নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
ইয়াবার মামলায় নারায়ণগঞ্জ সদর থানার সাবেক ওসি কামরুল ইসলামের জামিন না মঞ্জুর করেছেন আদালত।
৪৯ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধারের মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করা কামরুলের জামিন রবিবার(১ নভেম্বর) নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ মো. আনিছুর রহমানের আদালতে জামিন শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালতের পিপি এসএম ওয়াজেদ আলী খোকন জানান, সাবেক ওসি কামরুলের পক্ষে আইনজীবীরা জামিন আবেদন করে আদালতে শুনানি করেছেন। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আমি জামিনের বিরোধিতা করেছি। আদালত তার জামিন না মঞ্জুর করেছেন। গত ২২ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৪৯ হাজার পিস ইয়াবার মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেছিলেন কামরুল ইসলাম। এসময় আদালত কামরুলের জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ প্রদান করেন।
উল্লেখ্য,২০১৮ সালের ৭ মার্চ নারায়ণগঞ্জ বন্দর থানার রুপালি আবাসিক এলাকা থেকে সদর মডেল থানার এএসআই সরোয়ার্দি ও মাদক বহনকারী সাবিনা আক্তার রুনুকে আটক করে। এ সময় তার সাথে থাকা ৪৯ হাজার পিস ইয়াবা ও নগদ ৫ লাখ টাকা জব্দ করে পুলিশ। ইয়াবা ও নগদ টাকা তৎকালীন সদর মডেল থানার ওসি কামরুল ইসলামের নির্দেশে গোপন করেছিলেন এএসআই সারোওয়ার্দী। পরে জেলা ডিবি পুলিশের হাতে সারোওয়ার্দী ইয়াবা ও নগদ টাকাসহ আটক হয়েছিলেন। আদালতে সারোওয়ার্দী এমন জবানবন্দী দিয়েছিলেন।
এএসআই আলম সরোয়ার্দি আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন, রুনুকে ইয়াবাসহ আটকের পর ওসি কামরুল ইসলামকে তিনি ফোন করেছিলেন। সেই সময় ওসি কামরুল তাকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলেন। এরপর ঘাটের কাছেই তার বাসায় আসামি রুনু ও টাকাসহ বাসায় অবস্থান করেন। এরপর ওসি নিজে আলামগুলো (৪৯ হাজার পিস ইয়াবা) ও ৫ লাখ টাকা রেখে রুনুসহ দুজনকে এসআই মোর্শেদের কাছে দিতে বলেন।
আদালতে সারোওয়ার্দী আরো বলেছিলেন, এসআই মোর্শেদের কাছে আসামি রুনুকে নিয়ে বাসার নিচে যাওয়ার পর তিনি(ওসি) আমাকে ফোন দিয়ে অপর আসামিকে ছেড়ে দিতে বলেন। আসামি ছেড়ে দেয়ার আগে আলামত ও টাকা রেখে দেই। ওই আলামত থেকে ৫ হাজার পিস ইয়াবা এনে ওসির নির্দেশমতো রাস্তা থেকে জনি নামে একজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসি। রাতে ডিবি অভিযান চালিয়ে আলামত ও টাকা জব্দ করে।
পুলিশের দুজন সদস্যের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ওসি কামরুলের নাম আসার পরেও তাকে বাদ দিয়ে গত আগস্ট মাসে ১২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজিমউদ্দিন আল আজাদ। মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি কনস্টেবল আসাদুজ্জামানের জামিন আবেদন পর্যালোচনাকালে বিষয়টি হাইকোর্টের দৃষ্টিতে আসে। এরপরই তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব এবং এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। হাইকোর্টে দেয়া ব্যাখ্যায় তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, দুজনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ছাড়া পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় ওসিকে আসামি করা হয়নি।
আইওর ওই ব্যাখ্যা আইনগতভাবে কতটা সঠিক সে বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী ও এসএম শাহজাহানের মতামত গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। তারা আদালতকে বলেন,তদন্ত কর্মকর্তার প্রধান কাজ মামলার তথ্য ও সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ করা। তার কোনো ক্ষমতাই নেই মামলার তথ্য ও সাক্ষ্য-প্রমাণের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নে সিদ্ধান্ত দেয়ার। ফলে তদন্ত কর্মকর্তা ওসিকে আসামি না করার ব্যাপারে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন সেটা আইনগতভাবে সঠিক নয়।
এ মামলায় ওসি কামরুলের নাম আসায় আদালতের নির্দেশে গত বছরের ৪ মার্চ সদর থানা থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। পরে তাকে মামলার চার্জশিট থেকে অব্যাহতি দেয়া হলে ২ এপ্রিল আবারও সদর থানায় তাকে পুনর্বহাল করা হয়। তিনি পরে ডিবি ও অন্যত্র বদলি হন। পরে সিআইডি ওসি কামরুলকে সম্পূরক চার্জশিটভুক্ত করেন। চলতি বছরের গত ২২ অক্টোবর তিনি নারায়ণগঞ্জের একটি আদালতে হাজির হলে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড