• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মুন্সীগঞ্জের দর্জিপাড়ায় সেই ব্যস্ততা নেই

  রিয়াদ হোসাইন, মুন্সীগঞ্জ

২৭ জুলাই ২০২০, ১২:৪৯
অলস সময় পার করছেন দর্জিরা (ছবি : দৈনিক অধিকার)

এবারও ইদের ব্যবসা লাটে উঠেছে। অবস্থা খুবই খারাপ। যেখানে ইদের এক সপ্তাহ আগে ক্রেতাদের অর্ডার আরও নেব কি না তা ভাবতে হতো, এবার সেখানে সেই চিন্তা মাথায়ই আসছে না। শুধু তাই না, গত বছরও একেকজন কাস্টমার চার-পাঁচ সেট শার্ট-প্যান্ট বানাতেন, সেখানে এখন এক দুই সেটের বেশি অর্ডার পাচ্ছি না। এই যে ঈদের বাকি আর মাত্র ৫দিন কিন্তু আপনার সঙ্গে খাতির জমিয়ে কথা বলছি, দুই-এক বছর আগে অবস্থা এমন ছিল যে, কথা বলা তো দূরের কথা, দোকানে দাঁড়ানোরই জায়গা পেতেন না।

সোমবার (২৭ জুলাই) সকালে মুন্সীগঞ্জের স্টোডিয়াম মার্কেটের কৃষ্ণ ট্রেইলার্সের মালিক কৃষ্ণা কাছে দৈনিক অধিকার এ প্রতিবেদক 'এবার ঈদের ব্যবসা কেমন' জানতে চাইলে হতাশা প্রকাশ করে তিনি এসব কথা বলেন।

সরেজমিনে মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন টেইলার্সের দোকান ঘুরে দেখা যায়, ট্রেইলার্সে হাতেগোনা দু-তিনজন ক্রেতা শার্ট প্যান্টের মাপ দিচ্ছেন। দোকানের কর্মচারী কাউন্টারে দাঁড়িয়ে অলস সময় কাটাচ্ছেন।

আলদী বাজারের ট্রেলার্স দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, তাদের দোকানে মোটামুটি অর্থবিত্ত রয়েছে এমন লোকজনই কাপড় বানানোর অর্ডার দেন। কিন্তু এ বছর ঈদের মাত্র আর ৫দিন বাকি থাকলেও ক্রেতা শূণ্য দর্জিপাড়ায়।

তিনি জানান, গত তিন বছর ধরে একই মজুরি যেমন শার্ট প্রতিটি আড়াইশ টাকা ও প্যান্ট তিনশ টাকায় বানাচ্ছেন। কী কারণে এবার ব্যস্ততা নেই? জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিশ্চিত করে বলতে পারব না। তবে মনে হয় সামগ্রিকভাবে ইদের বাজার খুব ভালো না। কারণ করোনা আর বন্যায় মুন্সীগঞ্জের ইদের আমেজ ততটা নেই এ বছর।

দিঘীরপাড় বাজারের দর্জিপাড়া গিয়ে দেখা যায়, কেউ হাত গুটিয়ে, কেউ আবার গালে হাত দিয়ে বসে আছে কাস্টমারের অপেক্ষায়। দিনে দুই থেকে তিনটি কাপড়েরর অর্ডার পাচ্ছে কারিগররা। এতে করে সংসার চলছে না তাদের। সামনে ইদ, হতাশায় ভুগছে দর্জিরা।

দিঘীরপাড় এলাকায় রমজান নামের এক দর্জি জানান, এ বছর অর্ডার খুব কম পাচ্ছেন। অতিরিক্ত অর্ডারের কারণে যেখানে আগে রাত ২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত কাজ করতে হতো, সেখানে এখন রাত ৮টার আগেই কাজ শেষ হয়ে যাচ্ছে। তবে সামনে ব্যস্ততা বাড়তে পারে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

দিঘীরপাড় বাজারের রাধাসাম বলন, প্রতি বছর মানুষ শপিং করে আমার এখানে প্যান্ট-শার্ট ফিটিং করতে আনেন। কিন্তু আমি অন্যান্য ঈদের ৫ দিন আগে কারো প্যান্ট-শার্ট নেই না, আর এ বছর পুরো উল্টো । কোনো কাস্টমারের দেখা নেই।

সিরাজদিখান উপজেলার তালতলা, ইছাপুরা বাজারের আশেপাশের টেইলার্সের দোকান ঘুরে দেখা যায়, প্রায় দোকানে আগের মতো পা চালিত সেলাই মেশিন দ্বারা আর সেলাইয়ের কাজ হয় না। এখন প্রতিটি টেইলার্সে বিদ্যুৎ চালিত জেক পাওয়ার মেশিন দিয়ে কারিগররা সেলাই কাজ করছে। বাজারে বা টেইলার্সের দোকানে কোন ক্রেতাদের চোখে পড়ছে না। প্রতিটি টেইলার্সে চার থেকে পাঁচ জন কারিগরের জন্য জেক পাওয়ার মেশিন আছে। কিন্তু কারিগর নেই, কারণ তাদের হাতে কাজ নেই। দিনে ২ থেকে ৩ টা সেলাইয়ের কাজ আসছে।

এ সময় শিপু মন্ডল নামের এক দর্জি বলেন, হাতে কোন কাজ নেই ভাই। সকাল থেকে একটা থ্রী পিচের অর্ডার পেয়েছি। কোন ইদে এই রকম হয়নি। সারা দিনে ২শ থেকে আড়াইশ টাকা উপার্জন হচ্ছে। এই স্বল্প উপার্জন দিয়ে সংসার চালাবো কি করে। সংসারে এক ছেলে, স্ত্রী আর বাবা-মা আছেন। সামনে কোরবানির ঈদ, কাজের যে গতি। গত করোনায় কয়েক মাস দোকান বন্ধ ছিল। জীবিকার তাগিদে সরকারি খাদ্য গুদামে লেবারের কাজ করেছিলাম।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড