কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
কুড়িগ্রামে দফায় দফায় বন্যায় কৃষকের স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেছে। বিশেষ করে ৫ম দফা বন্যায় আমনের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় দিশেহারা অবস্থা তাদের। কৃষি নির্ভরশীল পরিবারগুলো ধারদেনা ও ঋণ করে ৪র্থ দফা বন্যার পর আমন আবাদ করে ঘুড়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও ৫ম দফা বন্যার ফলে ধরলা নদী তীরবর্তী এলাকার ৪ উপজেলার কৃষকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
এখন নিজেদের খাবার কিভাবে জোটাবে এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা। এছাড়াও ধান নষ্ট হওয়ায় খাদ্য অভাবে পরে যাবে গবাদিপশুও। এমন পরিস্থিতিতে সরকারি ভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে সরকার না দাঁড়ালে চরম বিপাকে পরবে এসব পরিবারের লোকজন।
এদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মনে করছে অবশিষ্ট এলাকায় এবার বাম্পার ফলন হবে। ফলে ঘাটতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে। এছাড়াও সরকারি দপ্তরে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সহযোগিতা চাওয়ার পাশাপাশি পরিত্যক্ত জমিতে বিকল্প ফসল আবাদের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চলতি বছর প্রথম দফা বন্যায় তেমন ক্ষতি না হলেও দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় জেলায় ১৭ হাজার ৫৫৬ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়। পানি নেমে যাওয়ার পর ১১হাজার ৬৬২হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে নিরূপণ করে কৃষি বিভাগ।
এরমধ্যে আমন বীজতলা ১হাজার ৪০৯হেক্টর, আউশ ৫হাজার ২১৭হেক্টর, সবজি ৯৫৩হেক্টর, পাট ৯হাজার ২৩৫হেক্টর, তিল ৩০৫হেক্টর, মরিচ ২০৫হেক্টর ও চিনা ১৪০হেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় এ দুই মিলে ১লাখ ৩৪হাজার ৮৫৮জন কৃষকের মোট ১৪০কোটি ৬৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়।
তৃতীয় দফা বন্যা শেষে জেলার ২৭হাজার ৭৬১জন কৃষককে সবজি বীজ, ১০৫টি কমিউনিটি বীজতলা ও শতাধিক ভাসমান বীজতলা এবং ১১২টি ট্রে বীজতলা প্রস্তুত করে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে আমন চারা বিতরণ করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
কৃষকরা নতুন উদ্যোমে পুনরায় আমন ধান চাষ শুরু করার দু-সপ্তাহের মধ্যে ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় মাঠে দণ্ডায়মান আমনের আবাদ, মাসকালাই, চিনা, বাদাম ও শাকসবজি সম্পূর্ণরূপে পানিতে তলিয়ে যায়।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে চতুর্থ ও পঞ্চম দফা বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ এখনও নির্ধারণ করা যায়নি। তবে সেপ্টেম্বরের দুই দফায় ১৯হাজার ২৩হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। যার আমনের আবাদ ১৮ হাজার ৮২০ হেক্টর।
এরমধ্যে সদর উপজেলায় ৪হাজার ২০৫হেক্টর, উলিপুরে ৬৬০হেক্টর, চিলমারীতে ১হাজার ৫ হেক্টর, রৌমারীতে ৯৫০হেক্টর, চর রাজীবপুরে ৭৫০হেক্টর, ভূরুঙ্গামারীতে ১হাজার ৫২৫হেক্টর, নাগেশ্বরীতে ৬হাজার ৫৫হেক্টর, ফুলবাড়ীতে ২হাজার ৫৮০হেক্টর এবং রাজারহাট উপজেলায় ১হাজার হেক্টর আমন আবাদ নিমজ্জিত হয়। এখনও অনেক আবাদ পানির নিচে রয়েছে।
কৃষি বিভাগ বলছে পানি নামার পর থেকে ক্ষতি নিরূপণ করতে কাজ করছেন তারা। তবে এবারে ক্ষতির পরিমাণ বেশি হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট সকলে। এ অবস্থায় মূলধন হারানোর শঙ্কায় থাকা কৃষকরা বলছেন সরকারীভাবে সহায়তা না পেলে আগামী মৌসুমে কোন আবাদই তারা করতে পারবেনা না। যদিও কৃষি বিভাগ বলছে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আগামীতে সরিষায় জোর দেওয়া হবে। কৃষকদের সহযোগিতার জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে।
উলিপুরের বজরা ইউনিয়নের চর বজরা গ্রামের কৃষক কাসেম জানান, বন্যা ও নদী ভাঙনে ৭ একর জমি নদী গর্ভে চলে গেছে। ধারদেনা করে ৩৫ শতক জমিতে আমন আবাদ করেছি। বন্যায় সেগুলোও নষ্ট হয়ে গেছে।
সদর উপজেলার সারডোব, চরহলোখানা, কাগজিপাড়া ও ছাটকালুয়া গ্রামের কৃষকরা জানান, এবার বন্যা আর নদী ভাঙনে আমরা নি:স্ব হয়ে গেছি। আমাদের জমির ফসল সম্পূর্ণরূপে পঁচে ও কাদায় মিশে নষ্ট হয়ে গেছে।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শামসুদ্দিন মিঞা জানান, এখন পর্যন্ত শেষ দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য কোন প্রকার প্রণোদনা পাওয়া যায়নি। তবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা প্রস্তুতে মাঠ পর্যায় কাজ চলছে। তালিকা প্রণয়ন শেষে তাদেরকে সহযোগিতা করা হবে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড