ভালুকা প্রতিনিধি, ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহের ভালুকা পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাদিক টাওয়ার অবস্থিত ডিজিটাল হাসপাতালে ফজিলা আক্তার (৩০) নামে এক নারীর সিজারিয়ান অপারেশনের পাঁচ মাস ১৩ দিন পর অপারেশন করে পেটের ভেতর থেকে আস্ত একটি মুপ বের করা হয়েছে।
শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাতের দিকে ময়মনসিংহ শহরে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে অপারেশন করে পেটের ভেতর থেকে আস্ত একটি মুপ বের করা হয়। ফজিলা আক্তার এখন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়াই করছে।
সূত্রে জানা গেছে, ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার আমিরাবাড়ী গ্রামের শাহজাহান মোল্লার স্ত্রী ফজিলা আক্তারের তৃতীয় সন্তান প্রসবের জন্য গত চলতি বছরে (১৩ এপ্রিল) দুপুরে দিকে ভালুকা ডিজিটাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ক্লিনিকের কর্তৃপক্ষ ওই রোগীর পরিবারের কাছে বলে জরুরি ভিত্তিতে অপারেশন করার পরামর্শ দেন। পরে ক্লিনিকের পক্ষে জাতীয় পঙ্গু হাসপাতালের সাবেক কনসালটেন্ট ডাক্তার মফিজুল রহমান ফজিলার সিজারিয়ান অপারেশন করে। এ সময় অজ্ঞানের ডাক্তার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন ডাক্তার মেহদী হাসান।
অপারেশন করার পর ফজিলা একটি মেয়ে সন্তান জন্মগ্রহণ করে। এ সময় ফজিলার পেটের ভেতরে রক্ত মুছার গজ কাপড় জাতীয় দ্রব্য যাকে ডাক্তারি ভাষায় মুপ বলে। পেটের ভেতরে রেখে ডাক্তার মফিজুর রহমান কাটা স্থান সেলাই করেন। এরপর ১৬ এপ্রিল অসুস্থ শরীর থাকা সত্ত্বে ফজিলা আক্তারকে ক্লিনিক থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয় এবং তাঁকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর শরীরিক নানা জটিলতা লেগেই থাকতো। গত কয়েক দিন পূর্বে পেট ফেঁপে প্রচণ্ড ব্যথা দেখা দিলে তাঁকে ভালুকা ও ময়মনসিংহ শহরের বিভিন্ন ক্লিনিকে দেখানোর পর ডাক্তাররা ধারণা করে ফজিলার পেটের ভেতরে আতে পেঁচ লেগে ফুলে যাচ্ছে।
পরবর্তীতে চলতি মাসের শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) ময়মনসিংহ শহরের বাটিকাশর এলাকার আইডিয়েল হাসপাতালের চিকিৎসক ডাক্তার শওকত আলী শেষ পর্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে ফজিলাকে পুনরায় অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। অপারেশন করার পর তাঁর পেট ভেতর থেকে আস্ত একটি বড় আকৃতির মুপ বের হয়ে আসে। দীর্ঘ পাঁচ মাসেরও অধিক সময় জরায়ুর মাঝে মুপ আটকে থাকায় জরায়ু পচে ছিঁড়ে মুপ পেটের নাড়ি-ভূরির সঙ্গে পেঁচ লেগে পেট ফুলতে থাকে। এ সময় ডাক্তার শওকত আলী ফজিলাকে বাঁচানোর স্বার্থে পেটের ভূরির অনেকটা অংশ কেটে ফেলে দিয়ে বিকল্প ভাবে প্রস্রাবের ব্যবস্থা করে দেন। তিন মাস পর ফজিলাকে আবারও অপারেশন করে স্বাভাবিক ভাবে প্রস্রাবের ব্যবস্থা হবে বলে ডাক্তার জানিয়েছেন। এ সময় ডাক্তার শওকত আলীকে সহযোগিতা করেন অজ্ঞানের চিকিৎসক ডাক্তার রবিন অপূর্ব।
ভুক্তভোগী শাহজাহান মোল্লা জানান, আমি একজন দিন মজুর আমার স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য মানুষের কাছে হাত পেতে সহযোগিতা নিয়ে চিকিৎসা করাচ্ছি। কিন্তু এ পর্যন্ত ডিজিটাল হাসপাতালের মালিক পক্ষ ও ডাক্তার আমাকে কোন প্রকার সহযোগিতা করেনি। ডাক্তারের ভুল চিকিৎসার জন্যই আমার স্ত্রীর এই দুরবস্থা। আমার ৩ সন্তানের খাবার জোটাবো না হাসপাতালের খরচ জোগবো এ নিয়ে আমি খুব বিপদে পড়েছি।
জাতীয় পঙ্গু হাসপাতালের সাবেক ডাক্তার মফিজুর রহমান বলেন, মানুষ মাত্রই ভুল হতেই পারে। অপারেশন করলে শতকরা দুই-এক টিতে সমস্যা হতেই পারে। যে রোগীর সমস্যা হয়েছে তার পরিবারের লোকজন যদি হাসপাতালে যোগাযোগ করতো তাহলে তার চিকিৎসার ভার আমরা গ্রহণ করতাম।
ডাক্তার শওকত আলী দৈনিক অধিকারকে বলেন, সিজারিয়ান অপারেশন করার সময় পেটের ভেতরে আস্ত একটি মুপ রেখে সেলাই করার পর পাঁচ মাস পর আবার অপারেশন করে মুপ রেব করা হয় এবং পেটের ভেতরের অনেক টুকু নাড়ি কেটে ফেলে দিতে হয়েছে। ভেতরে মুপ আটকে থাকায় জরায়ু ফেটে পেটের নাড়ি ভুরির সঙ্গে প্যাঁচ লেগে যায়। তবে আবার তিন মাস পর রোগীকে অপারেশন করতে হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড