• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ছেলেদের অবহেলায় বিনা চিকিৎসায় মারা গেলেন মা

  রায়পুরা প্রতিনিধি, নরসিংদী

৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৭:২৮
ফিরোজা বেগম (ছবি : দৈনিক অধিকার)

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার আমিরগঞ্জ ইউনিয়নের দক্ষিণ মির্জানগর মধ্যপাড়া গ্রামের ৬নং ওয়ার্ডের মৃত মনতাজ মিয়ার স্ত্রী ফিরোজা বেগম। জাতীয় পরিচয় পত্রে তার বয়স ৭৫ হলেও স্বজনরা জানান তার প্রকৃত বয়স নব্বইয়ের বেশি। তিন পুত্র সন্তানের জননী সে। তিন ছেলে ও তাদের স্ত্রীদের অবহেলায় বিনা চিকিৎসায় মঙ্গলবার রাতে নোংড়া পরিবেশে একটি খোলা ঘরে থেকে পরপারে পাড়ি জমালেন নব্বয়োর্ধ বৃদ্ধা ফিরোজা বেগম।

ফিরোজা বেগম জীবিতকালে মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকালে সরজমিনে দেখা যায়, ফিরোজা বেগমকে একটি খোলা ঘরে ফেলে রাখা হয়েছে। যার আশপাশ খুবই অপরিচ্ছন্ন ও নোংড়া। তার সাথে কথা বলার সময় তার খাবারের প্লেটে শত শত মাছি ভনভন করতে দেখা গেছে। যে সময়টাতে তার যত্নের প্রয়োজন, সেই সময়টায় কোমড় ভেঙ্গে ছেলে ও ছেলের স্ত্রী-দের অযত্নে অবহেলায়, অমানবিক অত্যাচার ও বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর প্রহর গুনতে দেখা গেছে। কথা বলার সময় ফিরোজা বেগম অনেক কথা বলতে গিয়েও বলতে পারছিলেন না। হাত নেরে ইশারার মাধ্যমে তিনি তার সাথে ঘটে যাওয়া অনেকগুলো মূহুর্তের বর্ণনা দিয়েছেন।

পরিবারের ছেলে ও স্ত্রীরা জানান, তিন বছর আগে একটি দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ফিরোজা বেগমের কোমড়ের হাড় ভেঙ্গে যায়। পরে দীর্ঘ দিন চিকিৎসার ফলেও তা ঠিক হয়নি। এখন তাদের আর্থিক সমস্যার জন্য ফিরোজা বেগমের চিকিৎসার ব্যয় বহন করা সম্ভব না। তাদের পক্ষে যতটুকু সম্ভব তা করেছে বলেও জানান তারা।

মেঝো ছেলে রহমত উল্লার কাছে ফিরোজা বেগমকে ঘরে না রেখে বাহিরে ফেলে রাখার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, তার মা বেশিরভাগ সময় তার বড় ভাইয়ের সাথে থেকে খাওয়া-নাওয়া করে। তারাও মাঝে মধ্যে খাবার দিয়ে থাকে। ইদানিং বড় ভাই শফিউল্লাহ ঘর মেরামত করায় ১৫-২০ দিন যাবৎ মাকে এখানে রাখা হয়েছে বলে জানান।

ফিরোজা বেগমের বড় ছেলের স্ত্রী সুরিয়া বেগম জানান, ফিরোজা বেগমের বয়স ৯০ এর ঊর্ধ্বে। ভোটার আইডি কার্ডে তার বয়স কম ওঠেছে। আইডি কার্ড অনুযায়ী তার ৭৫ বছর হলেও এখনো পর্যন্ত মেলেনি তার ভাগ্যে বয়স্ক কিংবা বিধবা ভাতার কার্ড। বয়স্ক ভাতার কার্ডের জন্য দীর্ঘদিন স্থানীয় আবু বক্কর মেম্বার ও মহিলা মেম্বার হানুফা বেগমের কাছে ঘুরেও কোন ধরনের সহায়তা পায়নি।

৬নং ওয়ার্ডের সদস্য আবু বক্কর মেম্বার বলেন, একজন ব্যক্তির ৬২ বছর বয়স হলে সে বয়স্ক ভাতা কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারে। কিন্তু আইডি কার্ডে বয়সের গড়মিল থাকাই সে বয়স্ক ভাতা কার্ড পায়নি। আর বিধবা ভাতার ক্ষেত্রে আমি ৪বছরে ৩টা কার্ড পেয়েছি। তার মধ্যে যাদেরকে সেই কার্ডগুলো দিয়েছি তারা ফিরোজা বেগমের চেয়েও গরিব ।

আমিরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিন খান বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তারা যদি আমাকে অবগত করতো তাহলে আমি যে কোন উপায়ে একটা কার্ড ব্যবস্থা করে দিতাম।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড