• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

শিশু ধর্ষণের অপরাধে মাদ্রাসা সুপারের যাবজ্জীবন

  বাগেরহাট প্রতিনিধি

০৫ নভেম্বর ২০২০, ১৭:৪৬
যাবজ্জীবন
ছবি : সংগৃহীত

বাগেরহাটের শরণখোলায় পঞ্চম শ্রেণির মাদ্রাসা ছাত্রীকে (১১) ধর্ষণের দায়ে মাদ্রাসা সুপার ইলিয়াছ জোমাদ্দারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আদালত একই সাথে তাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন।

বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে সাড়ে ১২টায় বাগেরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. নূরে আলম আসামীর উপস্থিতিতে এই রায় ঘোষণা করেন। এই মামলায় বাদী পক্ষে ১৫ জন এবং আসামী পক্ষে দু’জন মিলিয়ে মোট ১৭জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেন বিচারক।

এই ধর্ষণ মামলায় মাদ্রাসা সুপার ইলিয়াছ জোমাদ্দার (৪৮) একাই আসামী। তিনি বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার উত্তর খোন্তাকাটা রাশিদিয়া স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসার সুপার এবং একই উপজেলার পূর্ব রাজাপুর গ্রামের আব্দুল গফফার জোমাদ্দারের ছেলে। মামলার বরাত দিয়ে রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী বাগেরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ সহকারী কৌসুলি (এপিপি) রনজিৎ কুমার মন্ডল বলেন, ২০১৯ সালের ৮ আগস্ট সকাল সাতটায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে প্রতিদিনের মত ওই মাদ্রাসার পঞ্চম শ্রেণির চার ছাত্রী মাদ্রাসা সুপারের কাছে আরবি শিক্ষা নিতে যায়। পৌনে আটটার দিকে মাদ্রাসা সুপার ইলিয়াছ জোমাদ্দার এক ছাত্রীকে রেখে অন্য তিনজনকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। পরে তিনি ওই ছাত্রীকে মাদ্রাসার লাইব্রেরিতে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এই ঘটনা কাউকে না জানাতে হুমকি দিয়ে মেয়েটিকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন মাদ্রাসা সুপার ইলিয়াছ। অসুস্থ অবস্থায় মেয়েটি মাদ্রাসা থেকে বেরিয়ে বাড়িতে যেয়ে তার মাকে ঘটনা খুলে বলে। অসুস্থ হয়ে পড়া মেয়েটিকে স্থানীয় গ্রাম্য চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা দেয়া হয়।

এই ঘটনার ১১দিন পর ১৯ আগস্ট মেয়েটির বাবা বাদী হয়ে শরণখোলা থানায় মাদ্রাসা সুপার ইলিয়াস জোমাদ্দারের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। এই মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) তদন্তভার দেয়া হলে পিবিআই এর উপ পরিদর্শক (এসআই) আবু সাইয়েদ তদন্তে নামেন। তিনি তদন্তে নামলে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়ানো মাদ্রাসা সুপার ইলিয়াছ জোমাদ্দারকে ঘটনার প্রায় দুই মাস পরে ওই বছরের ১৭ অক্টোবর জেলার ফকিরহাট উপজেলার কাটাখালি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর মাদ্রাসা সুপার ইলিয়াছ ধর্ষণের কথা স্বীকার করে ৩দিন পর আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাইয়েদ তদন্ত শেষে ধর্ষণের সত্যতা পেয়ে ১৩ নভেম্বর মাদ্রাসা সুপার ইলিয়াছের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেন। এরপর আদালতের বিচারক মামলাটিকে আমলে নিয়ে ২০২০ সালের ৯ মার্চ চার্জ গঠন করে। মার্চে দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে আদালতের কার্যক্রম সীমিত হয়ে পড়ে। বর্তমানে আদালতের কার্যক্রম স্বাভাবিক হওয়ায় গত ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২৯ অক্টোবরের মধ্যে আদালতের বিচারক চিকিৎসক, পুলিশ, বাদী ও বিবাদী মিলিয়ে মোট ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। আসামীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হওয়ায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন বিচারক। আসামী পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন আইনজীবী মো. আলী আকবর।

উল্লেখ্য, এর আগে গত ১৯ অক্টোবর এই আদালত মাত্র ৫ কর্ম দিবসে জেলার মোংলা উপজেলার মাকড়ডোন এলাকার সাত বছরের একটি শিশুকে ধর্ষণের দায়ে আব্দুল মান্নান সরদার নামে একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড