মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি
চলমান বন্যায় আউস, বোনা আমন ও রোপা ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকেরা ধানের সঙ্গে গো-খাদ্য হিসেবে খড়ও হারিয়েছেন। ফলে গো-খাদ্য পাওয়ার সুযোগ তেমন নেই। এমতাবস্থায় মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার দিঘীরপাড় ইউনিয়নের সরিষাবন ও ধানকোড়া গ্রামে কৃষকেরা শুধু কচুরিপানা ও করমির লতাপাতা খাইয়ে গরু-বাছুর বাঁচানোর চেষ্টা করছেন।
বুধবার (২৬ আগস্ট) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, গরুর সামনে কচুরিপানা ও করমির লতাপাতা খাওয়ানো চেষ্টা করছেন কৃষকরা। বেশ কয়েকজন কৃষক গরুর জন্য বন্যার পানির সঙ্গে ভেসে আসা কচুরিপানা ও করমি সংগ্রহ করছেন। কেউবা কাঁধে করে সেই কচুরিপানা ও করমি বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন।
ধনকোড়া গ্রামের আনোয়ার শেখ তার পাঁচটি গরুর জন্য করমির লতাপাতা কাঁধে করে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। কথা হলে তিনি বলেন, ‘একবারে খের (খড়) নাই। পাঁচটা গরু। খালি ফেনা (কচুরিপানা) ও করমির লতাপাতা আর পানি খাওয়াই।’
কাছেই দাঁড়ানো কৃষক রহমান কাজী দৈনিক অধিকারকে বলেন, ‘বন্যার কারণে এখন অবসর আছি। কোনো কামকাজ নাই। আগে ১১ বিঘা বোনা আমন ধান খেত পানিতে গেল। বোনা আমনের খের পাইছি না। সাতটা গরু। শুধু কচুরিপানা খাওয়াইয়া লালনপালন করছি।’
সরিষা বন এলাকার সামির দেওয়ান বলেন, কুরবানি ইদে দুইটা গরু ১ লাখ ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। সেই গরু বিক্রির টাকা দিয়ে আবার দুইটা বাছুর কিনেছি। কিন্তু বন্যার কারণে কাঁচা ঘাসের সংকট পড়েছে। এখন করমি লতাপাতা খাওয়াই কিন্তু বাছুরগুলো খেতে চায় না। তাই গরু বিক্রির বাকি টাকা বসে বসে নিজে খাই আর বাছুরগুলোরে খাওয়াই।
তিনি আরও বলেন, একটি ঘর একটি খামার থেকে সাড়ে ১২ কেজি ফিড পেয়েছিলাম, তা ১২ দিনও যায়নি।
এ দিকে, জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর, লৌহজং ও টঙ্গীবাড়ী উপজেলার ২২ ইউনিয়নের ৩৫ হাজার ৩২৫টি গরু, ৫ হাজার ৫টি ছাগল ও ২৩০টি ভেড়া পানিবন্দি রয়েছে। এছাড়া ৫২ হাজার ১০২ একর গোচারণ ভূমি ও কাঁচা ঘাসের জমি তলিয়ে গেছে।
এ দিকে, বন্যায় জেলার ১৩৩টি গবাদি পশু খামারের অবকাঠামোজনিত ক্ষতি হয়েছে সাড়ে ৮১ লাখ টাকা। পাশাপাশি দানাদার খাদ্য ১ হাজার ২০৪ মেট্রিক টন, খড় ৯২৬ মেট্রিক টন ও কাঁচা খাস ১৪ হাজার ১২২ মেট্রিক টন ক্ষতি হয়েছে। পশুখাদ্যের বিনষ্টজনিত কারণে আরও ৭ কোটি ৫৯ লাখ ৯ হাজার ৫০০ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
আরও পড়ুন : ‘হত্যার শিকার’ কিশোরী মিলল জীবিত, এসআই প্রত্যাহার
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কুমোত রঞ্জন মিত্র দৈনিক অধিকারকে বলেন, দীর্ঘমেয়াদি বন্যায় গবাদিপশুর ক্ষতি হবে এটা স্বাভাবিক। তবে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে ৩ হাজার ৮২৫টি গবাদিপশু ও ২৯ হাজার ৭০০টি হাঁস-মুরগিকে টিকা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ৩৩৫টি গবাদি পশু ও ১২ হাজার ৪০০টি হাঁস-মুরগিকে। একই সঙ্গে এখন পর্যন্ত ৫ দশমিক ৭৫ টন পশুখাদ্য বিতরণ করা হয়েছে বলেও জানিয়েন কর্মকর্তা ডা. কুমোত রঞ্জন মিত্র।
অন্যদিকে জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, এখন পর্যন্ত জেলায় গো-খাদ্যের জন্য ১৪ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড