• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বরাদ্দের দেড় কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ

  ভালুকা প্রতিনিধি, ময়মনসিংহ

১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২৩:০৯
স্বাস্থ্য কর্মকর্তা
স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বরাদ্দের দেড় কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ (ছবি : দৈনিক অধিকার)

ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় সরকারি বরাদ্দের দেড় কোটি টাকার অনিয়মসহ নানা অভিযোগ উঠেছে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার সোহেলী শারমিনের বিরুদ্ধে। এরপরও তিনি এখনো স্ব-পদে বহাল তবিয়তে থাকায় তার ‘খুঁটির জোড়’ নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।

এ দিকে, স্থানীয় প্রশাসন তার নানা অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিলেও ময়মনসিংহ জেলার সিভিল সার্জনের কাছ থেকে কোনো ধরণের সাড়া পাওয়া যায়নি এমন অভিযোগও রয়েছে।

ডাক্তার সোহেলী শারমিন চলতি বছরের ১২ মার্চ ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পরপরই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে অসদাচরণ করার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। তার অসদাচরণে অতিষ্ঠ হয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভসহ লিখিত অভিযোগ করেন হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ ঘটনার কিছুদিন পর উপজেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটি তার বিরুদ্ধে সরকারি বরাদ্দের দেড় কোটি টাকা অনিয়ম করার অভিযোগ তুলে। এই অনিয়ম খতিয়ে দেখতে চলতি বছরের ২৫ জুলাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত তদন্ত কমিটি তার কাছ থেকে দেড় কোটি টাকার হিসাব নিতে পারেনি।

এছাড়া আর্থিক অনিয়মের পাশাপাশি হাসপাতালের প্রসূতি ও অন্যান্য রোগীদের বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ রেখে বেসরকারি হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশন করে তিনি প্রতিদিন হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অংকের টাকা। সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে প্রতিদিন বেসরকারি হাসপাতালে প্র্যাকটিস করেন তিনি।

অভিযোগ রয়েছে, নিজের পছন্দের ঠিকাদার নিয়োগ করে নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করে কমিশন নিচ্ছেন। হাসপাতালের বাবুর্চিকে নিজের বাসায় ব্যবহার করেন ডাক্তার সোহেলী শারমিন। কর্মচারীদের নিজের ব্যক্তিগত কাজে লাগানো, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনজনের কোয়ার্টারের রুম একাই ব্যবহার- এমন নানা অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

এ দিকে, খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে অসদাচরণ, বেতন আটকে রাখা, বদলি করা, কাজ বণ্টনে স্বজনপ্রীতি, টিএ বিল প্রদানের ক্ষেত্রেও নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব অনিয়মের ফলে হাসপাতালের স্টাফদের মাঝে এক ধরণের চাপা অসন্তোষ বিরাজ করছে। এভাবে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সঙ্গে স্টাফদের রেষারেষির কারণে হাসপাতালে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা। এ নিয়ে গত কয়েক মাস পূর্বে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী সবাই একত্রে ডাক্তার সোহেলী শারমিনের অসদাচরণে অতিষ্ঠ হয়ে তার প্রত্যাহার চেয়ে মানববন্ধন করেছিলেন। এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বরাবর ময়মনসিংহ ১১ আসনের সংসদ সদস্য ও স্বাস্থ্য বিভাগের বিভাগীয় পরিচালক, সিভিল সার্জন ও উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে অনুলিপি পাঠানো হয়েছিল। এর জেরে স্থানীয় কয়েকজন স্টাফকে বদলি করা হয় হালুয়াঘাট ও গৌরিপুরে। এত অভিযোগের পরেও এখনো বহাল তবিয়তেই আছেন এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। এ কারণে তার ‘খুঁটির জোড়’ নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

এসব অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে অনুসন্ধানে নামলে বেড়িয়ে এসেছে আরও অজানা অনেক তথ্য। চলতি মাসের রবিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, এস এ টিভির সাংবাদিক আওলাদ হোসেন রুবেল ও সঙ্গে ভালুকার স্থানীয় এক সহযোগী হাসপাতালে প্রবেশ করামাত্রই অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। তখন ক্যামেরা বন্ধ ছিল, তবুও তিনি ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে ডাক্তার সোহেলী শারমিন স্থানীয় ওই ব্যক্তির সঙ্গে হাতাহাতি শুরু করেন। হাসপাতালে এমন ঘটনা দেখে সেবা নিতে আসা অনেকে নিরাশ হয়েছিলেন। পরে ভালুকার স্থানীয় সাংবাদিক মহল এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন।

এসব অভিযোগের ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সোহেলী শারমিন বলেন, ‘আমি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসার পর থেকেই একটি মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। আমি কোনো দুর্নীতি করিনি। আমার বিরুদ্ধে যেই মানববন্ধন করা হয়েছে তারও কোনো ভিত্তি নেই।’

সাংবাদিকদের কেন লাঞ্ছিত করেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি প্রথমে চিনতে পারিনি। হাসপাতালের একজন আমাকে বলছে, কে যেন ক্যামেরা নিয়ে আসছে।’

আপনার কক্ষে সাংবাদিক ঢুকেনি, আপনার অনুমতি না নিয়ে ক্যামেরাও চালু করা হয়নি তবুও ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি ক্যামেরার সামনে আসি না। পরে আমি সিভিল সার্জন স্যারের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি তারা গণমাধ্যমকর্মী ছিলেন। পরে ক্যামেরার সামনে সাক্ষাৎকারে বলেছি, যে সকল অভিযোগ আনা হয়েছে আমার বিরুদ্ধে সব মিথ্যা।’

আরও পড়ুন : মামলার হাজিরা দিতে গিয়ে এজলাসেই লাশ হলেন যুবদল নেতা

এ ব্যাপারে ভালুকা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ দৈনিক অধিকারকে বলেন, বর্তমান সরকার উন্নয়নের সরকার। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুর্নীতির সঙ্গে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জড়িত থাকলে অবশ্যই যথাযথ কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন। আমরাও কোনো অপরাধীকে ছাড় দিব না। তবে ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন ডা. এবি এম মসিউল আলম উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের ব্যাপারে মুঠোফোনে কোনো কথা বলতে রাজী হয়নি তিনি।

অন্যদিকে, ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার সোহেলী শারমিনের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন ময়মনসিংহ-১১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ ধনু।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড