ফেনী প্রতিনিধি
ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার পূর্বচন্দ্রপুর মডেল ইউনিয়নের গজারিয়া শাহ সুফী ছদর উদ্দিন আহমদ (রহ.) ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসায় গ্রন্থাগারিক, আয়া ও নৈশপ্রহরী নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কোন প্রার্থীর কাছে টাকা দাবি এমনকি কারো কাছ থেকে টাকা নিয়ে ফেরতও দেওয়া হয়েছে।
প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদ সভাপতি ও সুপারের যোগসাজশে বিধিবহির্ভূতভাবে নিজপ্রতিষ্ঠান এড়িয়ে অন্যত্র ‘লোকদেখানো’ নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) কোরাইশমুন্সী সিনিয়র মাদরাসায় তিনটি পদে নিয়োগ পরীক্ষা হয়। গ্রন্থাগারিক পদে ২৫ জন, আয়া পদে ৪ জন ও নৈশপ্রহরী পদে ৭জন প্রার্থী ছিলেন।
নিয়োগ পরীক্ষায় গ্রন্থাগারিক পদে ৫, আয়া পদে ৩ ও নৈশপ্রহরী পদে ৫জন অংশ নেন। এদের মধ্যে গ্রন্থাগারিক পদে ছানাউল্যাহ, আয়া পদে আকলিমা আক্তার, নৈশপ্রহরী পদে শাহপরানকে চূড়ান্ত করা হয়।
নিয়োগ বোর্ডের ৫ সদস্যের মধ্যে গভর্নিং বডির সদস্য জয়নাল আবদীন অনুপস্থিত ছিলেন। অন্য সদস্যরা হলেন মাদরাসা পরিচালনা পর্ষদ সভাপতি সিরাজ উদ্দৌলা, সুপার মুহাম্মদ নুরুল আমিন, ঢাকা আলীয়া মাদরাসার সহকারী অধ্যাপক শাহজালাল ও মাদরাসা পরিচালনা পর্ষদ সদস্য সফিকুর রহমান কোম্পানী।
অভিযোগ উঠেছে, আগ থেকেই ছানাউল্যাহ, আকলিমা ও শাহপরানকে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে দফারফা হয়েছে। মাত্র ২ মিনিটে মৌখিক পরীক্ষা শেষ করা হয়। মৌখিক পরীক্ষা না নিয়েও কাগজে-কলমে তা দেখানো হয়। পুরো প্রক্রিয়া ২ থেকে ৫ লাখ টাকায় ব্যবস্থা করে দিয়েছেন সভাপতি সিরাজউদ্দৌলা ও সুপার নুরুল আমিন।
নৈশপ্রহরী পদের প্রার্থী ওমর ফারুক জানান, তাকে নিয়োগ দিতে মাদরাসার সভাপতি ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দাবি করেছিল। নিয়োগ পরীক্ষার আগের দিন ৪ জানুয়ারি (সোমবার) মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সদস্য নুরুল করিমের মাধ্যমে। দুই দফায় ৫০হাজার টাকা জমা দিই। পরে অন্য লোককে নিয়োগ দিয়ে টাকা ফেরত দেয়।
নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেয়া অপর প্রার্থী মোহাম্মদ রায়হান জানান, তার দাদা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে তারই অগ্রাধিকার। অথচ এক প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে পরীক্ষার সময় কেরানী বাবুলের মাধ্যমে উত্তরপত্র লিখতে সহযোগিতা করা হয়।
মীর হোসেন নামের আরেক প্রার্থী জানান, পরীক্ষার সময় এক প্রার্থীকে লিখে দেয়া হয়। পরে শুনি তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মৌখিক পরীক্ষার সময়ও অল্পসময়ে বের করে দেয়া হয়েছে।
ওমর ফারুক জানান, তাকে নিয়োগ দিতে মাদরাসা পরিচালনা পর্ষদ সদস্য নুরুল করিম ৩০হাজার টাকা নিয়েছেন। নিয়োগ দিতে না পেরে পরে সেই টাকা ফেরতও দিয়েছেন।
আয়া পদের প্রার্থী দেলআফরোজ জানান, তার স্বামী নুর হোসেন মাদরাসা পরিচালনা পর্ষদের একজন সদস্য। তার কাছেই মাদরাসার সভাপতি ও সুপার ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দাবী করেছে। মাদরাসার এক সদস্য নুর করিম ৩০হাজার টাকা চেয়েছেন। স্বামী অসুস্থ থাকায় টাকা দিতে না পারায় তার চাকরি হয়নি।
তবে মাদরাসার সুপার মুহাম্মদ নুরুল আমিন এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। অন্য প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কোরাইশমুন্সী সিনিয়র মাদরাসায় দাখিল পরীক্ষা কেন্দ্র হওয়ায় সেখানে নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া হয়েছে।’ তার মতে, এটি বিধিবহির্ভূত হতে পারে কিংবা নাও পারে।
মাদরাসার সভাপতি সিরাজউদ্দৌলাকে বুধবার (৬ জানুয়ারি) একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য জানা যায়নি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আজিজুল হক জানান, বিধিবহির্ভূতভাবে অন্য প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ায় সেটি স্থগিত রাখতে সুপারকে মোবাইল ফোনে নির্দেশনা দেয়া হয়। তিনিসহ মাদরাসা কর্তৃপক্ষ সেটি অমান্য করেছেন।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী সলিম উল্যাহ জানান, এ ধরনের অভিযোগ তিনি পেয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করতে একজনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনদিনের মধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রতিবেদন জমা দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা আক্তার তানিয়া বলেন, এ ধরনের অভিযোগ তিনি মৌখিকভাবে জেনেছেন।
সম্পাদক: মো: তাজবীর হোসাইন
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118241, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড