• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শোনার পর হতে শুরু, সংগ্রহ করেছেন সাড়ে ৪ হাজার রেকর্ড

  মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি

২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৮:০২
মুন্সীগঞ্জ
বাচ্চু মৃধা

বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ রেডকোর্স ময়দানে হাজির হয়ে শুনতে পারেননি বাচ্চু মৃধা। সেই ভাষণ শুনেছেন সে রেকর্ডে । শুনার পর হতে ওই ভাষণ গেঁথে রয়েছে তার হৃদয়ে। ভাষণের রেকর্ডটি প্রথম সংগ্রহের পর হতে এখনো পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর সকল রেকর্ডসহ তার সংগ্রহে রয়েছে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার রেকর্ড। গান পাগল এই বাচ্চু মৃধা সদর উপজেলার টরকি গ্রামের মৃত সিকিম আলি মৃধার ছেলে।

সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে সরেজমিনে মুন্সীগঞ্জের সদর উপজেলার মুন্সিরহাট বাজারে গিয়ে দেখা যায় টিন ও কাঠ দিয়ে তৈরি জরাজীর্ণ একটি দোকান ঘরে বসে কলের গান বাজাচ্ছেন বাচ্চু মৃধা। তার মিঠায়ের দোকানে অসংখ্য মৌমাছি পোকার আনাগোনা। ওই দোকানের মেঝের উপর বসে গুর (মিঠাই) বিক্রি করছে সে। তার বসার সামনেই রয়েছে একটি পুরানো রেকর্ড বক্স। বক্সটি ভেঙ্গে যাওয়ার পর ওর মধ্যে পরিমাপের বাটখাড়া ঢুকিয়ে সংস্কার করে কোনরকম বসিয়ে রাখা হয়েছে রেকর্ড বক্সটি।

যদিও তার মিঠাইর দোকানে তেমন ক্রেতা নেই । তবে গান শুনার জন্য উৎসুক মানুষের কমতি নেই। একটির পর একটি রেকর্ড খুলছে আর নতুন আরেকটি ভরছে সে। একের পর এক গান বেজে যাচ্ছে তার রেকর্ডে ‘তোমার নেতা শেখ মুজিব, আমার নেতা সেখ মুজিব’। ‘জয় বাংলা জয় বাংলা বইলারে মাঝি বাদাম দও তুলিয়া’। ‘এই শহরে আমি যে এক নতুন ফেরিওয়ালা’। ‘আমি কত দিন কত রাত ভেবেছি বলবো তোমায় একটি পুরানো কথা নতুন করিয়া’। একের পর এক গান বাজিয়ে চলেছে সে। মাঝে মাঝে কলের রেকর্ড বক্সটির হাতলকে হাত দিয়ে ঘুরিয়ে নিচ্ছে সে। মাঝে মধ্যে দু-একজন গুর (মিঠাই) ক্রেতা আসলে ডিজিটাল মেশিনে ওজন করে গুর (মিঠাই) বিক্রি করছেন। তবে গুর বিক্রির থেকে গান শুনিয়ে যেনো বেশি তৃপ্তি পান।

এ বিষয়ে বাচ্চু মৃধা বলেন, তার বয়স বর্তমানে ৭০ বছর। ১০ বছর বয়স হতে বাবার সাথে মিঠাই বিক্রি শুরু করেন তিনি। প্রতিদিন ১৫শ’ হতে ২ হাজার টাকা মিঠাই বিক্রি করেন তিনি। তা থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে বর্তমানের ৫ সদস্যের পরিবারটির দিনাতিপাত। প্রায় ৪০ বছর আগে ৫শ’ টাকা দিয়ে কিনেছিলেন বর্তমানের কলের গানের বক্সটি। এরপর অনেক কলের বক্স কিনলেও সেগুলো বিক্রি করে দিয়েছেন। এটিকে রেখে দিয়েছেন স্বযন্তে। ৪০ বছরে বহু কলের গান শুনেছেন তিনি যখনই কোন গান ভালো লেগেছে তখনই ছুটে গেছেন সেই রেকর্ড সংগ্রহ করতে। টাকা যতই লেগেছে কিনে এনেছেন সেই রেকর্ড। এখনো তার দখলে রয়েছে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার রেকর্ড।

এসব রেকর্ড অতিযত্ন করে রেখেছেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ হতে শুরু করে তার সব ধরনের কলের গানের রেকর্ড রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ও গান বাজানো অপরাধে অনেকবার দোকান বন্ধ করে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে তাকে। বাড়ি হতেও থাকতে হয়েছে আত্মগোপনে । শুনতে হয়েছে মানুষের নানা কথা। কিন্তু তার কথা একটিই আমার নেতা বঙ্গবন্ধু আমি যতদিন বাঁচব তার ভাষণ তার গান বাজাবোই। সে আরও জানায় বর্তমানে কলের গানের যে রেকর্ড সেটা আর বাজারে পাওয়া যায়না। তাই পুরানো গুলোই বারবার বাজিয়ে শুনি। তিনি আরও বলেন, কলের বক্সটি নষ্ট হলে নিজেই ঠিক করে নেন। কারণ কলের গানের বক্স ঠিক করার মতো মিস্ত্রি বর্তমানে আর পাওয়া যায়না।

আরও পড়ুন : বাবার পাশে দাফন হলো নোয়াখালী উপজেলার চেয়ারম্যান

পাশের দোকানী রুবেল হোসেন জানান, ‘বাচ্চু কাকা সকাল হতে শুরু করে নামাজের সময় ছাড়া দোকানে যে সময় থাকে প্রায় সময়ই কলের গান বাজান। আমরা সব সময় তার বাজানো গান শুনি। তার বাজানো পুরানো দিনের গান এবং বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনতে তার দোকানের সামনে প্রায়ই মানুষের ভিড় জমে যায়।’

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড