শাহাদাৎ হোসেন, তালতলী, বরগুনা
দিন-রাত তাঁতিদের কর্মব্যস্ততায় গমগম করত রাখাইন পাড়ায়। এখন আর নেই সেই কর্মচাঞ্চল্য, কমে এসেছে ঠক ঠক শব্দ। তবে তাঁতি বাড়িতে গেলে দেখা যায়- রং বেরঙের সুতা, কাপড় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। তবে এখন আর এই রঙিন সুতা যেন আর রঙিন স্বপ্ন বোনে না তাঁতির চোখে।
বরগুনার তালতলী উপজেলার রাখাইন পল্লীতে বিলুপ্তির পথে তাঁতশিল্প। মানবেতর জীবন পার করছে এখানকার তাঁতশিল্পরা। এসব রাখাইন পল্লীতে এক সময় যাওয়ার পথে অনেকটা দূর থেকেই তাঁতের ঠক ঠক আওয়াজ শুনতে পাওয়া যেত।
জানা যায়, অস্তিত্ব হারাতে বসছে বরগুনার তালতলীর ঐতিহ্যবাহী রাখাইন পল্লীর তাঁত শিল্প। একদিকে যেমন সুতার তীব্র সংকট, অন্যদিকে সুতার মাত্রাতিরিক্ত দাম, পাচ্ছে না সরকারি কোনো সহায়তা, পণ্য বিক্রির পরিবেশ না থাকাসহ নানা সমস্যায় স্থবির হয়ে আছে তালতলীর তাঁত শিল্প। এ সব সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান না হলে রাখাইন তাঁতের অস্তিত্ব বিলীন হবে বলে দাবি রাখাইনদের। এদিকে পণ্য বিক্রির স্থান না থাকায় যারা তাঁতের কাপড় বুনছেন তারা পড়েছেন চরম বিপাকে।
কবিরাজ পাড়ার রাখাইন তাঁতি সেনাচিং বলেন, আমাদের বোনা কাপড়গুলোর মধ্যে শীতকালীন কাপড় বেশি। তাই এ কাপড়গুলো শীতপ্রধান দেশে বিক্রির ব্যবস্থা করা গেলে আমরা সারা বছর কাপড় বুনতে পারতাম।
একই পাড়ার রাখাইন লাচো বলেন, গত বছর যে কাপড় বুনেছি তা বিক্রি হয়নি এখনো। তাঁতের কাপড় বোনার প্রয়োজনীয় সামগ্রী থাকলেও কাপড় বুনছেন না অনেকেই। যে দুই একটি বাড়িতে কাপড় বুনছে তারা বলছে, সুতার তীব্র সংকট এবং সুতার দাম বাড়ায় তারাও পড়েছেন সমস্যায়। এমন অবস্থা চলতে থাকলে অন্যদের মতো তাদেরও বন্ধ করে দিতে হবে তাঁতের কাপড় বোনা।
রাখাইন তাঁতি মাতেন, খেনাচিং, লালানেসহ আরও অনেকে বলেন, মুনাফা কমে যাওয়ায় তরুণ প্রজন্মের কেউ তাঁতের পেশায় আসতে চায় না, অভিভাবকরাও চান না অনিশ্চিত ভবিষ্যতের এই কাজে জড়িয়ে পড়ুক ছেলে-মেয়েরা।
তালতলী উপজেলা তাঁতি লীগের আহ্বায়ক মংচিন থান বলেন, এ শিল্পকে রক্ষা করতে হলে কাপড় বিক্রির আলাদা মার্কেট, দাতা সংস্থার সহায়তা, সুতার সহজ প্রাপ্তি, সুতার দাম কমানো, আধুনিক প্রশিক্ষণ, কাপড়ের ভিন্ন ব্যবহার কৌশল প্রশিক্ষণ, সরকারি বিনিয়োগ দরকার।
১৭০০ সালের শেষের দিকে মিয়ানমারের আরাকানের মেঘাবতীর সান্ধ্যে জিলার ছেং ডোয়ে, রেমেত্রে, মেং অং অঞ্চলসমূহ ত্যাগ করে রাখাইনরা বরগুনার তালতলীতে বসবাস শুরু করেন। তারপর থেকে জীবিকা নির্বাহের জন্য রাখাইন নারীরা তাঁতের কাপড় বোনা শুরু করেন।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড