• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩২ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

পাহাড়ে জুমের পাকা ফসল ঘরে উঠছে

  রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি

০২ অক্টোবর ২০২০, ১৫:১২
রাঙ্গামাটি
পাহাড়ে জুমের পাকাধান কাটছেন পাহাড়ি নারীরা

পাহাড়ে এখন ঘরে উঠছে জুমের পাকা ফসল। ধুম লেগেছে পাকা ধান কাটার। দীর্ঘ প্রায় ৯ মাসের পরিশ্রমের বিনিময়ে ফলানো ফসল ঘরে তুলছেন জুমচাষিরা। করোনার কারণে এবার মৌসুমে চাষাবাদে ব্যাহত না হলে ফলন আরও বিস্তর হতো। যতটুকু চাষাবাদ সম্ভব হয়েছে, তাতে ভালোই ফসল ফলেছে। তাই হাসি-খুশী চাষিরা। খোঁজ নিয়ে সরেজমিনকালে এসব তথ্য জানান চাষিরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে পার্বত্য এলাকায় জুমের পাকাধান কাটছেন জুম চাষিরা। এখন ফসল ঘরে তোলার ধুম। প্রত্যেক বছর পার্বত্য তিন জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে বিস্তর জুমচাষ হয়। জুমচাষ পাহাড়িদের আদি পেশা। জীবিকার অন্যতম উৎস। এ বছর করোনার কারণে পার্বত্য তিনটি জেলায় জুম চাষে কিছুটা ব্যাহত হলেও চাষাবাদ ভালো হয়েছে। ফলনও হয়েছে ভালো।

জুম চাষিরা পৌষ ও মাঘ মাসে পাহাড়ের ঢালে জঙ্গল সাফ করেন। রোদে শুকিয়ে ফাল্গুন ও চৈত্র মাসে আগুনে পুড়িয়ে প্রস্তুত করেন জুমে ক্ষেত। বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে পোড়ানো জুমের মাটিতে সূচালো দা দিয়ে গর্ত খুঁড়ে একসঙ্গে ধান, তুলা, কাউন, ভুট্টা, ফুটি, চিনার, শিম, যব ইত্যাদি বীজ বপন করেন। জুমজুড়ে ছিটানো হয় তিল, মরিচ, ধনেপাতাসহ ইত্যাদি বীজ। প্রায় ৮-৯ মাস পরিশ্রম শেষে ভাদ্র ও আশ্বিন মাসে ঘরে ওঠে পাকাধান। তার আগে আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসেই জুমের ফসল তোলা শুরু হয়। শুরুতে পাওয়া যায় মারফা, মরিচ, চিনার, ভূট্টো ইত্যাদি ফসল। ভাদ্র, আশ্বিন ও কার্ত্তিক মাসের মধ্যে পাকা ধান কাটার পর শেষে তুলা, তিল, যব ঘরে তোলা হয় কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসে।

জুম চাষিরা জানান, জুমের পাকা ফসল ঘরে তোলার ভরা মৌসুম চলছে এখন। উপযুক্ত পরিবেশ, মাটির উর্বরাশক্তি ও অনুকূল আবহাওয়ার ফলে এ বছরও জুমে ধানসহ ফসলের ফলন ভালোই হয়েছে। তবে করোনার কারণে এ বছর চাষাবাদে কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। পাহাড়ি এলাকায় যুগযুগ ধরে চাষাবাদ হয়ে আসছে জুম। জুমে ধান ছাড়াও আবাদ হয় মারফা, চিনার, ফুটি, বেগুন, মরিচ, ধুন্দল, ঢেঁড়শ, কাকড়ল, কুমড়াসহ মিশ্রফসল।

পরিবেশবাদী ও উন্নয়ন কর্মী মিঃ ললিত চন্দ্র চাকমা বলেন, তিন পার্বত্য জেলার জুম চাষ বহু প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বহু জাতিক একটি চাষ পদ্ধতি। এটাকে আমরা মাল্টিসিস্টেম পদ্ধতিও বলতে পারি। পাহাড়ে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা শত শত বছর আগ থেকে এই জুম, চাষ করে আসছে। জুম চাষ মূলতঃ হয়ে থাকে পাহাড়ের ঢালুতে। তিন পার্বত্য জেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা জুম চাষ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। তবে জুম চাষের যে,পদ্ধতি সে আলোতে জুম চাষ করা হলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে না। যারা জুম চাষ করে তাদের মনে রাখতে হবে নির্দিষ্ট জায়গায় যেন আগুন দেওয়া হয়।

জুম চাষিদের খেয়াল রাখতে হবে আগুন দিতে গিয়ে যেন জীব বৈচিত্র্যের ক্ষতি না হয়। আগুন দেওয়ার আগে পার্শ্ববর্তী লোকজনকে সতর্ক করে দিয়ে আগুন লাগিয়ে বসে থাকতে হবে যেন অন্যকারও ক্ষতি না হয়। অপর দিকে যারা জুম চাষ করে তারা বার বার একই জায়গায় জুম চাষ করে। একই জায়গায় বার বার জুম চাষ করা হলে মাটির উর্বরতা কমে যায়। অন্যদিকে জমি সংকোচিত হওয়ার কারণে বার বার একই জায়গায় জুম চাষ করা হচ্ছে। সঠিক পদ্ধতিতে জুম চাষ করা হলে পরিবেশের ক্ষতি হবে ও জীব বৈচিত্র্য ধ্বংস হবে না।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড