অধিকার ডেস্ক
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার তিন পুলিশ কর্মকর্তাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে চাকরিজীবী এক নারীকে অপহরণের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ঢাকার ৪ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক তাবাসুম ইসলামের আদালতে বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) কেরানীগঞ্জের এক নারী ওই মামলাটি দায়ের করেন। তিনি পার্লারে চাকরি করেন।
পরে আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে বিষয়টির তদন্ত করে পুলিশকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
অপহরণ মামলার আসামিরা হলেন- কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন (৫৫), ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তুহিন রেজা (৪০), রাহাত ওরফে ডাকাত রাহাত (৩৫), জি এম সারোয়ার (৫৫), দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) শাহাদাত হোসেন, ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আশিকুজ্জামান ও অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহ জামান। একই সঙ্গে মামলায় আরও চার থেকে পাঁচজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগে বাদী উল্লেখ করেন, কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা ইউনিয়নের মীরেরবাগে দুই কন্যা সন্তান নিয়ে আমি বসবাস করি। চলতি বছরের ৩০ জুন আমি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে গণধর্ষণের শিকার হই। ওই ঘটনায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের একটি মামলা চলমান রয়েছে। গত ৫ জুলাই গণধর্ষণ মামলার এক নম্বর আসামি ইকবাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কিন্তু গণধর্ষণ মামলার অপর আসামিরা তিন পুলিশের সহায়তা নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং আমাকে ও সাক্ষীদের মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে।
এজাহারে বাদী অভিযোগ করেন, ২১ জুলাই আমাকে অস্ত্রের মুখে হত্যার হুমকি দিয়ে আমার দুই সন্তানকে রুমে তালাবদ্ধ করে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। আমি তাদের নগদ ১০ হাজার টাকা দেই। বিষয়টি আমি মোবাইলে তিন পুলিশ সদস্যকে জানাই। এরপর আমাকে মামলার আসামি ডাকাত রাহাতসহ চার থেকে পাঁচজন অপহরণ করে ইকবাল চেয়ারম্যানের তেলঘাটের অফিসে নিয়ে যায়। এরপর তারা আমাকে একটি গাড়িতে তুলে পল্টন থানাধীন বিজয়নগর সাইমন স্কাইভিউ টাওয়ারের সাততলায় একটি কক্ষে তিন ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। একপর্যায়ে ইকবাল চেয়ারম্যান, জি এম সারোয়ার ও তুহিন রেজাসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজন ওই রুমে প্রবেশ করে। এরপর তাদের শেখানো কথা আমার মুখ দিয়ে বলিয়ে তা রেকর্ড করে নেয়। পরে আমাকে হুমকি দেয় ধর্ষণ মামলা তুলে না নিলে আমার নামে ও সাক্ষীদের নামে অনেক মিথ্যা মামলা দেওয়া হবে।
মামলায় বাদী আরও অভিযোগ করেন, ২৩ জুলাই ইকবাল চেয়ারম্যান, তুহিন রেজা ও জি এম সারোয়ারের হুকুমে রাহাত ডাকাত আমাকে আবারও অপহরণ করে নিয়ে যায়। আমি মামলার আসামি তিন পুলিশকে অবগত করি। কিন্তু পুলিশ আমাকে নিরাপত্তা না দিয়ে উল্টো তাদের সাথে চলে যেতে বলেন। এরপর তারা আমাকে নজরুল ইসলাম সরণির আক্রাম টাওয়ারের লিফটের সাততলার একটি রুমে বসায়। তারপর সেখান থেকে নিয়ে রমনা থানা এলাকার একটি মদের বারে নিয়ে বসায়। একপর্যায়ে ইকবাল চেয়ারম্যান, তুহিন রেজা ও জি এম সারোয়ার আমাকে বলে ২৬ জুলাই কোর্টে গিয়ে ২২ ধারায় জবানবন্দি দিতে নয়তো অবৈধ মাদকদ্রব্য দিয়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেবে। এরপর তারা তিন পুলিশকে আমাকে ২২ ধারায় জবানবন্দি করোনার কথা বলে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয়।
আরও পড়ুন : শিকলে বেঁধে শিশুকে সৎ মায়ের নির্যাতন!
অভিযোগে বাদী আরও বলেন, ২৬ জুলাই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন আমার বাসায় এসে রাহাত ডাকাতসহ অজ্ঞাতনামা চার থেকে পাঁচজনের হাতে তুলে দিয়ে বলে যে, ‘ওকে কোর্টে নিয়া যাবি। ও যেন পালাতে না পারে।’ এরপর কড়া পাহারার মধ্যে আমাকে কোর্টে নিয়ে সাত থেকে আটটি কাগজে স্বাক্ষর নেয়।
একপর্যায়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন দুপর ১২টার দিকে কোর্টে এসে আমাকে বলে যে, ‘যদি চালাকি করিস তবে তোর দুই মেয়েকে জীবনের তরে হারাতে হবে। ইকবাল চেয়ারম্যানের লোক দিয়ে তোর মেয়েদের হত্যা করে ফেলব।’ পরে আমি নিরূপায় হয়ে তাদের শেখানো কথা আদালতের কাছে বলি। এরপর মামলা তদন্ত কর্মকর্তা আমাকে গেন্ডারিয়া ফাঁড়িতে নিয়ে বেশকিছু কাগজপত্রে স্বাক্ষর নিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দেয়।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড