• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

যৌতুকের জন্য গৃহবধূর শরীরে গরম খুন্তির ছেঁকা, চুল কর্তন

  তালতলী প্রতিনিধি, বরগুনা

১২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২৩:৪৬
যৌতুকের জন্য নির্যাতন
যৌতুকের জন্য গৃহবধূর শরীরে গরম খুন্তির ছেঁকা, চুল কর্তন (প্রতীকী ছবি)

দুই লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে বরগুনার তালতলী উপজেলায় স্ত্রী মার্জিয়ার (৩০) শরীরে গরম খুন্তির ছেঁকাসহ তার চুল কেটে দিয়েছে স্বামী মানিক খান।

গত বৃহস্পতিবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাতে যৌতুকের টাকা নিয়ে ঝগড়ার একপর্যায়ে স্ত্রীর গায়ে খুন্তির ছেঁকাসহ তার চুল কেটে দেন স্বামী, শাশুড়ি ও ননদ।

পরে শুক্রবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকালে তাকে উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৯ সালে তালতলী উপজেলার বড় আমখোলা গ্রামের আব্দুল খালেক খানের মেয়ে মার্জিয়ার সঙ্গে বরগুনা সদর উপজেলার ধুপতি গ্রামের আনোয়ার খানের ছেলে মানিক খানের বিয়ে হয়। বিয়ের পরে শ্বশুর খালেক খান জামাতা মানিককে বাড়ি নির্মাণের জন্য দুই লাখ টাকা দেন। ওই টাকা দিয়ে মানিক শ্বশুর বাড়ির পাশে একটি বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করে আসছে। ওই দম্পতির দুই কন্যা সন্তান রয়েছে।

তিন বছর আগে মানিক ঢাকা চলে যান। ওই সময় থেকেই স্বামী মানিক স্ত্রী মার্জিয়া ও দুই কন্যার কোনো খোঁজ-খবর নিচ্ছে না। পরবর্তীকালে বৃহস্পতিবার মানিক শ্বশুর বাড়ি আসেন এবং স্ত্রীকে তার বাড়িতে নিয়ে যান। ওই দিন রাত ১১টার দিকে স্বামী মানিক ব্যবসার কথা বলে স্ত্রী মার্জিয়ার বাবার কাছ থেকে ফের দুই লাখ টাকা যৌতুক এনে দিতে বলেন। এই টাকা দিতে স্ত্রী অস্বীকার করায় ক্ষিপ্ত হন মানিক। পরে মানিক স্ত্রী মার্জিয়াকে বেধড়ক মারধর শুরু করেন।

একপর্যায়ে স্বামী মানিক, ননদ জাকিয়া ও শাশুড়ি আলেয়া মিলে মার্জিয়ার শরীরের ১২টি স্থানে গরম খুন্তির ছেঁকা দেয় এবং তার চুল কেটে দেয়। পরে তার আত্মচিৎকার শুনে প্রতিবেশী এবং স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে। পরবর্তীকালে শুক্রবার সকালে গুরুতর আহত অবস্থায় স্বজনরা মার্জিয়াকে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।

এ দিকে, হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, গরম খুন্তির ছেঁকায় মার্জিয়ার শরীরের বিভিন্ন স্থান দগদগে ঘা হয়ে ফুলে গেছে। শরীর ব্যথায় নাড়াচাড়া করতে পারছে না, যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। শরীরের অন্যান্য জায়গায়ও আঘাতের ফলে কালচে দাগ হয়ে আছে।

প্রত্যক্ষদর্শী সুর্যভানু দৈনিক অধিকারকে বলেন, রাতে মানিক খানের বাড়িতে চিৎকার শুনে ছুটে যাই। গিয়ে দেখি মার্জিয়াকে স্বামী, শাশুড়ি ও ননদ মিলে মারধর করছে। তারা মার্জিয়ার শরীরে গরম খুন্তির ছেঁকা দিয়েছে। তিনি বলেন, আমি যাওয়ার পরে তারা মার্জিয়াকে ছেড়ে দেয়।

এ ব্যাপারে মার্জিয়ার বাবা আবদুল খালেক খান বলেন, ‘বিয়ের পর থেকে আমার মেয়েকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করে আসছে জামাতা। গত তিন বছর ধরে আমার মেয়ের কোনো খোঁজ-খবর নেয়নি। হঠাৎ বৃহস্পতিবার রাতে আমার মেয়েকে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। পরে জামাতা মানিক, তার বোন জাকিয়া ও মা আলেয়া মিলে আমার মেয়েকে নির্মম নির্যাতন করে। লোক না হলে ওরা আমার মেয়েকে মেরেই ফেলতো। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’

এ দিকে, গুরুতর আহত মার্জিয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘বিয়ের পর আমার বাবা আমার স্বামীকে দুই লাখ টাকা যৌতুক দেয়। ওই টাকা দিয়ে আমার বাবার বাড়ির পাশে বাড়ি নির্মাণ করে। তিন বছর আগে বিভিন্ন মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমাকে ফেলে রেখে ঢাকা চলে যান। আমার কোনো খোঁজ নেয়নি। বৃহস্পতিবার বাড়িতে এসে আমার বাবার বাড়িতে যায়। পরে আমাকে কৌশলে ওই রাতে তাদের বাড়ি নিয়ে যায় এবং ব্যবসার কথা বলে দুই লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। আমি এই টাকা দিতে অস্বীকার করায় আমাকে স্বামী, শাশুড়ি ও ননদ মিলে মারধর করে শরীরে গরম খুন্তির ছেঁকা দিয়েছে। মাথার চুল কেটে দিয়েছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’

তবে অভিযুক্ত স্বামী মানিক খাঁন যৌতুক চাওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘সামান্য ঝগড়াঝাঁটি হয়েছে মারধর কিংবা কোনো খুন্তির ছেঁকা দিইনি।’

আরও পড়ুন : টাকার বিনিময়ে ছেলে হত্যার আসামিদের ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ বাবার

এ ব্যাপারে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার নিখিল চন্দ্র দৈনিক অধিকারকে বলেন, মার্জিয়ার শরীরের ১২টি স্থানে আগুনে ঝলসে যাওয়ার মতো চিহ্ন রয়েছে। তার মাথায় পেছনের চুলও কাটা রয়েছে।

বিষয়টিতে তালতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান দৈনিক অধিকারকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড