মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি
মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলাধীন পদ্মায় তীব্র স্রোতের কারণে নদী ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
এই ভাঙনের কবলে মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) দুপুরে শিমুলিয়ার তিন নম্বর ফেরিঘাটসহ একটি মসজিদ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। মঙ্গলবার দুপুর থেকে এই ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
ফলে ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম প্রবেশদ্বার শিমুলিয়ার আরও তিনটি ফেরি ঘাট। ইতোমধ্যে তিন নম্বর ফেরিঘাট বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। শঙ্কা করা হচ্ছে, ভাঙন অব্যাহত থাকলে, আসছে ইদে এই নৌপথে সব ধরনের ফেরি চলাচল বন্ধ হতে পারে।
ঘাট ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২০ থেকে ২৫ দিন ধরে উত্তরাঞ্চলের বন্যার পানি পদ্মা নদী দিয়ে বঙ্গোপসাগরে দিকে যাচ্ছে। এ কারণে নদীতে প্রচণ্ড স্রোতের সৃষ্টি হয়েছে। যা পূর্বের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। গত দুই সপ্তাহ ধরে পদ্মার পানি মারাত্মক আকারে বাড়তে শুরু করেছে। প্রচণ্ড স্রোত ও পানি বৃদ্ধির কারণে পদ্মা নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার দুপুরে পদ্মার ভাঙনে সবচেয়ে বড় ফেরির জন্য ব্যবহার করা তিন নম্বর ঘাট নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে। এতে ওই ঘাট দিয়ে ফেরি পারাপার বন্ধ হয়ে গেছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, তিন নম্বর ঘাট এলাকা থেকে নদীর পাড় ভেঙে ভেঙে পড়ছে। ঘাটের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের সদস্যরা যানবাহ ও যাত্রীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছে। তবে ভাঙন দেখতে উৎসুক জনতা ঘাটে ভিড় জমাচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শী মিজানুর রহমান জানান, সোয়া ১২ টার দিকে তিন নম্বর ফেরিঘাটে ছিলেন তিনি। পরে নদীর অবস্থা খুব কাছ থেকে দেখতে পন্টুনে উঠেন। একটু পরেই দেখতে পান গ্যাংওয়ের সাথে থাকা নদীর পাড় প্রচণ্ড স্রোতে একটু একটু করে ভেঙে যাচ্ছে। পরে দ্রুত কোনোভাবে পন্টুন থেকে তীরে উঠেন তিনি। এর কিছু সময় পরই শুরু হয় ফেরিঘাটের তীব্র ভাঙন। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই উত্তর দিক থেকে দক্ষিণ-পূর্বদিকের প্রায় ২০০ মিটার ভেঙে নদীতে বিলীন হয়। এ সময় তিন নম্বর ঘাটও সম্পূর্ণ নদীতে তলিয়ে যায়। সেখানে বিআইডব্লিউটিএর একটি পাকা স্থাপনা ও একটি মসজিদও ছিল।
এ ব্যাপারে শিমুলিয়া ঘাটের ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক (টিআই) মো. হিলাল উদ্দিন দৈনিক অধিকারকে বলেন, দুপুর থেকে ভাঙন শুরু হয়েছে। বিকাল পর্যন্ত ভাঙন অব্যাহত ছিল। তিন নম্বর ঘাট ভেঙে বর্তমানে ভাঙন ভিআইপি ঘাটের দিকে যাচ্ছে। যেভাবে ভাঙছে, তাতে দু-একদিনের মধ্যে সম্পূর্ণ শিমুলিয়া ঘাট নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে। বিকাল নাগাদ ঘাটে আড়াই শতাধিক যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় আছে।
বিষয়টিতে শিমুলিয়া ঘাটের উপ-মহাব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম দৈনিক অধিকারকে জানান, বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তিন নম্বর ঘাটে ভাঙন শুরু হয়। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে সম্পূর্ণ ঘাটটি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তবে পন্টুন সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, পুরনো মাওয়া ঘাট যেভাবে ভেঙেছিল, এটাও তেমন করে ভাঙতে শুরু করছে। এই ভাঙন কোথায় গিয়ে থামবে তা কারই জানা নেই।
এবারের ইদ যাত্রা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, এমনিতেই নাব্যতা সংকট ও স্রোতের জন্য ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছিল। নতুন করে শুরু হলো ভাঙন। ইদে কি হবে? এ সময় তিনি সব ধরনের যানবাহনকে বিকল্প পথ ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদার দৈনিক অধিকারকে বলেন, ভাঙনের বিষয়টি তিনি জানতে পেরেছেন। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষেও ইতোমধ্যেই বিষয়টি জানানো হয়েছে। এই মুহূর্তে ঘাটটিকে কীভাবে রক্ষা করা যায়, অথবা বিকল্প হিসেবে কীভাবে ঘাট সচল রাখা যায়, সেটি নিয়ে সবাই কাজ করছে। বিআইডব্লিউটিএ’কেও জানানো হয়েছে। তবে এই মুহূর্তে স্থায়ীভাবে কোনো সমাধান করা যাবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় ভোগান্তি
এ দিকে, নাব্যতা সংকট ও তীব্র স্রোতের কারণে গত ২০ থেকে ২৫ দিন ধরে নৌ-চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এতে ঘাট এলাকায় যানবাহনের অচল অবস্থা কোনোভাবেই কাটানো যাচ্ছে না। মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত ঘাট এলাকায় প্রায় তিন শতাধিক যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে।
প্রাইভেট কার যাত্রী সোহেল রানা দৈনিক অধিকারকে জানান, তিনি ইদ করতে গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ যাচ্ছেন। সকাল ১০টার দিকে ঘাটে আসেন। সীমিত আকারে ফেরি চলাচল করায় ঘাটে অপেক্ষমাণ ছিলেন। সকাল গড়িয়ে বিকাল হয়েছে, এখনও নদী পার হতে পারেননি।
আরও পড়ুন : করোনার বিষাক্ত ছোবলে আক্রান্ত টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক
কয়েকজন ট্রাকচালক জানান, তারা অনেকই এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ঘাটে আছেন। ইদ উপলক্ষে তারা এই ঘাট পার হওয়ার আশায় ছিলেন। ফেরিঘাট ভাঙনের কারণে সে আশাও তাদের ক্ষীণ হয়ে গেছে। এ সময় তারা বলেন, ঘাটে থেকে তাদের খরচের টাকা শেষ হয়েছে। অন্য নৌ-পথে যে যাবে সেখানেও অনেক খরচ। এমতাবস্থায় দ্রুত ঘাটের সমস্যা নিরসনে কর্তৃপক্ষের কার্যকরী পদক্ষেপের দাবি জানান তারা।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড