• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

তিস্তার করাল গ্রাসে কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা

  হুমায়ুন কবির সূর্য, কুড়িগ্রাম

১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৩:৩৮
গাইবান্ধা
একমাত্র পাকা সড়ক পথের দুশো মিটার ভাঙনে বিলীন হওয়া

কুড়িগ্রামে ভয়াবহ ভাঙন চলছে উলিপুরের বজরা ইউনিয়ন এলাকায়। এই এলাকায় গাইবান্ধা জেলার নদী বিচ্ছিন্ন অংশ কাশিমবাজারেও চলছে তাণ্ডব। তিস্তা নদীর প্রবল স্রোতে গত দু’সপ্তাহে দুই জেলার তিন শতাধিক বাড়িঘরসহ স্কুল ও মসজিদ নদীগর্ভে চলে গেছে। একমাত্র পাকা সড়ক পথের দুশো মিটার ভাঙনে বিলীন হওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পরেছে এলাকাটি। দুই জেলার সীমানা হওয়ায় রশি টানাটানি, জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি কর্মকর্তাদের নজরদারীর অভাবে ভিটেমাটি হারিয়ে নি:স্ব হয়ে পড়ছে মানুষ। এনিয়ে এলাকাবাসী মানববন্ধন ও গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করলেও বরাদ্দ না পাওয়ার অজুহাতে হাত গুটিয়ে বসে আছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

ভাঙন কবলিত এলাকার গফুর মিয়া জানান, ‘তিনবার ভাড়ি ভাঙছি। এরপর শশুরের ভিটায় আশ্রয় নিছি। সেটাও ভাঙি গেইছে। হামরা এ্যালা কোটে যামো।’

জরিমন নামে এক বিধবা মহিলা জানান,‘ প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়া অনেক কষ্ট করি বাঁচি আছি।এপাকে বাড়ি ভাঙবের নাগছে। কাঁইয়ো জাগা দিবার নাগছে না।খাবারও নাই। গাছের ডাল কাটি বিক্রি করি কোনমতে বাঁচি আছি। তোমরা নদীটা বান্ধি দেও।’

কৃষক মোজাম্মেল হক জানান, ‘বাহে ১২একর জমি আছিল। ৭বার বাড়ি ভাঙছি। সম্পদ সউগ নদী খায়া গেইছে। এ্যালা বাড়িভিটাসহ ৩০শতক জমি আছে। সেটাও যাবার নাগছে। এটা গেইলে নি:ম্ব হয়া যামো।

সরজমিনে দেখা যায়. কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার চর বজরা এবং গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের নদী বিচ্ছিন্ন ও কুড়িগ্রামের সাথে লাগোয়া লখিয়ার পাড়া, পাড়া সাদুয়া, মাদারীপাড়া ও ঐতিহ্যবাহি কাশিমবাজার হাট, কাশিমবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, নাজিমাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়,কাশিমবাজার সিনিয়র মাদ্রাসা এবং ২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এছাড়াও এই এলাকায় একমাত্র চলাচলের পথ চিলমারী, কাশিমমবাজার টু উলিপুর সড়কের প্রায় ২শ মিটার সড়কপথ পানি গর্ভে চলে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এলাকার মানুষজন। যেভাবে ভাঙছে তাতে কয়েক দিনে উলিপুরের বজরা ও হরিপুরের কাশিমবাজার এলাকার দু’হাজার পরিবারের ভিটেমাটি তিস্তার পেটে চলে যাবে।

কাশিমবাজার এলাকার অধিবাসী ফরহাদ আলী সরকার, শিমুল, আতিয়ার মাস্টার, আবু তালেব, আশরাফ মাস্টারসহ স্থানীয়রা জানান, নদী বিচ্ছিন্ন গাইবান্ধা জেলার এই অংশটুকু কুড়িগ্রামের মাটিতে পরায় এলাকার মানুষ সব সময় বৈষম্যের শিকার হয়েছে। এই করোনায় আমরা কোন বরাদ্দ পাই নাই। এলাকার তিনভাগের দুইভাগ অ ল নদীগর্ভে চলে গেলেও স্থায়ী কোন ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

অপরদিকে এলাকার সুধিজন মোস্তাফিজার রহমান বাবুল, আব্দুস সবুর ও মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, ভাঙন ঠেকাতে আমরা দু’জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে ছোটাছুটি করেছি। গাইবান্ধা বলে আপনারা কুড়িগ্রামের সাথে যোগাযোগ করুন। এখান থেকে নদী পেরিয়ে কাজ করতে অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এদিকে কুড়িগ্রাম থেকে তীব্র নদী ভাঙনে জিও ব্যাগ ফেলানো হলেও তা কাজে লাগছে না। শুকনো মৌসুমে কাজের কথা বললেও তারা শোনে না। এখন শুধু ঠিকাদার দিয়ে অর্থের অপচয় হচ্ছে। তারা দ্রুত তিস্তা নদীর ভাঙন থেকে স্থায়ীভাবে রক্ষার দাবি জানিয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, বরাদ্দ ও বাজেট না পাওয়ায় কাজে বিঘ্ন ঘটছে। বরাদ্দ পেলে ভাঙন রোধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।

বর্তমানে জেলার ৯টি উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, তিস্তা, ধরলা নদীর ৬৭টি পয়েন্টে প্রায় ৮কিলোমিটার জায়গা জুড়ে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এরমধ্যে ৫৩টি পয়েন্টে ৬কি.মি জায়গায় জরুরি ভিত্তিতে কাজ চলছে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড