নিজস্ব প্রতিবেদক
শিকদার লিটন। এমন কোনো অপরাধ নেই, যার সঙ্গে জড়িত নয় সে। চাঁদাবাজি, প্রতারণা ও প্রাণনাশের হুমকি, সাইবার অপরাধসহ প্রায় ডজনখানেক মামলার আসামি শিকদার লিটন। এছাড়া নানা অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় দুই ডজনেরও বেশি জিডি (সাধারণ ডায়েরি) আছে।
শিকদার লিটনের বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের চর আজমপুর গ্রামে। ওই গ্রামের সিদ্দিক শিকদারের ছেলে শিকদার লিটন। স্থানীয়দের কাছে সে প্রতারক ও ছদ্মবেশী অপরাধী বলেই বেশি পরিচিত।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মানুষকে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরে চাকরি দেওয়ার নাম করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে শিকদার লিটন। একবার তার হাতে টাকা গেলে সেই টাকা কেউ ফেরত পেয়েছেন এমন নজির নেই।
বিনিময়ে চাকরি তো দূরের কথা, টাকা চাইতে গেলে উল্টো প্রাণনাশের হুমকি-ধমকি দেওয়ার অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। এসব অপরাধের দায়ে একাধিক মামলাও হয়েছে তার বিরুদ্ধে।
চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর লিটন ভুক্তভোগীর ফোন ধরা বন্ধ করে দেন। কোনোভাবে যোগাযোগ করলেও তাদের নানাভাবে হয়রানি করেন। সম্প্রতি ফাঁস হওয়া এমন একটি অডিও দৈনিক অধিকারের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-
শিকদার লিটন: হ্যালো
পাওনাদার: আস্সালামু আলাইকুম
শিকদার লিটন: ওয়ালাইকুম আস্সালাম।
পাওনাদার: কি অবস্থা, কেমন আছেন?
শিকদার লিটন: আছি ভালো, তুই কেমন আছিস?
পাওনাদার: আছি...। ভারতের থেকে আসলাম, এক মাস থেকে।
শিকদার লিটন: ভালো কাজ করেছিস, ভারতের বাড়ি, বিদেশের বাড়ি এক মাস থেকে যে আসলি এ তো ভালো কাজ।
পাওনাদার: আচ্ছা এখন কি ফ্রি আছেন?
শিকদার লিটন: হ্যাঁ, ফ্রি।
পাওনাদার: এখন আমি বলতাছি কোনটা, আপনার কাছে যে টাকাগুলো রয়েছে। এখন তাতে কি হবে?
শিকদার লিটন: তুই তো আমাকে ‘বিলিভ’ করতেছিস না, ইদানিং যা দেখতেছি তোর কার্যক্রমে, তাতে আমি অসন্তুষ্ট হচ্ছি।
পাওনাদার: না ভাই, আমার কথাটা বোঝেন। আমার কথাটা হলো একজন পরীক্ষা দিতে গেলে তার মনে করেন যে, সামান্য কিছু হলেও হবে। ৪০ কিংবা ৫০ হলেই আসতে পারত। কিন্তু আপনি লাস্টের দিকে এসে বললেন টাকা লাগবে। তখন তো আমার কষ্ট লাগল।
শিকদার লিটন: তোরে আমি যে সুযোগটা দিলাম। সেই সুযোগটা হাতছাড়া করলি কেন?
পাওনাদার: আমার কাছে যদি টাকা না থাকে তখন আমি কি করব, আপনিই বলেন?
শিকদার লিটন: এই কথা যে তুই বলিস, এতে আমারও লজ্জা লাগছে যে, তোরে আমি ছোট ভাই বানিয়েছি। ছোট ভাইয়ের যে কাজ টা...। তুই এখন কোথায় আগে সেটা বল।
পাওনাদার: আমি এখন শেখ বাড়িয়া আছি।
শিকদার লিটন: মানে শেখ বাড়িয়া বলতে কি, আমাদের খুলনায়?
পাওনাদার: না, না। বাংলাদেশ বর্ডারে।
শিকদার লিটন: ও বর্ডারে...। উপরে না নিচে?
পওনাদার: উপরে আছি।
শিকদার লিটন: ও, এই জন্য মোবাইলে ইমু ভরে ফোন দিয়েছিস। ইমুতে তো ফোন দিস নাই।
পাওনাদার: না, না ইমু এখনো ভরিনি। কেবল টাকা এসেছে।
শিকদার লিটন: ও আচ্ছা। এখন বিষয় হলো, তুই একটা জিনিস দেখবি। তোর আর আমার ভিতরে একটা আত্মার সম্পর্ক ছিল। সেই আত্মার সম্পর্কের মাঝে তুই একটু কিছু মিসিং করে, আমাকে যেমন তুই কষ্ট দিয়েছিস। আমিও ঠিক কাজগুলি তোকে বুঝিয়ে দিতে না পারার করণে। তোর একটু কষ্ট লাগছে। ব্যাপারটা বুঝেছিস?
পাওনাদার: আপনি তো জানেনই, আমার তো কষ্টটা এই যায়গায়, আমার পরীক্ষায় আমাকে বের করতে পারলেন না।
শিকদার লিটন: এখন একটা বিষয় বলি, ভাইটি শোন। ব্যাপার হলো কি। তোদের এই ব্যাপারগুলি অনেক আগে থেকে প্রসেসিং এর ব্যাপার থাকে। আগে থেকে যদি শক্ত অবস্থান থাকত। তাহলে কিন্তু ওই সময়টা যে ত্রুটিগুলো হলো, সে ত্রুটিগুলো হতো না। তা এখন যে ত্রুটি হয়েছে। আমি অলরেডি কাছাকাছি আছি। এখন তুই যদি বলিস।
ভাই পুনরায় আপনি দ্রুত কথাবার্তা আগের থেকে ফাইনাল করে রাখেন। আমি অলরেডি সে ভাবে কথাবার্তা বলতেছি। সেভাবে ফাইনাল করে রাখতেছি। তবে একটা জিনিস মনে রাখবি। আমার হাত দিয়ে টাকা যেখানে গেছে। দুইদিন আগে হোক, আর তিনদিন পরে হোক।
এই হাত দিয়ে টাকা যেখানে যাবে, সেই বেটা যদি পৃথিবীতে বেঁচে থাকে আমার টাকা মেরে দেওয়ার মতো অবস্থা নেই। আচ্ছা। আমার টাকা যেহেতু মাইর দিতে পারবে না। টাকা অবশ্যই ব্যাক পাব। অতএব, এই যে আস্থা আর বিশ্বাস। এইটুকু তোর যদি থাকে। তুই অগ্রগতি হইস।
আমার মনে হয় যে, আগের যে হৃদ্যতা। আমি নিজেও লজ্জা পাই। যে একটা ছেলে, একটা পরিবার, আমার প্রতি এতো ভক্ত। আমি তাকে কি দিতে পারলাম। এই জন্য নিজেও অনেক সময় ইচ্ছা করে লজ্জাতে ফোন ধরিনি। কথা বলিনি। তো যাই হোক, এখন আমি ব্যাপারগুলো দেখতেছি। তুই একটা কাজ কর। তুই আসবি কবে? ঢাকার দিকে আসবি কবে?
পাওনাদার: আমি ঢাকা হয় তো ৪ থেকে ৫ দিনের ভেতরে যাব।
শিকদার লিটন: আচ্ছা। তুই ৪ থেকে ৫ দিনের ভেতরে ঢাকায় এসে একবার দেখা কর। দুই ভাই সাক্ষাতে কথাবার্তা বলি। তোর মনে যত দুঃখ কষ্ট আছে। আমার মনে হয় সাক্ষাত হলে তোর মনের যত দুঃখ কষ্ট আছে তা হয় তো দূর হয়ে যাবে নে।
পাওনাদার: আমি তো...। আমার কথা বোঝেন। আমি তো ঢাকা গেলে আপনাকে পাই না। সেদিনকা আপনার জন্য সারাটাদিন বসে থাকলাম, আপনি আসলেন না।
শিকদার লিটন: আচ্ছা। আমি এখন অলরেডি তোর...। যা মিসিং হইছে। তো হইছে। মিসিং তো মিসিং। মিসিংটাকে সামনে এনে উভয়ের মধ্যে কষ্ট না নেই। আর আমি তালে এখনি। আমার ফোনে তো ব্যালেন্স নেই। তুই কি কিনারে আছিস?
পাওনাদার: জি, এই তো টলারে থেকে চলে যাব।
শিকদার লিটন: আচ্ছা, ঠিক আছে। তাহলে আমার এই গ্রামীণ নাম্বারে যদি পারিস ১১৭ টাকা রিচার্জ করে দে তো, ১১৭ টাকা। আমি তাহলে এখনি ফোন দিয়ে আমি তোরে জানাচ্ছি পরে।
পাওনাদার: দাদা, এখন হবে নানে। কারণ আমি টলারঘাটে আছি তো। টাকার দোকান থেকে দূরে আছি।
শিকদার লিটন: আচ্ছা। ঠিক আছে। তাহলে দরকার নেই।
পাওনাদার: আমি বলতাছি কোনটা। লাস্টের দিকে যখন বললেন, কিছু টাকা গুছিয়ে দিতে। ওই সময় কষ্ট লাগে কি...।
শিকদার লিটন: আচ্ছা। তুই ঢাকায় আয়। ঢাকায় আয়। আমি দেখতেছি।
পাওনাদার: আচ্ছা। ঠিক আছে।
শিকদার লিটন: আচ্ছা।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড