মো. জাবেদ শেখ, শরীয়তপুর
শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ডিঙ্গামানিক ইউনিয়নের রিতা আক্তার (২৫)। অর্থের অভাবে বিনা চিকিৎসায় দীর্ঘ নয় বছর ধরে শিকলে বন্দি জীবন কাটছে তার।
জানা গেছে, উপজেলার ডিঙ্গামানিক ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ডিঙ্গামানিক গ্রামের আলাউদ্দিন দেওয়ানের পাঁচ মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে রিতা চতুর্থ সন্তান। সংসারে একটিমাত্র ছেলে তাও আবার বেকার। তিন বেলা সবার মুখে আহার যোগাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় এতো বড় পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী আলাউদ্দিন দেওয়ানকে।
তার ওপর জেলায় সরকারি হাসপাতাল চিকিৎসক সংকট আর ব্যয়বহুল চিকিৎসা ব্যবস্থার কারণে রিতার চিকিৎসা করানো দরিদ্র বাবার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
সরেজমিনে শনিবার (২১ নভেম্বর) ডিঙ্গামানিক গ্রামের আলাউদ্দিন দেওয়ানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঘরের পাশে একটি ছোট বাঁশের মাচালে শিকল বাঁধা অবস্থায় বসে আছে রিতা। কথা বলছে নিজেই নিজের সাথে।
বাঁশের মাচালের ঠিক পাশেই একটি গাছের সাথে শিকল দিয়ে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে তাকে। বাড়ির লোকজন এবং পাড়া প্রতিবেশীরা বলছেন, লেখাপড়ায় খুব ভালো ছিল রিতা। এলাকার কার্তিকপুর স্কুল থেকে এসএসসির জন্য টেস্ট পরীক্ষাও দিয়েছিল সে।
রিতার বাবা-মা জানান, আমাদের মেয়ের জ্বর হয়েছিল। এরপর থেকেই ও এরকম হয়ে গেছে। অর্থের অভাবে রিতাকে চিকিৎসা করাতে পারিনি। যতটুকু সাধ্য ছিল, তা দিয়ে চিকিৎসা করিয়ে এখন আমরা সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি।
রিতার মা মেহের বানু দৈনিক অধিকারকে বলেন, ‘আমার স্বামীর বয়স বাড়ার কারণে কোন কাজ করতে পারেন না। ঠিকমতো তিনবেলা খাবার জোগাতেই কষ্ট হয়। চিকিৎসা করাবেন কিভাবে? অভাব অনটনের সংসারে একটিমাত্র ছেলে, সেও বেকার।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘রিতার খাওয়া-দাওয়া এবং দেখাশোনা আমাকেই করতে হয়। আমারও বয়স হয়েছে। কখন মরে যাই ঠিক নেই, তখন এই মেয়েকে কে দেখবে?’
টাকার অভাবে চিকিৎসার না হওয়ায় দিনদিন রিতার মানসিক ভারসাম্যের আরও অবনতি হচ্ছে। ফলে ৯ বছর ধরে শিকলে বাঁধা রয়েছে তার স্বপ্নগুলো। যে বয়সে স্বামী-সন্তান নিয়ে শ্বশুরবাড়ি একটি সাজানো সংসার থাকার কথা, সেখানে ভাগ্য তাকে শিকলবন্দি করে রেখেছে। তবে উন্নত চিকিৎসা ও সহযোগিতা পেলে রিতা আক্তার আবারও সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে বলে দাবি স্থানীয়দের।
রিতার স্বজনরা জানান, ‘আমরা গরিব, দিন এনে দিন খাই। অতিরিক্ত কোনো ভালো কিছু খাবার এনে ওকে কোনোদিন খাওয়াতেও পারি না।’
এ বিষয়ে রিতার চাচা মো. সোহরাব দেওয়ান (৪৫) দৈনিক অধিকারকে বলেন, ‘ওরা অনেক অসহায়। টাকার অভাবে অনেক কিছুই করা যায় না। ভালো চিকিৎসা দিতে পারলে হয়তো সে ভালো হয়ে যেত। ওর খাওয়া-দাওয়া জামা কাপড় এগুলোতেও কম খরচ লাগে না। তাই সমাজের বিত্তবানরা যদি ওর জন্য কিছু করত তাহলে হয়তো ওদের কষ্ট থাকত না।’
দিনদিন রিতার মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছে জানিয়ে রিতাকে শিকলে বেঁধে রাখার কারণ হিসেবে তার ভাই অন্তর (২১) জানান, শিকলে বেঁধে না রাখলে আপু মানুষকে মারধর করে। এছাড়াও বিভিন্ন দিকে চলে যেতে চায়। তাই তাকে শিকলে বেঁধে রাখি।
আরও পড়ুন : চরাঞ্চলে পণ্য পরিবহনে একমাত্র ভরসা ঘোড়া ও মহিষের গাড়ি
বিষয়টিতে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক কামাল হোসেন দৈনিক অধিকারকে বলেন, অভিভাবক যদি মেয়েটিকে শিকলে বন্দি করে রাখে, তাহলে আমাদের কিছু করার নেই। রিতাকে চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হলে আমরা হাসপাতাল সমাজসেবা থেকে যাবতীয় ওষুধসহ চিকিৎসা করাতে পারব। সেই সাথে একটা অ্যাকাউন্ট খুলে ভাতার ব্যবস্থাও করব। এর আগে রোকেয়া নামের এক প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে প্রতিবেদন হওয়ার পর এ সকল ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড