• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বছর না ঘুরতেই ধ্বসে পড়েছে কোটি টাকার সড়ক

  কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

২২ আগস্ট ২০২০, ২২:৫৪
সড়কের বেহাল দশা
সড়কের বেহাল দশা (ছবি : দৈনিক অধিকার)

কুড়িগ্রামের উলিপুর পৌরসভার জাইকা প্রকল্পের অধীনে নির্মিত প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়ক বছর না ঘুরতেই ধ্বসে পড়েছে। হেলে পড়েছে সড়ক রক্ষায় নির্মিত দু’টি গাইড ওয়াল। ঠিকাদার সরকার দলীয় প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি আমলে না নিয়ে চূড়ান্ত বিল প্রদানের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে পৌর কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে পৌরবাসীদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

উলিপুর পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, নারিকেল বাড়ি তিস্তার পাড় সটিবাড়ি থেকে খামার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত ১৩শ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ ফিট প্রস্থের সড়ক জাইকা প্রকল্পের অধীনে ৯৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৯ সালে নির্মাণ করা হয়। এ সময় সড়কটি ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষার জন্য দুই স্থানে গাইড ওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। সড়কটির নির্মাণ কাজ করেন স্থানীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স অন্বেষা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা শাহীনুর আলমগীর ওরফে আলম।

প্রত্যক্ষদর্শী এলাকাবাসীরা জানায়, সড়কটি নির্মাণের সময় নিম্ন মানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হয়। এ সময় স্থানীয়রা কয়েক দফায় বাঁধা দিলে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে কাজ সম্পন্ন করেন ওই ঠিকাদার। অনিয়ম-দুর্নীতি প্রকাশ্যে ঘটলেও পৌর কর্তৃপক্ষ অদৃশ্য কারণে ছিল নিশ্চুপ।

ফলে বছর না ঘুরতেই ২০২০ সালের মার্চ-এপ্রিল মাসে বৃষ্টি শুরু হলে নির্মিত সড়কের দুই স্থানে প্রায় ১শ মিটার ধ্বসে পড়ে। একই সঙ্গে ৮ বছর পূর্বে নির্মিত কাঁচা সড়ক রক্ষায় ১শ ফিটের গাইড ওয়ালের সঙ্গে ২০ফিট নতুন করে গাইড ওয়াল নির্মাণ করা হয়। এছাড়া পৃথক এক স্থানে ৮০ফিট গাইড ওয়ালও নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে সড়কটির ওই দুই স্থান ধ্বসে যাওয়ায় গাইড ওয়াল হেলে পড়েছে। এ কারণে ১০ ফিট প্রস্থের সড়কের কোথাও ৬ফিট কোথাও ৭ফিট করে রাস্তা এখন দৃশ্যমান। ফলে প্রতিনিয়তই সেখানে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন পথচারী ও যানবাহন ব্যবহারকারীরা। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সড়কটি নির্মাণের সময় ৮ বছর পূর্বে নির্মিত গাইড ওয়ালটি ঘসে-মেঝে নতুন নির্মিত বলে কাগজে কলমে চালিয়ে দেয় পৌরসভার কর্মকর্তা কর্মচারী। বর্তমানে সড়ক ধ্বসে পড়াসহ গাইড ওয়াল হেলে পড়লেও ওই কাজের চূড়ান্ত বিল প্রদানের প্রস্তুতি সম্পন্ন করছেন পৌরসভা কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় অধিবাসী কামরুজ্জামান (৯০), আ. খালেক (৫৪), মঞ্জুরুল ইসলাম (৬৮), নুর হাবীব (২৬), সানি রায়হান (১৯), আরিফ মিয়া (২২) সহ অনেকে অভিযোগ করে বলেন, সড়কটি নির্মাণের সময় ঠিকাদার নিম্ন মানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করার সময় বাঁধা দিলে তিনি ক্ষমতাসীন দলের দাপট দেখিয়ে সবাইকে চুপ করিয়ে রাখেন। একই সঙ্গে ৮ বছর পূর্বে নির্মিত গাইড ওয়ালটি ঘসে-মেঝে নতুন নির্মিত বলে কাগজে কলমে চালিয়ে দেয়। ঠিকাদার শাহীনুর আলমগীর ওরফে আলম উলিপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-প্রচার সম্পাদক। তিনি ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব খাটিয়ে উপজেলার ঠিকাদারি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন। অভিযোগে আরও জানা যায়, জেলা এবং জেলার বাহিরের ঠিকাদারগণ এ উপজেলায় কোন কাজ পেলে স্থানীয় ঝামেলা এড়ানোর জন্য তার কাছে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন। আর এ সুযোগে গোটা উপজেলায় ৮-১০টি সাইডে কয়েক কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে তার। এসব কাজেও নিম্ন মানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স অন্বেষা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী শাহীনুর আলমগীর ওরফে আলম আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, জাইকা প্রকল্পের অধীনে ওই সড়কের কাজ ৩ বছর পূর্বে করা হয়েছে। সড়কটি ধ্বসে পড়া ও দুই স্থানে গাইড ওয়াল হেলে পড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, বন্যার সময় সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে তিনি এ বিষয়ে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করেন। উলিপুর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মাহাবুবুল আলম বলেন, ওই সড়কের কিছু অংশ ধ্বসে পড়ার বিষয়ে তিনি অবগত আছেন। বিল প্রদানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, চূড়ান্ত বিল প্রদানের প্রস্তুতি চলছে। তিনি আরও বলেন, বিল প্রদানের পূর্বেই যদি ক্ষতিগ্রস্ত অংশ ঠিকাদার নির্মাণ করে না দেন তাহলে প্রয়োজনে সড়কের ক্ষতিগ্রস্ত অংশের বিল কর্তন করে চূড়ান্ত বিল প্রদান করা হবে। গাইড ওয়ালের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঠিকাদার গাইড ওয়ালের পাশ থেকে মাটি তুলে সড়কের পাশে ফেলায় গাইড ওয়াল হেলে পড়েছে।

এ প্রসঙ্গে জাইকা প্রকল্পের রংপুর বিভাগীয় রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার (আর.ই) বিজয় কুমার দাসের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমাকে জানতে হবে এবং দেখতে হবে। এরপর এ বিষয়ে সঠিক মন্তব্য করতে পারব। উলিপুর পৌরসভার মেয়র তারিক আবুল আলা অভিযোগের ব্যাপারে সুস্পষ্ট কিছু না বললেও এ প্রতিবেদকের কাছে দাবি করেন, এখানে ঠিকাদারের খুব একটা দোষ নেই। যতদূর শুনেছি স্থানীয় লোকজন রাস্তার পাশ থেকে মাটি কাটায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

উলিপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মন্টু বলেন, দলের প্রভাব খাটিয়ে কেউ কোন অন্যায় কাজ করলে তা সমর্থন যোগ্য নয়। জাইকা প্রকল্পের কাজ তো আরও সেনসিটিভ। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সবচেয়ে নিম্ন মানের কাজ হয়েছে উলিপুর পৌরসভার এ প্রকল্পে। দলের নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ কোন অন্যায় কাজ করলে তা ঠিকাদারি হউক বা অন্য কিছু হউক তার দায় দায়িত্ব দল নিবে না। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট বিভাগ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে দল বাধা দিবে না।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড