• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

অর্ধশতাব্দির দুঃখ ঘুচবে চার কিলোমিটার ইটের সড়কে

  কামাল উদ্দিন, রাঙ্গামাটি

১২ অক্টোবর ২০২০, ১৪:১৯
ছবি : দৈনিক অধিকার

প্রায় অর্ধশতাব্দি ধরে মনে পুষে রাখা সড়ক না পাওয়ার কষ্ট সরিয়ে দিতে চান পঁয়ষট্টি বছরের নিহার বিন্দু চাকমা। বলেন, বাবার মুখে শুনে কিশোর বয়স থেকে প্রতীক্ষা আছি পাকা সড়কের। অনেক চেষ্টা করেও কিছু করতে পারিনি। মরার আগে অন্তত সড়কে ইট বিছানো দেখলে শান্তি পাবে।

মৌসুমি ফল আর সবজির জন্য নানিয়ারচরের ঘিলাছড়ি বাজার এখন ব্যবসা কেন্দ্র। এ বাজারের তত্বাবধায়ক (বাজার চৌধুরী) হওয়ায় ঘিলাছড়ি গ্রামের বাসিন্দা নিহার বিন্দু আক্ষেপ যেন একটু বেশিই।

বিদ্যুৎ, পানি, পরিবহনসহ বাজারের সব সুবিধাই মেলে এখানে। রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি প্রধান সড়কের এর অবস্থান হওয়ায় ফড়িয়াদের আকর্ষণ এখানেই। কিন্তু এই বাজারের প্রাণ কৃষকদের হেঁটে আসার রাস্তাটুকুও নেই। খেত থেকে কাঁধে, মাথায় করে কাঁদা-পানি মাড়িয়ে বাজারে বয়ে আনতে হচ্ছে এ ফসল। মাত্র চার কিলোমিটার ‘ইটের সড়ক’ হলেই অর্ধশতাব্দির দুঃখ ঘুচবে অন্তত বারো হাজার মানুষের। তবে ‘বাজেট সীমাবদ্ধতার কারণে সড়কটি তৈরি করা যাচ্ছে না’ বলে জানিয়েছেন নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রগতি চাকমা। তিনি এ বিষয়ে জনস্বার্থে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা পরিষদের হস্তক্ষেপ চান ।

বৃহস্পতিবার ঘিলাছড়ি গ্রামে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে এ চিত্র পাওয়া গেছে। ঘিলাছড়ি বাজারের সাথে সংযুক্ত পশ্চিম দিকে এ গ্রামে যেতে বড় মাওরুম খালে সেতু পাড় হতে হয়। কাদা পানিতে একাকার মেঠো পথ ধরে পাহাড়ি নারি, পুরুষ এমনকি প্রবীণ ও শিশুরাও দলবেঁধে আসছেন বাজারে। পুরুষরা হাতে, কাঁধে আর নারীরা মাথায় করে নানান পণ্য বয়ে নিচ্ছেন।

পথচারী সোনা রানী চাকমা(৫৫) জানালেন, বর্ষায় কষ্টের আর শেষ থাকেনা। অন্তত ইটের রাস্তা হলেও গাড়ি দিয়ে যেতে পারতাম।

স্থানীয় উচ্চ কেংগালছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও গ্রামটির বাসিন্দা সুরন্ত চাকমা জানান, গ্রামবাসী নিজেরাই টাকা তুলে ঘিলাছড়ি বাজার থেকে নিচপাড়া দুই কিলোমিটার আর উপর পাড়া দুই কিলোমিটার কাঁচা সড়ক তৈরি করেছেন। প্রতিবছর চাঁদা তুলে সড়ক সংস্কার করে এখন তাঁরা হাঁপিয়ে উঠেছেন। বাজার, উচ্চ বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়, কেজি স্কুল ও একটি কারিগরি বিদ্যালয়ে যেতে এর আশপাশের অন্তত বারো হাজার মানুষ সড়কটি ব্যবহার করেন।

কিন্তু সড়কটির জন্য গ্রামবাসীর দুঃখের যেন আর অন্ত নেই। সুরন্ত চাকমা বলেন, বর্ষাকালে কাদা-পানি মাড়িয়ে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারেনা। রাতের বেলায় রোগী পরিবহন অসম্ভব হয়ে পড়ে। বিশেষ করে প্রসূতি ও বয়স্ক রোগী পরিবহনে মারাত্মক সমস্যায় পড়েন গ্রামবাসী। মাত্র চার কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দুটি সড়কে ইট বসানো হলে এই সমস্যা থাকবে না। এছাড়া গ্রাম থেকে কৃষক উৎপাদিত পণ্য পরিবহনে সরাসরি বাজারে নিতে পারবে। এতে শারীরিক কষ্ট কমবে। সময় বাঁচবে। ন্যায্য দামও মিলবে।

গ্রামে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। বিদ্যুৎ, পানি ব্যবহার করছেন বাসিন্দারা। তিনটি সেতু আর দুটি কালভার্টও আছে ওই সড়কে। কিন্তু সড়ক না থাকায় থমকে আছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। সামর্থ্য থাকা স্বত্বেও ব্যক্তিগত গাড়ি কিনতে পারছেন না স্থানীয়দের অনেকেই।

ক্ষোভ ঝেড়ে গ্রামের তরুণ সুনীল চাকমা (৩০) বলেন, ঘিলাছড়ি গ্রাম যেন প্রদীপের নীচে অন্ধকার। ঘিলাছড়ি বাজার ঝলমলে হলেও তার সংযোগ সড়কটির জন্য জনপ্রতিনিধিদের বলে কয়েও কাজ হচ্ছে না। অথচ পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে কত নাম না জানা প্রকল্পে সরকারি টাকা খরচ দেখানো হচ্ছে। বাপ-দাদার আমল থেকে শুনে আসছি সড়ক হবে। কিন্তু উদ্যোগ দেখছিনা।

ঘিলাছড়ি গ্রামের বাসিন্দা ২নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য পুলক চাকমা বলেন, সড়কটি জন গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদে বরাদ্দ কম হওয়ায় প্রকল্প নেয়া সম্ভব না।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড