• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে পৌঁছাচ্ছে চুল্লির যন্ত্রপাতি

  ঈশ্বরদী প্রতিনিধি, পাবনা

২০ ডিসেম্বর ২০২০, ১৩:১৫
রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাম্প হাউজিং পাঠিয়েছে পেট্রযাদস্কমাস (ছবি: রোসাটম)

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের চুল্লির প্রথম ইউনিটে এর জন্য রাশিয়া থেকে যন্ত্রপাতি আসতে শুরু করেছে। প্রকল্প এলাকায় বেশ কিছু ভারী যন্ত্রপাতি এসে পৌঁছেছে। চুল্লির বাকি যন্ত্রপাতিগুলো প্রকল্প এলাকার উদ্দেশে সমুদ্র পথে রয়েছে। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি কর্পোরেশন রোসাটোমের যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারী শাখা অ্যাটোমএনারগোমাশ (এইএম) ও যন্ত্রপ্রকৌশল শাখা জেএসসি এইএম টেকনোলজি পেট্রজাভদস্কমাশ এই যন্ত্রপাতি প্রস্তুত করে পাঠাচ্ছে।

রোসাটোমের বাংলাদেশে নিযুক্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেএসসি এইএম টেকনোলজি পেট্রজাভদস্কমাশ প্রকল্পের দুটি ইউনিটের জন্য ১৪ ধরনের যন্ত্রপাতি প্রস্তুত করবে। এর মধ্যে রয়েছে চুল্লিপাত্র, স্টিম জেনারেটর যন্ত্রাংশ, প্রধান সঞ্চালন পাইপলাইন, প্রধান সঞ্চালন পাম্প, চাপ কমানোর যন্ত্র, জরুরি শীতলীকরণ ব্যবস্থা, টারবাইন হলের জন্য উচ্চ চাপ তৈরির হিটার, ভ্যাকিউম, কনডেনসেট, ফিড পাম্প ও টারবাইন ইউনিটটি পুনরায় গরম করার যন্ত্র। এসব যন্ত্রের মধ্যে রিঅ্যাক্টর ও চারটি স্টিম জেনারেটর রাশিয়া থেকে প্রকল্প এলাকায় এসে পৌঁছেছে। যন্ত্রগুলো রাশিয়ার নভোরোসিস্ক থেকে যন্ত্রগুলো ১৪ হাজার কিলোমিটার সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে এসে পৌঁছালো। পরে সেগুলো নদীপথেই রূপপুর প্রকল্পে আনা হচ্ছে। অ্যাটোমএনারগোমাশের প্রধান নির্বাহী আন্দ্রেই নিকিপেলভ এক মেইল বার্তায় জানান, ভিভিইআর- ১২০০ চুল্লিবিশিষ্ট পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তাব্যবস্থা কল্পনাতীত।

এতে সর্বাধুনিক থ্রি প্লাস প্রজন্মের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে অপারেটরের সহায়তা ছাড়াই নিরাপত্ত ভাবে কাজ করতে পারে। আন্দ্রেই নিকিপেলভ বলেন, গুণগত মানসম্পন্ন যন্ত্রাংশ উৎপাদন ও সেগুলো সময়মত সরবরাহ করাই তাঁদের অগ্রাধিকার। করোনাভাইরাসের কারণে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার মধ্যেও তাঁরা চুক্তির শর্ত অনুযায়ী রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ধাপের চুল্লি যন্ত্রাংশ পাঠাতে পেরেছেন। এ প্রসঙ্গে জানতে যোগাযোগ করা হলে প্রকল্পের পরিচালক মো. শৌকত আকবর বলেন, ইতিমধ্যে প্রকল্পের ৩০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। যন্ত্রপাতি আসছে। নতুন বছরের শুরু থেকেই যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ শুরু হবে। তাঁরা আশা করছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের নকশা ও নির্মাণকাজ রাশিয়ার পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সর্বাধুনিক থ্রি-প্লাস প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রকল্পের দুটি ইউনিটের প্রতিটির উৎপাদনক্ষমতা হবে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। দুই ইউনিট মিলে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন

হবে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। প্রথম ও দ্বিতীয় ইউনিট যথাক্রমে ২০২৩ ও ২০২৪ সাল থেকে কার্যকর হবে। দেশে প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয় ১৯৬১ সালে। ১৯৬২-১৯৬৮ সালে পাবনা জেলার ঈশ্বরদী থানায় পদ্মা নদীতীরবর্তী রূপপুরকে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্থান হিসেবে নির্বাচন করা হয়। এ সময়ই একাধিক সমীক্ষার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের যথার্থতা যাচাই করে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ২৬০ একর এবং আবাসিক এলাকার জন্য ৩২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এরপর পাকিস্তান সরকার প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দিলে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেন। এরপর নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ ঝুলে গেলে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করা হয়। ২০১৭ সালের ৪ নভেম্বর একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের অনুকূলে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নকশা ও কনস্ট্রাকশন লাইসেন্স প্রদান করা হয়। ওই বছর ৩০ নভেম্বর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১ নম্বর ইউনিটের প্রথম কংক্রিট ঢালাইয়ের কাজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। এর মাধ্যমে দেশ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পথে পা দেয় এবং বাংলাদেশ ‘বিশ্ব পারমাণবিক বিদ্যুৎ ক্লাব’–এ ৩২তম দেশ হিসেবে নাম লেখায়।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড