পঞ্চগড় প্রতিনিধি
ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা জেলা পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতমেড়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে বাঘের আতঙ্কে দিন কাটছে স্থানীয়দের।
জানা গেছে, সীমান্ত সংলগ্ন গ্রাম মুহুরিজোত, সাহেবীজোত, উষাপাড়া ও বাদিয়াগছ এলাকার কয়েক হাজার মানুষ বাস করে। বিগত কয়েকদিন ধরে ওই এলাকায় দিনে ও রাতে বেশ কয়েকটি বাঘের দেখা মিলেছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা। এমনকি ওই এলাকায় বাঘের আক্রমণের শিকার হয়েছে গরু-ছাগলও। বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে বাঘের পায়ের ছাপও। বাঘের আনাগোনা দেখা যাওয়ায় ওই এলাকায় মানুষেরা চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন গ্রামের মানুষ।
বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ জনপ্রতিনিধিরাও। বাঘ ধরতে এরই মধ্যে ঢাকা থেকে বন বিভাগের প্রশিক্ষিত কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ শুরু করেছেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সদর উপজেলার সাতমেরা ইউনিয়নের মুহুরিজোত গ্রামের শেষ প্রান্তের প্রায় চার একরের পরিচর্চাবিহীন জঙ্গলাকীর্ণ চা বাগান এলাকায় শত শত উৎসুক মানুষের ভিড়। দূর-দূরান্ত থেকে তারা বাঘ দেখতে এসেছে। ওই চা বাগানের ঝোপঝাড়ে বাঘ লুকিয়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। কেউ কেউ চা বাগানের ভেতরে ঢুকেও বাঘের দেখা পাওয়ার চেষ্টা করছে। বিভিন্ন স্থানে বাঘ ধরতে ফাঁদ পেতে রাখা হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, এক মাস ধরেই রাতে পথে-প্রান্তরে বাঘ দেখছে তারা। আকারে লম্বা ও গায়ে কালো গোল ছোপ দেখে তারা ধারণা করছে, বাঘগুলো চিতাবাঘ। দুটি বড় ও তিনটি বাচ্চা বাঘ রাত হলেই বের হয়ে গ্রামের দিকে চলে আসে। পাশের মহাসড়কেও বাঘ চলাফেরা করতে দেখেছে পথচারীরা। এরা শিকার ধরতে ঝোপঝাড়ের পাশে ওঁৎ পেতে থাকে।
স্থানীয়রা ধারণা করছেন, বাঘগুলো ভারত থেকে সীমান্ত দিয়ে ওই এলাকায় প্রবেশ করেছে। এক সপ্তাহ ধরে বাঘের আনাগোনা আরও বেড়ে গেছে। বুধবার (১৯ আগস্ট) বিকালে ঊষাপাড়া এলাকার আবুল কালাম ওই চা বাগানের পাশ দিয়ে গরু নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে তার একটি গরুর ওপর আক্রমণ করে বসে একটি চিতাবাঘ। বাঘের আক্রমণে মুহূর্তেই মারা যায় গরুটি। গরুটি উদ্ধার করতে গেলে তার দিকেও তেড়ে আসে বাঘ। পরে তার চিৎকারে স্থানীয়রা ছুটে এলে বাঘটি পালিয়ে যায়।
এরপর থেকে বাঘের আতঙ্ক আরও প্রকট আকার ধারণ করে। স্থানীয়রা এখন একা একা বাড়ি থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছেন। প্রয়োজন ছাড়া কেউ হাট-বাজারে যাচ্ছে না। গেলেও দল বেঁধে যাচ্ছেন। এতে রাতেও শান্তিতে ঘুমাতেও পারছেন না তারা। প্রতিটি বাড়িতে বড় টর্চ লাইট রাখা হয়েছে। রাত জেগে বাঘ পাহারা দিচ্ছে গ্রামের মানুষ।
এ ব্যাপারে ঊষাপাড়া গ্রামের আবুল কালাম দৈনিক অধিকারকে বলেন, ‘আমি গরু নিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম। যে গরুটি সবার আগে আগে যাচ্ছিল সে গরুটির ওপর হামলা করে বাঘটি। মুহূর্তের মধ্যে গরুটি হত্যা করে তার কাছে বসে ছিল বাঘটি। আমি গরুটি উদ্ধার করতে গেলে আমার দিকেও তেড়ে আসে। পরে আমি চিৎকার করলে স্থানীয়রা ছুটে আসে। তখন দ্রুত পালিয়ে যায় বাঘটি। আমার ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার গরুটি মেরে ফেলল বাঘ। এর আগে আরেকটি ছাগলের ওপর হামলাও করেছে বাঘ।’
অপরদিকে মুহুরিজোত গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সপ্তাহখানেক আগে দশমাইল বাজার থেকে আমরা তিনজন হেঁটে বাড়ি ফিরছিলাম। ফেরার পথে হঠাৎ দেখলাম একটি বাঘ সড়ক পার হয়ে চা বাগানের দিকে যাচ্ছে। আমরা লাইট নিয়ে পেছনে পেছনে কিছুদূর গিয়ে দেখি জঙ্গলের ভেতরে ঢুকে পড়েছে বাঘটি। তারপর থেকেই প্রতিদিন আতঙ্কের মধ্যে কাটাচ্ছি আমরা। প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে কেউ বের হচ্ছি না। দিনের বেলায়ও মাঠে কাজ করতে ভয় হচ্ছে।’
এ বিষয়ে পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফ হোসেন দৈনিক অধিকারকে বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বাঘের কিছু আলামত পেয়েছি। বন বিভাগের কর্মকর্তারা বাঘ ধরা বা বাঘের অবস্থান নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছেন। আমরা এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করেছি। এছাড়া স্থানীয়দের প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বের না হওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। পাশাপাশি বাঘের আক্রমণে যাদের গরু-ছাগল মারা গেছে, আমরা তাদের সহযোগিতা করব।’
আরও পড়ুন : ‘আমাকে ক্ষমা করে দিস মা’- বলেই বাবারও রেললাইনে ঝাঁপ!
এ ব্যাপারে দিনাজপুর সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুর রহমান বলেন, স্থানীয়দের তথ্য মতে দুটি প্রাপ্তবয়স্ক ও তিনটি বাচ্চা বাঘ দেখেছে তারা। তাদের বর্ণনা অনুযায়ী আমরা ধারণা করছি, বাঘগুলো চিতাবাঘ। আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারা ঢাকা থেকে একটি অভিজ্ঞ টিম পাঠিয়েছে। তবে বাঘগুলোর সুনির্দিষ্ট অবস্থান এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি বাঘগুলোর অবস্থান নিশ্চিত হয়ে বাঘগুলোকে জীবিত অবস্থায় ধরতে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড