সারাদেশ ডেস্ক
অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানকে হত্যার ঘটনায় পুলিশের করা মামলার তিন সাক্ষী র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাদের অপহরণের অভিযোগে পাল্টা মামলা হয়েছে।
পুলিশের দায়ের করা মামলার তিন সাক্ষী হলেন- মো. আয়াছ, নুরুল আমিন ও নাজিম উদ্দিন।
মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) সকালে টেকনাফ থানায় তিন সাক্ষীর একজন নুরুল আমিনের মা খালেদা বেগম বাদী হয়ে অপহরণের মামলাটি করেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এর আগে সোমবার (১০ আগস্ট) মেজর (অব.) সিনহা হত্যা মামলায় পুলিশের করা তিন সাক্ষীকে সাদা পোশাকে তুলে আনে র্যাব সদস্যরা। পরে মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) দুপুরে র্যাব এদের তুলে আনার কথা স্বীকার করে ও তাদের আদালতে ওঠায়।
বুধবার (১২ আগস্ট) বেলা সোয়া ১১টার দিকে সিনহা হত্যা মামলায় পুলিশের করা মামলার ওই তিন সাক্ষীর ৭ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
টেকনাফ মডেল থানার নবনিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল ফয়সাল জানান, পুলিশের মামলায় যে তিনজনকে সাক্ষী করা হয়েছে তাদের মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে তদন্ত কমিটির কাছে জবানবন্দি দেওয়ার কথা ছিল। ওই সংক্রান্ত চিঠি নিয়ে পুলিশের একটি টিম সোমবার তিন সাক্ষীর গ্রামে যায়। সেখানে গিয়ে দেখা যায় সাক্ষী আয়াজ ও নুরুল আমিনের বাড়ি তালাবদ্ধ। নিজাম উদ্দিনের খোঁজ নেই।
আরও পড়ুন : সিনহা হত্যায় সহযোগিতা করে পুলিশের মামলার তিন সাক্ষী
তিনি জানান, তখন তিনি একটি টিম নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের বাড়িতে না পাওয়ার ব্যাপারটি যাচাই করেন। তখন স্বজনরা পুলিশকে জানান, সাদা পোশাকে কে বা কারা তাদের নিয়ে গেছে। এটা জানার পর পুলিশ স্বজনদের জানায়, চাইলে এ ঘটনায় তারা মামলা করতে পারেন। এরপর মঙ্গলবার সকালে নুরুল আমিনের মা খালেদা বেগম বাদী হয়ে মামলা করেন। সেখানে তিনজন নিখোঁজ হওয়ার কথা বলা হয়।
ওসি আরও বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে তারা জানতে পারেন ওই তিনজনকে র্যাব গ্রেপ্তার করেছে।
এদিকে অপহরণ মামলার বাদী সাক্ষী নুরুল আমিনের মা খালেদা বেগম বলেন, ভোর রাতে আমাকে টেকনাফ থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। সেখানে দুটি কাগজে টিপ সই নিয়ে আমাকে আবার বাড়িতে পৌঁছে দেয় পুলিশ।
হাতের টিপসইয়ের ছাপ দেখিয়ে খালেদা বেগম বলেন, ‘পুলিশ বলছে তোর ছেলের মরা মুখ না দেখতে চাইলে এখানে টিপসই দে’।
র্যাব সদস্যদের অজ্ঞাতনামা সাদা পোশাকের লোক হিসেবে উল্লেখ করে, মধ্যরাতেই অপহরণ মামলা নিয়ে নেয় টেকনাফ থানা পুলিশ। মামলার এজাহারে স্বাক্ষারও করেন টেকনাফ থানায় নতুন যোগ দেয়া আসা ওসি আবুল ফয়সল।
এর আগে সিনহা হত্যা মামলায় টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপসহ তিন আসামিকে সাত দিনের রিমান্ডের আদেশ দিয়েছিলেন আদালত। বাকি চার পুলিশ সদস্যকে দু’দিন ধরে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তদন্তকারী সংস্থার পক্ষ থেকে গত সোমবার নতুন করে ১০ দিনের রিমান্ডের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছিল। একইভাবে মঙ্গলবার পুলিশের দায়ের করা মামলার তিন সাক্ষীকে গ্রেফতারের পর আদালতে হাজির করে তাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হয়। এ দুটি আবেদনের শুনানি ছিল আজ বুধবার। আদালত আবেদন দুটির শুনানি শেষে প্রত্যেককে সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এলাকায় চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ জুলাই রাত ১০টার দিকে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনায় সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ৫ আগস্ট ওসি প্রদীপ ও দায়িত্বরত পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ জনকে আসামি করে সিনহার বোন কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ৯ পুলিশ সদস্যকেই বরখাস্ত করা হয়। মামলাটি তদন্ত করছে কক্সবাজার র্যাব-১৫। ওই মামলায় ওসি প্রদীপসহ ৩ জনকে ৭ দিনের রিমান্ড ও অন্য আসামিদের দুদিন করে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন আদালত। ওসি প্রদীপসহ ৭ আসামি এখনও কারাগারে রয়েছে। একই ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় ৯ আগস্ট সিনহার সহযোগী শিপ্রা দেবনাথ ও ১০ আগস্ট সাহেদুল ইসলাম সিফাত জামিনে কারাগার থেকে মুক্তি পান।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড