান, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের ডাইরেক্টর অপারেশন লে. কর্নেল জিল্লুর রহমানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস। মঙ্গলবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার তদন্তে গিয়ে একটি পোড়া হাত উদ্ধার করা হয়। অগ্নিকাণ্ডে নিহত মুন্নির হাত দাবি করে তার পরিবারের লোকজন সেটি নিয়ে গেছে। এছাড়া ফায়ার সার্ভিস বিস্ফোরক দপ্তর ও পৌরসভার অনুমোদন নিয়ে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করতে হলে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র থাকতে হবে। কালিয়াকৈরের কোথাও এটা না থাকায় গ্যাস বিস্ফোরণ হচ্ছে। তবে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত অব্যাহত আছে বলেও জানান তিনি।

কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী হাফিজুল আমিন জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে ওইদিনই নগদ ২০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়েছে। অন্য ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে শুকনো খাবার, কম্বলসহ বিভিন্ন অনুদান দেওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রায় ১ কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

উল্লেখ্য, গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গত সোমবার ভোরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে একই স্থানে চারটি কলোনিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুনে দগ্ধ হয়ে মিলন মিয়া (৩৭) ও তার স্ত্রী মুন্নি আক্তার (৩০), ফরহাদ হোসেন (৩৮) আব্দুল আউয়াল (৪০) নামে চারজন নিহত হন। এরা সবাই স্থানীয় পোশাক কারখানার শ্রমিক ছিলেন। এদের মধ্যে একে অন্যের জীবন বাঁচাতে, কেউ শেষ সম্বলের টাকা ও কেউ জামাকাপড় আনতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে মারা যান। এ সময় দগ্ধ ও আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৫ জন। আগুনে ৬১টি কক্ষ ও কক্ষে থাকা টাকা-পয়সা, বিভিন্ন মালামাল পুড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।