• রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

জামালপুরে বন্যায় মাছ চাষে খামারীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে

  নিজস্ব প্রতিবেদক

২৭ আগস্ট ২০২০, ১১:০৫
জামালপুর
পুকুরের বিভিন্ন আকারের মাছ রাতারাতি বন্যার পানিতে ভেসে যায়

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং টানা বর্ষণে যমুনা পানি বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় দুই মাস জামালপুরে ১০লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। চারদিকে উপচে পড়া পানি উঠায় জেলার প্রায় ৫হাজার ৩৪৮টি পুকুরের বিভিন্ন আকারের মাছ রাতারাতি বন্যার পানিতে ভেসে যায়। মৎস্য চাষিদের সকল পুঁজি বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়ায় চরম হতাশায় দিন পাড় করছে।

জেলার সাত উপজেলার ৮ পৌরসভা এবং ৬০টি ইউনিয়নে বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছিল। চারিদিকে বন্যার পানি উঠায় মানুষকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। দ্রুত বেগে বন্যার পানি প্রবেশ করায় ৮শ ৫৮ হেক্টর জমিতে ৫হাজার ৩৪৮টি পুকুর চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পানিতে ভেসে গেছে পুকুরের বড় আকৃতির মাছ ১হাজার ৩২০মেট্রিকটন এবং পোনা মাছ ৯৮ লাখ। পুকুরগুলোর পাড় ভেঙ্গে যাওয়া জাল এবং টিনের বেড়া দিয়েও রক্ষ করতে পারেনি মাছগুলোকে। প্রবল পানির তোড়ে সব বিলীন হয়ে যায়। সেই সাথে নিভে যায় খামারীর আশার প্রদীপ। পুঁজি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে ৪হাজার ৬০৮জন মৎস্য খামারি। জেলায় বন্যার পানিতে পুকুরের মাছ ভেসে গিয়ে চাষিদের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২২কোটি টাকার।

এসময় পুকুরের অবকাঠামোও প্রচুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অধিকাংশ মৎস্য চাষিরা ঋণ দেনা করে পুকুরে মৎস্য চাষ শুরু করে আসছিল। আর্থিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ায় খামারীদের পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর দিনযাপন করছে। ব্যাংক ঋণের টাকা ,এনজিওদের কিস্তি, দোকানের মাছের খাবারের বাকী টাকার পরিশোধ কিভাবে করবে? এত ঋণের বোঝা মাথা নিয়ে দিশেহারা এখন মৎস্য খামারীরা। সরকারি সহযোগিতা না পেলে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হবে না।

মৎসচাষী মিল্টন মিয়া জানান, জামালপুরে এবারের বন্যায় আমাদের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়েছে। আমার পুকুরের প্রায় মাছ লাখ টাকার মাছ পানি তোড়ে চোখের ভাসিয়ে নিয়ে গেছ। দেখা ছাড়া আর কিছুই করতে পারিনি। অনেক ঋণ দেনা করে মাছ চাষ করেছিলাম। ভাগ্য আমাকে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দিল না। বর্তমানের আমি নিঃস্ব।

বয়স্ক সুলতান মিয়া দুটি ছোট বড় পুকুর নিয়ে মাছ চাষ করে ভাল দিন কাটছিল। হঠাৎ ভয়াবহ বন্যায় পুকুরের সাড়ে তিন লাখ টাকার মাছ পানিতে ভেসে যায়। পুকুরে পাড়ে জাল দিয়ে ঘের দিয়েও মাছ আটকাতে পারেনি। এখন পাওনা দারের টাকা কিভাবে শোধ করবে তার চিন্তায় ভেঙ্গে পড়েছে। মনোবল হারিয়েছে নতুন করে মাছ চাষে।

তবে জেলার মৎস্য খামারীরা জানিয়েছেন সরকারে সহজশর্তে ঋণ ও প্রণোদনা দিলে হয়ত আবারো মাছ চাষে ফিরে আসতে পারি। না হলে কোন ভাবেই করা সম্ভব না। সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মমতাজুন্নেছা, জানান, ভয়াবহ বন্যায় জেলার সাত উপজেলায় মৎস্য চাষিদের অনেক লোকসান হয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের তালিকা প্রণয়ন করছি, সরকার সহজ কিস্তিতে কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে লোণের ব্যবস্থা করেছে।এছাড়াও আমরা নিয়মিত মৎস্য চাষিদের সাথে বসে বিভিন্ন সভা করছি, বন্যা পরবর্তী সময় কি ধরনের মাছ চাষ করতে হবে । কোন ধরনের খাবার ও মাছে রোগ প্রতিরোধের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে । চাষিদের মনোবল বৃদ্ধিতে আমাদের কার্যক্রম চলমান থাকবে।

আরও পড়ুন : দীর্ঘ বিরতির পর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় লঞ্চ চলাচল শুরু

সাধারণ মানুষ মনে করছে দেশের আমিষের চাহিদা পূরণ করতে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের সরকারিভাবে আর্থিক সহায়তা দিয়ে মৎস্য চাষে ফিরিয়ে আনবেন।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড