• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ফেনীর দাগনভূঞায় আর্সেনিক ঝুঁকিতে ৪ লাখ মানুষ

  ফেনী প্রতিনিধি

২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২০:৪১
আর্সেনিক
ছবি : সংগৃহীত

ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার ৮ ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভায় প্রায় ৪ লাখ মানুষ আর্সেনিকের ভয়াবহ ঝুঁকিতে দিন কাটাচ্ছেন। নিরাপদ পানির ব্যবস্থা না থাকায় আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করছেন এ উপজেলার মানুষ।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস সূত্র জানায়, ১৪১.৭১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দাগনভূঞা উপজেলায় মোট অগভীর নলকূপের সংখ্যা ২৪ হাজার ১৭৩টি। সরকারিভাবে স্থাপনকৃত অগভীর নলকূপের সংখ্যা ২ হাজার ৪৫২টি ও গভীর নলকূপের সংখ্যা ৪৩৫টি।

গভীর নলকূপের মধ্যে সহনীয় মাত্রায় আর্সেনিক থাকলেও অগভীর নলকূপগুলোর ৮০ শতাংশের মধ্যেই মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক রয়েছে। মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক নিয়েই দৈনন্দিন জীবনযাপন করছেন উপজেলাবাসী।

পরিসংখ্যানে জানা যায়, ২০০৭ সালে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রায় ২০০ লোক আর্সেনিকে আক্রান্ত হন। ওয়াটার সাপ্লাই প্রকল্পের আওতায় সহযোগী সংস্থা এমইউএস ও এনডিএসের জরিপে এখানে আর্সেনিকের যে মাত্রা পাওয়া গেছে তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বহুগুণ বেশি।

অসহনীয় মাত্রার আর্সেনিকযুক্ত নলকূপের মাথায় লাল রঙ লাগিয়ে পানি পান নিষিদ্ধ করলেও বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় এতে তেমন লাভ হচ্ছে না।

এ উপজেলায় আর্সেনিকের ভয়াবহতা থাকার পরও সংশ্লিষ্ট বিভাগের আর্সেনিক বিস্তার রোধে তেমন কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ না থাকায় বাধ্য হয়েই এসব এলাকার মানুষ আর্সেনিকযুক্ত নলকূপের বিষাক্ত পানি পান করছেন।

ফলে এ উপজেলায় আর্সেনিকের প্রভাব দিন দিন বেড়ে চলছে। বর্তমানে উপজেলার আর্সেনিকের মাত্রা ০.১০ মিলিগ্রাম। স্থানীয় ইয়াকুবপুর ইউনিয়নের বাদামতলী সরকারি আবাসন প্রকল্পে ৮২৫ ফুট ৩টি গভীর নলকূপে মাত্রা ধরা পড়েছে।

গভীর নলকূপ ছাড়াও আবাসন প্রকল্পে অগভীর নলকূপ রয়েছে ছয়টি। তার মধ্যে তিনটিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক থাকায় লাল রঙ দেয়া হয়েছে। পানির প্রয়োজনীয়তায় বাধ্য হয়ে এখানকার ৬০টি পরিবারের বিভিন্ন বয়সের মানুষ বিপজ্জনক এ নলকূপগুলোর পানি পান করছে।

একই ইউনিয়নের চণ্ডীপুর গ্রামের ওলি উল্যাহর বাড়িতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক শনাক্ত করা হয়েছিল। আর্সেনিকমুক্ত পানি না থাকায় এ পানি পান করে একই পরিবারের চারজন আর্সেনিকোসিস রোগে আক্রান্ত হয়। গৃহিণী সাফিয়া খাতুন ও তার মেয়েসহ ৪জন এ রোগে আক্রান্ত হয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে খসখসে কালো দাগ দেখা দিলেও আহামরি কোন চিকিৎসা না পেয়ে দূরের গ্রাম থেকে পানি এনে পান করার পরও এ রোগ আর সারেনি বলে তারা দাবী করেন। এছাড়াও উপজেলার মাতুভূঞা ইউনিয়নের মাছিমপুর গ্রামে একই বাড়িতেই আর্সেনিক রোগী ধরা পড়েছে ১০ জন।

বাড়ির আবুল হোসেনের স্ত্রী মাফিয়া আক্তার, তার মেয়ে বিবি মরিয়ম আর্সেনিকোসিস রোগে আক্রান্ত। একই বাড়ির আবুল কাশেমের মেয়ে রিনা আক্তার, পেয়ার আহমদের স্ত্রী আলেয়া বেগমও এ রোগে ভূগছেন।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০০৩ সালে এ উপজেলায় আর্সেনিক রোগী শনাক্ত করা হয় ১০০ জন। বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০০ জনের অধিক। উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভার ১'শ ২৩টি এলাকায় আর্সেনিক রোগীর সন্ধান মিলছে উল্লেখ করে অপর একটি সূত্র জানায়, সর্বশেষ ২০০৩ সালে এ বিষয়ে জরিপ হয়েছিলো।

দাগনভূঞা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী বলেন, এ উপজেলার প্রায় প্রতিটি নলকূপেই আর্সেনিক রয়েছে। এমনকি নির্দিষ্ট এলাকায় সরকারিভাবে দেয়া গভীর নলকূপেও আর্সেনিক পাওয়া গেছে। তিনি বলেন,এর থেকে বাঁচতে আমাদের নিজ উদ্যোগে বিকল্প নিরাপদ পানির উৎস খুঁজে নিতে হবে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড