রিয়াদ হোসাইন, মুন্সীগঞ্জ
ইদের ছুটিতে মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন সেতু, নদী ও চর সরগরম ছিলো মানুষের ভিড়ে। করোনা পরিস্থিতিতে সিনেমা হলসহ বিনোদন কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় উন্মুক্ত স্থানগুলোতে জেলার ভ্রমণ পিপাশু মানুষগুলোর উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। ঈদের আনন্দে দলবেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছে শিশু-কিশোর, যুবক ও বৃদ্ধরা। করোনার ভয়াবহতা ভুলে গিয়ে সবাই নিজেদের মতো করে সময় কাটাচ্ছেন। তবে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব না মেনে এভাবে ঘোরাঘুরিতে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্যবিদরা।
গত শনি থেকে আজ বুধবার পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা যায়, পদ্মা সেতু এলাকাসহ, পদ্মা, মেঘনা, ধলেশ্বরী নদীতে ট্রলার যোগে কিশোর-যুবক ও বৃদ্ধারা নৌ-ভ্রমণে মাতোয়ারা । এছাড়া সদর উপজেলার হাটলক্ষ্মীগঞ্জ এলাকার শহর রক্ষা বাঁধ, মোল্লাচর এলাকার নদীর পাড় ও লঞ্চঘাটে পা ফেলা মতো জায়গা ছিলো না। জেলার ছোট-বড় সেতুগুলোতেও প্রচণ্ড ভিড় লক্ষ করা গেছে। মুক্তারপুর, বেতকা, বালুচর, যোগনীঘাটসহ বিভিন্ন সেতুতে ছিলো নানান বয়স ও শ্রেণি পেশার মানুষের ভিড়।
এদিকে সদর উপজেলার মুক্তারপুর সেতুতে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও রিকশায় শত শত মানুষ আসছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মানুষের আনাগোনাও। কেউ আসছে পরিবার-স্বজন নিয়ে, কেউবা আবার বন্ধুদের সঙ্গে। সেই আনন্দঘন মুহূর্তটি স্মৃতি হিসেবে ধরে রাখতে মোবাইল ফোনে ছবি ও সেলফি তুলছেন। তরুণদের কাউকে কাউকে ঝুঁকিপূর্ণ মোটরসাইকেল রেসিং করতেও দেখা গেছে।
মুক্তারপুর সেতুতে ঘুরতে আসা রাসেল মাহমুদ বলেন, করোনার কারণে মানুষের চলাচল অনেকটাই কমে আসছে। তবে, ঈদে যে মানুষ ঘুরবে না তা হয়না। এখানে অধিকাংশ মানুষই স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘুরতেছে।
শহর রক্ষা বাঁধে ঘুরতে আসা আরিফুল ইসলাম বলেন, করোনার কারণে বিনোদন কেন্দ্রগুলো বন্ধ রয়েছে। তাই ঘুরার মতো তেমন জায়গা নেই। তাই সেতু, রাস্তা, চর এলাকায় বোন-ভাগ্নিদের নিয়ে রিকশাভ্রমণ আর বেড়িবাঁধেই সীমাবদ্ধ রয়েছি। কামারখাড়া এলাকা থেকে কয়েকজন স্কুল পড়ুয়া তরুণ জুবায়ের, রাকিব, কাদির ও সবুজ শহরের লঞ্চঘাট এলাকায় ঘুরতে এসেছে। তারা জানান, স্কুল বন্ধ থাকার কারণে এখন দেখা হয় না বন্ধুদের সঙ্গে। তাই আজ সব বন্ধুরা মিলে এখানে এসে গল্প করছেন। তবে তাদের সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে দেখা গেছে।
অন্যদিকে, নারায়ণগঞ্জ থেকে টঙ্গীবাড়ী উপজেলার দিঘীরপাড় পদ্মা নদীতে ট্রাল নিয়ে ঘুরতে আসা ৩০ থেকে ৩৫ জন যুবকের সাথে কথা হলে তারা বলেন, ঈদের এ সময়টায় বন্ধুরা সবাই গ্রামে আসে। আমরা সবাই একত্রিত হই। তাই এ মুহূর্তটি স্মৃতিরপাতায় লিপিবদ্ধ করার জন্য আমাদের এ নৌ-ভ্রমণের আয়োজন। স্কুলের সব বন্ধু-বান্ধবা একসাথে খাওয়া-দাওয়া ও মজা করছি, একটি ভালো দিন উপভোগ করছি সবাই মিলে। এসময় তাদের স্বাস্থ্যবিধি অমান্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা আরো বলেন, এখানে তো আমরা সবাই বন্ধু ও পরিচিত । তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রতি ততটা গুরুত্ব দিচ্ছি না। কিন্তু আমাদের সবার পকেটেই মাস্ক আছে।
এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ সিভিল সার্জন আবুল কালাম আজাদ বলেন, মানুষের উদাসীনতার কারণে করোনা সংক্রমণ আবারও ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে। অনেকেই বিভিন্ন এলাকা থেকে বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছেন। এতে করে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সবাই যদি নিজের ভালোর জন্য মাস্ক ব্যবহার করে তাহলেও ঝুঁকি কিছুটা হলেও হ্রাস পায়। সর্বোপরি যারা এ ঈদে বাসার থেকে বের হবেন তারা অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করার জন্য এ কর্মকর্তা অনুরোধ করেন।
আরও পড়ুন : বন্যার পানি কমছে কিন্তু বাড়ছে দুর্ভোগ
বিষয়টিতে জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, করোনা সংক্রমণ বিস্তাররোধে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সার্বক্ষণিক জেলার ম্যাজিস্ট্রেটগণ নজরদারি করছেন। কেউ যদি স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করেন তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা করা হচ্ছে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড