• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

স্বাস্থ্যবিধি না মেনে মুন্সীগঞ্জের পশুর হাটে ক্রেতাদের ভিড়

  মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি

২৯ জুলাই ২০২০, ০১:১৩
পশুর হাট
স্বাস্থ্যবিধি না মেনে মুন্সীগঞ্জের পশুর হাটে ক্রেতাদের ভিড় (ছবি : দৈনিক অধিকার)

আসন্ন কুরবানি ইদকে ঘিরে শেষ সময়ে মুন্সীগঞ্জ জেলার বিভিন্ন পশুর হাট-বাজারগুলো জমে উঠেছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব না মেনেই গবাদি পশু বেচাকেনায় বেড়েই চলেছে মানুষের ভিড়।

কুরবানির ইদ ঘনিয়ে আসায় হাটে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের উপস্থিতি বাড়ছে। এতে পা ফেলার মতো জায়গা পাওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে। কিন্তু জেলার পশুর হাটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে গরু-ছাগলের ক্রেতা ও বিক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় রীতিমতো ভাবিয়ে তুলেছে সচেতন মহলকে। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা নীরব ভূমিকা পালন করায় করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা করছেন অনেকেই।

সরেজমিনে দিঘীরপাড় ও আব্দুল্লাহপুর পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, হাটগুলোতে গিজগিজ করছে পশু আর মানুষ। একজন আরেকজনের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে। কেউ দরদাম করছেন, কেউ পশু কিনে গাড়িতে তুলছেন। তবে অধিকাংশ লোকের মুখে মাস্ক নেই, কারও কারও মাস্ক থাকলেও তা নামানো থুতনিতে আবার কারও কানে ঝুলানো। সামাজিক দূরত্বের নির্দেশনার তোয়াক্কা না করে ঝুঁকি নিয়ে পশু কেনাবেচা চলছে।

দিঘীরপাড় পশুর হাটে গবাদি পশু কিনতে আসা মাইনউদ্দীন ও শাহারিয়ার শুভ দৈনিক অধিকারকে বলেন, সামনে কুরবানির ইদ তাই গবাদি পশু কেনার জন্য হাটে এসেছি। পশুর হাটে গরু-ছাগলের দাম বেশ কম হলেও স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মানছে না কেউই। হাটে কাউকে মনিটরিং করতে দেখা যায়নি। যে কারণে আমরা বেশ আতঙ্ক বোধ করছি। একই সঙ্গে তারা সংশ্লিষ্টদের কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান।

আব্দুল্লাহপুর হাটে আসা সিপাহিপাড়া এলাকার আইয়ুব আলী দৈনিক অধিকারকে বলেন, সবকিছু স্বাভাবিক সময়ের মতোই চলছে। কেউ তো সামাজিক দূরত্ব মানছে না। অনেকে মুখে মাস্কও ব্যবহার করছেন না। ব্যবসায়ীরাও ক্রেতাদের কিছু বলছেন না। হুড়াহুড়ি করে গা ঘেঁষে পশুর দরদাম চলছে।

এ ব্যাপারে আব্দুল্লাহপুরের পশু হাটের ইজারাদার দেলওয়ার হোসেন মৃধা আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমরা করব কী? পশুর হাটে অনেক লোক। করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার সরকারি নির্দেশনা থাকলেও কেউই তা মানছেন না। আমরা বললেও শুনছেন না। মনে হচ্ছে পুরনো পশুর হাটের রূপ ফিরে আসছে। পশু নয়, এ যেন করোনা ছড়ানোর হাট।’

এ বছর হাটে খামারের বড় গরুর চাহিদা তেমন না থাকলেও কৃষক পর্যায়ে ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা বেশি ছিল। বড় গরুর চেয়ে ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর দামও তুলনামূলক বেশি। তবে ছাগলের দাম কম। ক্রেতারা অভিযোগ করেন, অন্যবারের তুলনার এবার গরুর দাম বেশি। তবে বিক্রেতারা তা মানতে নারাজ।

এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ সিভিল সার্জন আবুল কালাম আজাদ দৈনিক অধিকারকে বলেন, পশুর হাটের জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। নীতিমালা অনুসরণ না করলে করোনা পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করতে পারে। সরকার সকলের জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করেছে।

বিষয়টিতে জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার দৈনিক অধিকারকে বলেন, পশুর হাটের ইজারাদারদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার জন্য জেলা প্রশাসন থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নিয়মিত ম্যাজিস্ট্রেটগণ হাটগুলোতে নজরদারি করছেন। তিনি বলেন, যারাই স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, এ বছর মুন্সীগঞ্জ জেলায় পশু বেচাকেনা হবে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ৪৫টি হাটে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৮টি, সিরাজদিখান উপজেলায় ৯টি, লৌহজং উপজেলায় ৬টি, টঙ্গীবাড়ী উপজেলায় ১১টি, গজারিয়া উপজেলায় ৫টি ও শ্রীনগর উপজেলায় ৬টি হাটে কুরবানির পশু বেচাকেনা হচ্ছে। এছাড়া করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি ও বন্যার কারণে খামারিদের সুবিধার জন্য জেলা প্রশাসনের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে অনলাইন হাটেও পশু বেচাকেনা শুরু হয়েছে।

এ দিকে, জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস জানিয়েছে- গত বছর জেলায় ৬২টি হাজার পশু কুরবানি হয়েছে। এ বছর জেলায় মোটাতাজা করা হয়েছে মাত্র ১৪ হাজার ২৩২টি পশু। এর মধ্যে গরু ১০ হাজার ৬৭৯টি, বলদ ১২৮টি, গাভী ১২০টি মহিষ ৭টি, ছাগল ২ হাজার ৪৪টি ও ভেড়া ১৭০টি রয়েছে। বাকি পশুর চাহিদা অন্যান্য জেলা থেকে যোগান দেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন : সহকর্মীর অবহেলায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে লাইনম্যানের মৃত্যুর অভিযোগ

এ ব্যাপারে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কুমোর রঞ্জন মিত্র দৈনিক অধিকারকে জানান, মুন্সীগঞ্জে এবার কুরবানির পশুর কোনো সংকট হবে না। তবে ক্রেতাদের বড় অংশকেই বাজারে যেতে হবে। জেলায় গত বছর ৬২ হাজার পশু কুরবানি দেওয়া হয়। কিন্তু এত বেশিসংখ্যক পশু অনলাইনে বেচাকেনা সম্ভব নয়। তাই ক্রেতারা যদি সেখান থেকে পশু কেনা শুরু করেন তবে করোনার সংক্রমণ কিছুটা হলেও ঠেকানো সম্ভব হবে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড