• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

‘রিফাতকে মারতে পারলে বুঝব তুমি তোমার বাপের ছেলে’

  অধিকার ডেস্ক

৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৭:২৩
রিফাত হত্যা
রিফাত হত্যা (ছবি : সংগৃহীত)

দেশজুড়ে আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির মধ্যে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ছয় আসামির মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে মামলার চারজন আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।

এ দিকে, ফাঁসির আদেশের পরই মিন্নিকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। রিফাত হত্যার পর থেকেই ঘটনাটি নিয়ে নানা রকম তথ্য প্রকাশিত হতে থাকে। এর বেশিরভাগ তথ্যই মিলেছে মিন্নি, রিফাত ও নয়নের ফোন কল থেকে।

আলোচিত এই ঘটনার আগে ও পরে মিন্নির সঙ্গে নয়ন বন্ডের কথোপকথনসহ মেসেজ আদান-প্রদানের তথ্য উদ্ধার করে পুলিশ। বরগুনা জেলা পুলিশের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সদস্যের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়, মিন্নি একটি সিম ব্যবহার করতেন যেটি নয়ন বন্ডের দেওয়া। সিমটি নয়ন বন্ডের মায়ের নামে রেজিস্ট্রেশন করা।

পুলিশের দাবি, রিফাত শরীফের সঙ্গে বিয়ের পরও নয়নের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে ওই সিমটি ব্যবহার করতেন মিন্নি। হত্যাকাণ্ডের দিন সকাল ৯টা ৮ মিনিটে ওই নম্বর দিয়েই নয়ন বন্ডকে কল করে ৬ সেকেন্ড কথা বলেন মিন্নি। এ সময় তাদের ৪০ সেকেন্ড কথা হয়। হামলার পর বেলা ১১টা ৩১ মিনিটে নয়ন বন্ড মিন্নিকে একটি এসএমএস পাঠিয়েছিলেন। পরে রিফাত শরীফ মারা যাওয়ার পর বিকাল ৪টার কিছু সময় আগে নয়ন বন্ড মিন্নির কাছে আরেকটি এসএমএস পাঠিয়েছিলেন। পাঠানো ওই এসএমএসটিতে লেখা ছিল, ‘আমারে আমার বাপেই জন্ম দেছে।’

এ ঘটনায় মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদে অংশ নেওয়া ওই পুলিশ সদস্যের বরাতে গণমাধ্যমে বলা হয়েছিল, রিমান্ডে মিন্নির কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিন্নি বলেছেন, রিফাত শরীফকে মারার পরিকল্পনার সময় মিন্নি নয়ন বন্ডকে বলেছিলেন, ‘তুমি যদি রিফাত শরীফকে মারতে পার, তাহলে বুঝব তোমারে তোমার বাপেই জন্ম দিছে।’

উল্লেখ্য, গত বছরের ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজ রোডের ক্যালিক্স একাডেমির সামনে স্ত্রী মিন্নির সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে জখম করে নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজীর সহযোগীরা। গুরুতর অবস্থায় রিফাতকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বরিশাল শেরে-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রিফাত মারা যান।

এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ডকে প্রধান আসামি করে ১২ জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও পাঁচ থেকে ছয়জনের বিরুদ্ধে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় প্রথমে মিন্নিকে প্রধান সাক্ষী করেছিলেন নিহত রিফাতের বাবা।

পরে ২ জুলাই ভোরে জেলা সদরের বুড়িরচর ইউনিয়নের পুরাকাটা ফেরিঘাট এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ প্রধান আসামি নয়ন বন্ড (২৫) নিহত হন।

প্রাথমিক অবস্থায় পুলিশ বিষয়টি আমলে না নিলেও ফেসবুকে এই হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর নড়েচড়ে বসে বরগুনার পুলিশ প্রশাসন। দেশব্যাপী ওঠে সমালোচনার ঝড়। এরপর চেকপোস্ট, কড়া নিরাপত্তা ও তল্লাশিতে একে একে ধরা পড়ে অভিযুক্তরা।

হত্যাকাণ্ডের ২০ দিন পর গত বছরের ১৬ জুলাই মিন্নিকে তার বাবার বাসা থেকে বরগুনা পুলিশ লাইনে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এই হত্যায় তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে মনে হওয়ায় ওইদিন রাতেই মিন্নিকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।

পরে গত বছরের ১৭ জুলাই মিন্নিকে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। এরপর শুনানি শেষে আদালত মিন্নির পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একপর্যায়ে গত বছরের ২০ জুলাই পাঁচদিনের রিমান্ডের তৃতীয় দিন একই আদালতে রিফাত হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন মিন্নি। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী।

পরবর্তীকালে ৪৯ দিন কারাভোগের পর গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা না বলার শর্তে উচ্চ আদালতের নির্দেশে বরগুনার কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হন মিন্নি। জামিনের পর থেকে বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের জিম্মায় বাড়িতে ছিলেন তিনি।

আরও পড়ুন : মিন্নিসহ ৬ আসামির মৃত্যুদণ্ড, বেকসুর খালাস ৪

চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার তদন্তকারী সদর থানার কর্মকর্তা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) হুমাউন কবির ১ সেপ্টেম্বর ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক; দুই ভাগে বিভক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জন রয়েছেন। তবে মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রাপ্তবয়স্ক আসামি মো. মুসা এখনও পলাতক।

এ দিকে, গত ১ জানুয়ারি রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত। পরে ৮ জানুয়ারি থেকে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। মোট ৭৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে এ মামলায়।

আলোচিত এই মামলার প্রাপ্তবয়স্ক আসামিরা হলেন- রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজি, আল কাইউম ওরফে রাব্বী আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়, মো. হাসান, মো. মুসা, আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি, রাফিউল ইসলাম রাব্বী, মো. সাগর এবং কামরুল ইসলাম সাইমুন।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড