• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৪ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মুন্সীগঞ্জে সেতুতে বাস চলাচল বন্ধ, দুর্ভোগে যাত্রীরা

  আরিফ রিয়াদ, মুন্সীগঞ্জ

০৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১০:০৯
বেইলি সেতু (ছবি : দৈনিক অধিকার)

১২০ মিটারের বেইলি সেতু। ক্ষয়ে যাচ্ছে মরচে ধরা প্রায় প্রতিটি পাটাতন ও রেলিংও। আর গাড়ি উঠলেই দুলতে থাকে সেতু। এমন অবস্থায় ছোট গাড়ি পার হলেও বন্ধ রয়েছে ভারি যানবাহন চলাচল। এ চিত্র মুন্সীগঞ্জের কুরে বাজার এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি সেতুর।

নব্বই দশকে টঙ্গীবাড়ী ও সিরাজদিখান উপজেলার সংযোগ সড়কের মধ্যে ভয়ে চলা তালতলা-গৌড়গঞ্জ খালের ওপর নির্মিত হয় এই সেতু। এটি পার হয়ে টঙ্গীবাড়ী উপজেলার লোকজন রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। এছাড়া এই উপজেলার মানুষ ঢাকায় ব্যবসা ও চাকরী করার কারণে তাদের কাছে এই বেইলি সেতুটির গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় টঙ্গীবাড়ী উপজেলায় চলাচল করা দুইটি বাস সার্ভিস বন্ধ রয়েছে। এতে টঙ্গীবাড়ীর-কালীবাড়ি-গুলিস্তান পথে বাসে চলাচলকারী যাত্রীদের দুর্ভোগ বেড়েছে।

এদিকে, ওই পথের যাত্রীরা বিকল্প পথ হিসেবে মুন্সীগঞ্জের কাঠপট্টি-সদরঘাট নৌ-পথ ব্যবহার করছেন। ফলে পুনরায় মনিংবার্ডলঞ্চ দুর্ঘটনার মতো ভয়াবহ হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন যাত্রীরা।

গত রবিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায়, বেইলি সেতুর রেলিংয়ের ওপর আড়াআড়িভাবে লোহার পাত দিয়ে বড় গাড়ি চলাচলের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। এতে করে ছোট ছোট গাড়ি চলাচল করতে পারলেও বড় গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে। বেইলি সেতু দিয়ে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে কয়েকগুণ।

স্থানীয় লোকজন জানান, প্রায় ৬ মাস ধরে সেতুটির ওপর দিয়ে ভারি যানবাহন ও যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় বেশ কয়েকবার মেরামত করা হয়েছে পাটাতন। পরে দুর্ঘটনার ঘটার সম্ভাবনা থাকায় সেতুটির ওপর দিয়ে বড় গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন সেতুর ওপর দিয়ে রিকশা ও ব্যাটরি চালিত ইজিবাইক সহ ছোট ছোট গাড়ি চলাচল করে। তবে এই সড়কে বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার কারণে এই পথের যাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে নৌ-পথ ব্যবহার করছেন। গত ২৯ জুন বুড়িগঙ্গা নদীতে মনিংবার্ড লঞ্চ দুর্ঘটনা ৩৪ জন মারা যায়। ওইখানে নিহতদের অধিকাংশ টঙ্গীবাড়ী উপজেলার। এছাড়া নিহতদের অনেকেই এই পথের বাসযাত্রী ছিল। এ সড়কে বাস সার্ভিস বন্ধ থাকায় নৌ-পথে ঝুঁকি নিয়ে মানুষ যাত্রা করছে।

বেতকা ইউনিয়নের বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, বেইলি সেতুটি দিয়ে রিকশা ও অটোরিকশা ছাড়া বড় গাড়ি চলছে না। তাই ঢাকার যাত্রীদের কয়েকদফা ভেঙে গন্তব্য স্থানে যেতে হচ্ছে । এতে ভোগান্তির পাশাপাশি বেশি অর্থ গুণতে হচ্ছে।

কামারখাড়া এলাকার বাসিন্দা জুবায়ের আহমেদ ঢাকায় কাপড়ের ব্যবসা করেন। প্রতিদিন কালিবাড়ী- গুলিস্থান পথে এসএস পরিবহনে যাতায়াত করে ব্যবসা করতেন। কিন্তু বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন তিনি। গাড়ি সংকট ও বেশি অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে বলে জানান এই ব্যক্তি।

এসএস পরিবহনের চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম ভূঁইয়া দৈনিক অধিকারকে বলেন, বেইলি সেতুটি দুপাশে লোহার পাত দিয়ে বন্ধ করে দেওয়ার কারণে টঙ্গীবাড়ী উপজেলায় বাস ঢুকতে পারছে না। অর্ধেক পথেই বাস সার্ভিস বন্ধ রয়েছে। টঙ্গীবাড়ীতে বাস সার্ভিস বন্ধ থাকার কারণে বাস ভাড়াও কমে যাচ্ছে । ফলে ক্ষতির মুখে পড়েছেন এ পথে চলাচল করা দুইটি বাস সার্ভিস কোম্পানি।

তিনি আরও বলেন, লোন করে অধিকাংশ বাস কেনা হয়েছে। লোন বাবদ প্রতিমাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা যোগার করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বাস মালিকদের। তাই দ্রুত এই বেইলি সেতুটি বাস চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হোক।

ডিএম পরিবহনের চেয়ারম্যান ফিরোজ আলম বলেন, সেতুটি বন্ধ থাকায় বেতকা, সোনারং, টঙ্গীবাড়ী , কালিবাড়ী এলাকায় বাস ঢুকতে পারছে না। এতে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবহনের মালিক ও যাত্রীরা। এখন সিরাজদিখান পর্যন্ত আমাদের বাস সার্ভিস চালু রয়েছে। তাও আবার একদিন আমাদের ডিএম পরিবহন বাস ছাড়ছে অন্যদিন এসএস পরিবহন চলাচল করছে।

বেতকা ইউপি চেয়ারম্যান আলম শিকদার জানান, দীর্ঘদিন ধরে সেতুটির দুপাশ বন্ধ রেখেছে সেতু কর্তৃপক্ষ। এ কারণে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ দিঘীরপাড়, কালিবাড়ী, বেতকা, সিরাজদিখান নিমতলি হয়ে রাজধানীর ঢাকায় যাওয়া আসা করেন। সেতু বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। বিষয়টি উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসন ও সড়ক বিভাগকে লিখিত ভাবেও জানানো হয়েছে। তবে এখনো কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

তিনি আরও বলেন, এ বেইলি সেতুটি বন্ধ থাকায় এই উপজেলার মানুষ এখন লঞ্চে ঢাকা যাতায়াত করছেন। মনিংবার্ড লঞ্চ দুর্ঘটনায় যারা নিহত হয়েছেন তারাও এ পথের নিয়মিত যাত্রী ছিলেন।

মুন্সীগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফা বলেন, বেইলি সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ। ধারণ ক্ষমতা পাঁচ টন। অথচ পাঁচটনের অধিক মালামাল নিয়ে ট্রাক চলাচল করতো। এতে যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার শঙ্কা ছিল। বড় যানবাহন যেন সেতুর উপর দিয়ে চলতে না পারে সে জন্য সেতুর দুইপাশ আটকে দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, খুব শীঘ্রই বেইলি সেতুর জায়গায় কংক্রিটের সেতু করা হবে। এটা আমাদের প্রোগ্রামের মধ্যে আছে। সেতুর কাজ শেষ করতে দুই বছর সময় লাগবে।

তাহলে এ পথে দুই বছর বাস চলাচল কি বন্ধ থাকবে? এমন প্রশ্নের জবাবে এই কর্মকর্তা জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে বেইলি সেতুর দুই পাশে পুলিশ পাহারার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। যেনো ট্রাক চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তাহলেই বাস চলাচলের ব্যবস্থা করে দেওয়া যাবে।

এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদার দৈনিক অধিকারকে বলেন, ওই সেতু দিয়ে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রী ভোগান্তির কথা জানতে পেরেছি। দ্রুত কিভাবে ওই পথ দিয়ে বাস চলাচল করতে পারে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এছাড়াও বেইলি সেতুর স্থানে কংক্রিটের সেতু নির্মাণের জন্য মন্ত্রনালয়ে যোগাযোগ করা হবে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড