• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

আয়ের উৎস নেই তবু অর্থ-সম্পদের পাহাড়

  এম.কামাল উদ্দিন, রাঙ্গামাটি

১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১০:৪৫
রাঙ্গামাটি
রাঙ্গামাটির কাউখালীতে ফরিদ খন্দকারের নির্মাণাধীন বহুতল পাকাবাড়ি

আনসারের সদস্য ছিলেন রাঙ্গামাটির কাউখালীর ফরিদ খন্দকার। অনিয়মের অভিযোগে চাকরি চলে যায় তার। এরপর দৃশ্যত: আয়ের উৎস বলতে কিছুই নেই। তবু তার দিন দিন গড়ে উঠছে বিপুল অর্থ-সম্পদের পাহাড়। এসব আয় কোথায় হতে বা তার আয়ের উৎস কী- তার কিছুই জানা নেই এলাকাবাসীর। এসব ঘিরে কাউখালীর এ ফরিদকে নিয়ে এলাকায় চলছে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফরিদ খন্দকারের আলাদিনের চেরাগ নিয়ে এলাকায় এখন নানা জনের নানা প্রশ্ন। এ নিয়ে বেরিয়ে আসছে নানা রহস্য। পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন অভিযোগ। এসব তথ্য ও অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার পরিচালক বরাবরে লিখিত আবেদন করেছেন এলাকাবাসী। পাশাপাশি অনুসন্ধানী প্রকাশে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে পাঠানো হয়েছে অভিযোগের অনুলিপি।

লিখিত অভিযোগে এলাকাবাসীর পক্ষে স্বাক্ষর করেছেন মো. মুজিবুল হক, মো. গোলাম মোস্তফা, মো. বশির মিয়া, মো. আলমগীর, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. মোস্তাফিজুর রহমান, মো. নুরুল ইসলাম, মো. মোহাব্বত আলী, রিনা বেগম, মো. আবদুল হান্নান প্রমুখ। অভিযোগে বিভিন্ন তথ্য উল্লেখ করে নানা প্রশ্নও তুলে ধরেছেন তারা। মুখোমুখি প্রশ্নেও অনেক তথ্য জানিয়েছেন তাদের কেউ কেউ। এ সময় কাউখালী ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মাইন উদ্দিন, ফার্মেসি ব্যবসায়ী আবু জাফর, আবদুল খালেকসহ এলাকার বেশ কয়েক জন হাজির হন।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, রাঙ্গামাটির কাউখালী উপজেলা সদরের কারু মিয়া খন্দকারের ছেলে মো. ফরিদ খন্দকার আগে ব্যাটালিয়ান আনসারে ঢাকার শাহবাগ জাতীয় যাদুঘরে চাকরি করতেন। অনিয়ম ও বড় ধরনের দুর্নীতির কারণে ২০০৭ সালে চাকরি চলে যায় তার। সেই থেকে কাউখালীতে অবস্থান করছেন তিনি। তার দুই মেয়ে এক ছেলে। দুই মেয়েরই বিয়ে হয়েছে। ছেলেটি বর্তমানে দশম শ্রেণিতে পড়ে। এলাকার লোকজনের প্রশ্ন- ফরিদ খন্দকার এখন কোনো চাকরি করেন না। আর তার উপযুক্ত কোনো ছেলেও বিদেশে নেই। কাউখালী উপজেলা হাসপাতালের সামনে তার শুধু দুই শতক জমি ছিল। কিন্তু চল্লিশ শতকের মতো সরকারি খাস জমি দখল করে কীভাবে বিশাল ভাড়াটিয়া ঘর নির্মাণ করলেন ? ৬০ লাখ টাকায় তিনতলা ফাউন্ডেশন দিয়ে নির্মাণ করছেন পাকাবাড়ি।

তাছাড়া কাউখালী সদরের হাতিমারায় তার জায়গা ও বাগান আছে। কাউখালী হাসপাতাল এলাকার ভেতরে এবং পুরাতন টিঅ্যান্ডটি ভবন এলাকায় জোরপূর্বক জায়গা দখল করেছেন তিনি। কাউখালীর শামুকছড়িতে কয়েক একর পাহাড় জায়গায় বাগান এবং কাউখালী কলেজের পেছনে ৯ একর সেগুন বাগান আছে। তার ব্যাংক ব্যালেন্স এবং স্ত্রী ও দুই মেয়ের বেশ স্বর্ণালংকার রয়েছে। তার হয়রানির শিকার নিরীহ অসহায় বেশ অনেকে তার বিরুদ্ধে কাউখালী নির্বাহী অফিসার, থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি/সম্পাদক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। কিন্তু প্রতিকার কিছুই নেই।

তাই এলাকাবাসীর প্রশ্ন- এই ফরিদ খন্দকারের খুঁটির জোর কোথায় ? চাকরিচ্যুত এক সাধারণ আনসার সদস্য হয়ে ফরিদ খন্দকার কী করে এত অবৈধ সম্পদের মালিক, তার আয়ের উৎস কী- তা জানতে চায় এলাকাবাসী। এলাকার গুটি কয়েক লোকের সঙ্গে দহরম মহরম ছাড়া তার আর কারও সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নেই। ফরিদ দম্ভ করে বলে বেড়ান যে, স্থানীয় প্রশাসন তার হাতের মুঠোয়। তার কেউ কিছুই করতে পারবে না। তিনি নাকি রাতকে দিন আর দিনকে রাত বানাতে পারেন। তাই তিনি কাউকে কিছুই পরোয়া করেন না। এলাকার সবার প্রশ্ন- যে লোকের চাকরি নেই, তার কোনো ছেলে বিদেশে নেই। কিন্তু ফরিদ খন্দকার কোথা থেকে এত টাকার মালিক বনেছেন ? তিনি কি আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়েছেন- যা করে রাতারাতি এক অর্থ-বৈভবের মালিক বনে গেলেন ? এসবের বিস্তারিত তদন্ত করে তার ও তার দোসরদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান এলাকাবাসী।

গোলাম মোস্তফা বলেন, তার জায়গা জোরপূর্বক দখলে নেয়ার চেষ্টায় বাড়িঘর ভেঙে দিয়েছেন ফরিদ খন্দকার। আবদুল খালেক বলেন, ক্ষমতার দাপটে তার অনেক জায়গা জোর করে দখল করেছেন ফরিদ খন্দকার।

এসব অভিযোগ বিষয়ে যাচাইয়ে সরাসরি যোগাযোগ করা হলে ফরিদ খন্দকার বলেন, এসবের কোনো কিছুরই ভিত্তি নেই। সব অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট ও ষড়যন্ত্রমূলক। তার অনেক জায়গা-জমি ও বাগান রয়েছে। তার সব আয় বৈধ। তিনি কারও কোনো জায়গা দখল করেননি। যা আছে সবই তার নিজস্ব জায়গা। তার চাকরিও চলে যায়নি। এখনও চাকরিতে বহাল আছেন তিনি। এলাকার কিছু লোক তার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড